দক্ষিণ আফ্রিকায় অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা কর্মসূচি স্থগিত
করোনাভাইরাসের নতুন ধরনের বিরুদ্ধে কার্যকর নয়- গবেষণায় এমন তথ্য পাওয়ার পর দক্ষিণ আফ্রিকায় অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকাদান কর্মসূচি স্থগিত করেছে কর্তৃপক্ষ। আফ্রিকার ওই দেশটিতে শনাক্ত হওয়া করোনার নতুন ধরনের বিরুদ্ধে টিকার কার্যকারিতা ‘হতাশাজনক’ প্রমাণের পরই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, দক্ষিণ আফ্রিকায় শনাক্ত নতুন করোনা রোগীদের ৯০ শতাংশই ভাইরাসের নতুন ধরনে আক্রান্ত। দেশটি এখন পর্যন্ত অ্যাস্ট্রাজেনেকর তৈরি ১০ লাখ করোনা টিকা হাতে পেয়েছে এবং আগামী সপ্তাহে দেশটিতে গণ টিকাদান কর্মসূচি শুরু হওয়ার কথা ছিল।
বিজ্ঞাপন
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা জানিয়েছে, প্রায় দুই হাজার মানুষের ওপর চালানো গবেষণায় দেখা গেছে- অক্সফোর্ড-অ্যস্ট্রাজেনেকার টিকা করোনার উপসর্গ তীব্র হওয়া ঠেকাতে ও মাঝারি ঘরনার অসুস্থতায় কার্যকর। কিন্তু খুব বেশি অসুস্থ ও নতুন রূপের বিরুদ্ধে এটার কার্যকারিতা কম। এমনকি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলেও শারীরিক পরিস্থিতি জটিল নয়, এমন রোগীদের ক্ষেত্রেও এই টিকা ‘খুব কম’ সুরক্ষা নিশ্চিত করেছে।
বিজ্ঞাপন
রোববার (৭ ফেব্রুয়ারি) এক সংবাদ সম্মেলনে দক্ষিণ আফ্রিকার স্বাস্থ্যমন্ত্রী ওয়েলি খিজে বলেন, ‘অস্থায়ীভাবে অ্যাস্ট্যাজেনেকার টিকা প্রয়োগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি গবেষণায় পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার এই টিকাকে কিভাবে করোনাভাইরাসের নতুন ধরনের বিরুদ্ধে আরও কার্যকর করা যায়। সে পর্যন্ত মানুষের মাঝে আমরা জনসন এন্ড জনসন এবং ফাইজারের তৈরি করোনা টিকা প্রয়োগ করবো।’
দক্ষিণ আফ্রিকার সর্বশেষ এই গবেষণা পরিচালনা করে ইউনিভার্সিটি অব উইটওয়াটার্সর্যান্ড। গবেষণায় নেতৃত্ব দেওয়া প্রফেসর শাবির মাধি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলেও শারীরিক পরিস্থিতি জটিল নয়, এমন রোগীদের ক্ষেত্রে দুর্ভাগ্যজনকভাবে অ্যস্ট্রাজেনেকার টিকা কাজ করছে না।’
অক্সফোর্ডের টিকা আবিষ্কারকারী দলের প্রধান বিজ্ঞানী প্রফেসর সারাহ গিলবার্ট বলেন, গুরুতর রোগের বিরুদ্ধে তাদের টিকা এখনও কার্যকর। তার মতে, দক্ষিণ আফ্রিকায় শনাক্ত নতুন ধরনের জন্য উৎপাদনকারীরা টিকার পরিবর্তিত সংস্করণ সামনে আনতে পারেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনার নতুন কোনো ধরনের বিরুদ্ধে টিকাকে কার্যকর করে পুনরায় উৎপাদন করা কয়েক সপ্তাহ বা মাসের ব্যাপার।
এদিকে দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম শনাক্ত হওয়া করোনাভাইরাসের নতুন ধরনটি ৩১টি দেশে ছড়িয়েছে বলে গত মাসের শেষের দিকে জানিয়েছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। সেসময় সংস্থাটি জানায়, ৫০১ওয়াই.ভি২’ নামের ওই ধরনটি ব্রিটেনে শনাক্ত করোনা ধরনের থেকেও বেশি সংক্রামক। এটাকে খুব উদ্বেগের বিষয় বলেও উল্লেখ করে সংস্থাটি।
এর আগে গবেষকরা দাবি করেছিলেন, একাধিক মিউটেশন ঘটে দক্ষিণ আফ্রিকায় শনাক্ত করোনার ধরন এখন ৭০ শতাংশ বেশি সংক্রামক। তাছাড়া এটা কমবয়সীদের শরীরে বেশি প্রভাব ফেলতে পারে। এমনকি টিকার কার্যকারিতায়ও ব্যাঘাত ঘটাতে পারে বলে আশঙ্কা করেছিলেন গবেষকরা।
উল্লেখ্য, দক্ষিণ আফ্রিকার ইস্টার্ন কেপ, কোয়াজুলু-নাটাল এবং ওয়েস্টার্ন কেপ প্রদেশে প্রথম ধরা পড়ে করোনাভাইরাসের নতুন ওই ধরনটি। প্রথম সংক্রমণের খবর আসে নেলসন ম্যান্ডেলা বে থেকে। ভাইরাসের এই প্রকারভেদে অন্তত তিনটি পরিবর্তনের কথা জানা গেছে।
সূত্র: বিবিসি
টিএম