২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত পরমাণু চুক্তির শর্ত না মানা পর্যন্ত ইরানের ওপর থেকে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হবে না বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। রোববার (৭ ফেব্রুয়ারি) মার্কিন গণমাধ্যম সিবিএস নিউজের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে একথা বলেন তিনি।

তবে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র তার দেশের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিলে তখনই কেবল পরমাণু চুক্তি মেনে চলতে শুরু করবে তেহরান। রোববার ইরানের রাষ্ট্রীয় টিভি একথা জানায়।

ইরানকে আলোচনার টেবিলে ফিরিয়ে আনতে দেশটির ওপর থেকে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হবে কিনা- সাক্ষাৎকারে প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি উত্তর দেন, ‘না।’

তবে আয়াতুল্লাহ খামেনি বলেছেন, ইরান চুক্তির আওতায় সবধরনের বাধ্যবাধকতা পূরণ করেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও তিন ইউরোপীয় দেশ তা করেনি। ইরান কেবল তখনই আবার প্রতিশ্রুতিগুলো পরিপূর্ণভাবে মানতে শুরু করবে যখন যুক্তরাষ্ট্র বাস্তবে সব নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেবে। আর তখনই পূর্ণাঙ্গভাবে আবারও অঙ্গীকার পূরণ করতে শুরু করব আমরা। এটা ইরানের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত বলেও জানান তিনি।

সাক্ষাৎকারে চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক নিয়েও কথা বলেছেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। তিনি বলেন, ‘বেইজিংয়ের সঙ্গে সরাসরি দ্দন্দ্বে জড়ানোর কোনো কারণ ওয়াশিংটনের নেই। তবে উভয় দেশ বৈশ্বিক অর্থনীতিতে একে-অপরকে ছাড়িয়ে যেতে ‘চরম প্রতিযোগিতায়’ লিপ্ত রয়েছে।’

গত মাসে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ার পর এখনও পর্যন্ত চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে কথা বলেননি জানিয়ে বাইডেন বলেন, তিনি তার বেইজিং নীতি পরিবর্তন করেননি।

তবে প্রেসিডেন্ট জিনপিংয়ের ব্যাপারে বাইডেন বলেন, ‘তিনি খুব মেধাবী, খুব কঠোর। কিন্তু তিনি গণতান্ত্রিক না। এমনকি গণতন্ত্রের ‘গ’ বর্ণটিও তার (জিনপিং) ভেতরে নেই।’

এর আগে বিশ্বের ছয় পরাশক্তি ও তেহরানের মধ্যে স্বাক্ষরিত পরমাণু চুক্তিতে দ্রুত ফিরে আসতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রতি আহ্বান গত শনিবার জানান ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ। তিনি বলেন, চলতি মাসের মধ্যে তেহরানের ওপর থেকে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা না উঠলে পরমাণু কর্মসূচি জোরদার করার ব্যাপারে একটি প্রস্তাব পাস করেছে ইরানি পার্লামেন্ট। এর ফলে পরমাণু কর্মসূচি জোরদার করতে বাধ্য হবে সরকার।

জাভেদ জারিফ বলেন, ‘দুটি কারণে (চুক্তিতে ফেরার জন্য) আমেরিকার সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে। একটি হচ্ছে- পার্লামেন্টে পাস হওয়া নতুন বিল এবং অন্যটি ইরানে আসন্ন পার্লামেন্ট নির্বাচন।’

তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনে যদি কোনো কট্টরবাদী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন, তাহলে এই পরমাণু চুক্তি আরও অনিশ্চিত হয়ে পড়তে পারে।

গত ডিসেম্বরে ইরানের পার্লামেন্ট একটি নতুন আইন পাস করে। আইন অনুযায়ী- দুই মাসের (ফেব্রুয়ারি) মধ্যে ইরানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা না উঠলে, পরমাণু কর্মসূচি জোরদার করতে হবে প্রেসিডেন্ট রুহানির সরকারকে।

২০১৫ সালে ইরান ও বিশ্বের ছয় পরাশক্তির মধ্যে পরমাণু চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এর ফলে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ সীমিত রাখতে বাধ্য হয় ইরান। কিন্তু ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই চুক্তিকে ‘ত্রুটিপূর্ণ’, ‘একপেশে’, ‘এর কোনো ভবিষ্যত নেই’ ইত্যাদি অভিযোগ তুলে চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে নিয়ে যান।

যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়ে যাওয়ার পর চুক্তির শর্তগুলো মেনে চলার ব্যাপারে ইরানও উদাসীন হয়ে পড়ে। এরপর তেহরানের ওপর আবারও অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। পরে সম্প্রতি ২০ মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের কাজ শুরু করে দেশটি।

ইরান অবশ্য বরাবরই দাবি করে থাকে যে, তাদের পামাণবিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ। এর বাইরে পরমাণু প্রকল্পের অগ্রগতি সম্পর্কে প্রকাশ্যে কিছু না বললেও বিভিন্ন সময়ে ইউরেনিয়ামের মজুত বাড়ানো, মজুত করা ইউরোনিয়াম পরিশোধন করে এর গুণগত মান বাড়ানোসহ বিভিন্ন সংবাদ নিয়মিতই প্রকাশিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোতে।

সূত্র: বিবিসি

টিএম