ভারতে তুষারধসে নিহত ১৪, নিখোঁজ ১৭০
ভারতের উত্তরাখণ্ডের চমোলি জেলার জোশীমঠ এলাকায় হিমবাহ ভেঙে তুষারধসের ঘটনায় ১৪ জনের মৃহদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া এখন পর্যন্ত ১৭০ জনেরও বেশি নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানিয়েছে দেশটির গণমাধ্যম এনডিটিভি। তবে নিহতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ভারতীয় গণমাধ্যমের খবর, রোববার আকস্মিক ওই জলোচ্ছাসের সময় জোশীমঠের তপোবন বিষ্ণুগড় জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের নিকটবর্তী সুড়ঙ্গে আটকে পড়েন বহু শ্রমিক। তাদের অনেকেই এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। এছাড়া জলোচ্ছাসে ওই এলাকার ঋষিগঙ্গা জলবিদ্যুৎ প্রকল্পটিও ধ্বংস হয়ে গেছে।
বিজ্ঞাপন
রোববারের ওই জলোচ্ছাসের পর ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স ফোর্সের (এনডিআরএফ) সঙ্গে উদ্ধার কাজে নামে ইন্দো-তিব্বেতান বর্ডার পুলিশ (আইটিবিপি) সদস্যরাও। পরে অবস্থা বেগতিক দেখে উদ্ধারকাজে অংশ নেয় ভারতীয় বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনীর সদস্যরা। এখন পর্যন্ত ১৪ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হলেও মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই নিহতদের পরিবারকে ৪ লাখ রুপি করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী ত্রিবেন্দ্র সিং রাওয়াত।
বিজ্ঞাপন
তিনি জানিয়েছেন, ‘মোট ১৪টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধারকারীরা সবরকম চেষ্টা করে মানুষকে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন। আইটিবিপি’র জওয়ানরা উদ্ধারের কাজে নেমে পড়েছেন। সেনা নামানো হয়েছে।’
মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, কেন এই বিপর্যয় হলো, তা খতিয়ে দেখতে বিজ্ঞানীদের একটি দল গঠন করা হয়েছে। এদিকে এনটিপিসি’র ১৪৮ জন এবং জলবিদ্যুৎকেন্দ্রের ২২ জন নিখোঁজ কর্মীর সন্ধানে সেনা ও বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী কাজ করে যাচ্ছে। আইটিবিপি ইতোমধ্যে নির্মীয়মান দুটি টানেল থেকে ৩০ জনকে উদ্ধার করেছে।
অন্যদিকে নিহতদের পরিবারকে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে আলাদা করে আরও ২ লাখ রুপি ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এছাড়া গুরুতর আহতদের দেওয়া হবে ৫০ হাজার রুপি করে।
এর আগে গত শনিবার রাতেই জারি করা হয় জলোচ্ছাসের সতর্কবার্তা। এছাড়া বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টিপাত চলে টানা তিন দিন, সঙ্গে তুষারপাত। এরপর শনিবার রাত ১১টার দিকে ভেঙে যায় জোশীমঠের নন্দাদেবীর হিমবাহ। রোববার সকালে সেই ধস আরও ভয়াবহ আকার নেয়। হিমবাহ ভেঙে পড়ার পর প্রচন্ড গতিতে পানি নেমে আসতে শুরু করে। চমোলি জেলার তপোবন এলাকার রানি গ্রামে ঋষিগঙ্গা বিদ্যুৎ প্রকল্পের ওপর হিমবাহ ভেঙে পড়ার পর পানিতে ভেসে যায় আশেপাশের বাড়িসহ গোটা এলাকা।
দুর্যোগের কারণে অনেক গ্রাম খালি করে লোকজনকে নিরাপদ অঞ্চলে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আইটিবিপি’র এক মুখপাত্র বলেছেন, রানি গ্রামের কাছে একটি ব্রিজ ভেঙে যাওয়ার কারণে কয়েকটি সীমান্ত পোস্টের যোগাযোগ ছিল ‘সম্পূর্ণ বন্ধ’।
দিল্লিতে ন্যাশনাল ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট টিমের সদস্যরা বৈঠকে বসেছিলেন। তারা জানিয়েছেন, সেন্ট্রাল ওয়াটার কমিশনের পক্ষ থেকে তাদেরকে জানানো হয়েছে, জোশীমঠে বিপর্যয় হলেও তার নীচের দিকের এলাকায় বন্যা হওয়ার আশঙ্কা নেই। অলকানন্দা ও ধৌলিগঙ্গার পানিও কমে গেছে।
প্রেসিডেন্ট রামনাথ কোবিন্দ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ভয়াবহ ওই বিপর্যয়ে উদ্বেগ প্রকাশের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন।
এদিকে ভারতের এই বিপর্যয়ে সব ধরনের সাহায্য করতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। এক বিবৃতিতে সংস্থাটির মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, তিনি এই ঘটনায় অত্যন্ত দুঃখিত। জাতিসংঘ সব ধরনের সাহায্য করার জন্য প্রস্তুত।
সূত্র: এনডিটিভি
টিএম