ক্যাপিটলে হামলার নতুন ভিডিও সামনে আনলেন ডেমোক্র্যাটরা
সিনেটে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিশংসন শুনানিতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেছেন ডেমোক্র্যাটরা। এতে আগে দেখা যায়নি বা প্রকাশিত হয়নি এমন কিছু নতুন ছবি ও ভিডিও সামনে এনেছেন তারা। এসব ছবি-ভিডিওর পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন রেকর্ড উপস্থাপন করে ক্যাপিটল ভবনে হামলার ভয়াবহতা তুলে ধরা হয়েছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, স্থানীয় সময় বুধবার (১০ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সিনেটে ট্রাম্পের অভিশংসন শুনানির দ্বিতীয় দিনের কার্যক্রম শুরু হয়। এসময় ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতারা বিভিন্ন তথ্য, ছবি ও ভিডিও উপস্থাপন করে ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল ভবনে হামলার ঘটনায় ট্রাম্পের সরাসরি দায় রয়েছে বলে যুক্তিতর্ক তুলে ধরেন।
বিজ্ঞাপন
সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, নতুন প্রকাশিত ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ক্যাপিটল ভবনে তাণ্ডব চালানোর সময় হামলাকারীরা আইনপ্রণেতাদের কতোটা কাছে চলে এসেছিলেন।
ক্যাপিটল ভবনে হামলার দিন নিরাপত্তা ক্যামেরায় ধরা পড়া একটি ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করেছেন ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যের ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতা স্ট্র্যাসি প্ল্যাসকেট। সেখানে দেখা যাচ্ছে, উগ্রপন্থী সংগঠন প্রাউড বয়জের বেশ কিছু সদস্য ক্যাপিটল ভবনে ঢুকে জানলার কাচ ভাঙছে। তারপর তারা ভবনের করিডোরে প্রবেশ করে। নিরাপত্তা রক্ষীদের ওপরও তারা আক্রমণ করে সরিয়ে দিচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
এতে আরও দেখা যায়, হামলার একপর্যায়ে তৎকালীন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সসহ অন্যদের নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আর হামলাকারীরা চিৎকার করে বলছে, ‘মাইক পেন্সকে মার’, ‘ন্যান্সি পেলোসিসহ যাকে হাতের কাছে পাবো, তাকেই মারবো’।
এছাড়া হামলার সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে সাহায্য চাইতে শোনা যায় একটি অডিও ক্লিপে। একইসঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে হামলাকারীরা কিভাবে অস্ত্র ও কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করছে, সেটাও বর্ণনা করতে শোনা যায় অডিওটিতে।
প্ল্যাসকেটের বক্তব্য, ট্রাম্প এই সব করার জন্যই সমর্থকদের পাঠিয়েছিলেন। হামলাকারীরা প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসিকে বিশেষ করে টার্গেট করেছিল। তার অফিসে ঢুকে হামলাকারীরা ভাঙচুর করে। একজনের হাতে অস্ত্র ছিল। আইনপ্রণেতারা যখন নিরাপদ জায়গায় যাচ্ছিলেন, তখনই হামলাকারীরা ক্যাপিটলে ঢুকে পড়ে। মিনিটখানেক আগে তারা ঢুকতে পারলেই অবস্থা আরও ভয়ঙ্কর হতো।
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রস্তাব নিয়ে ডেমোক্র্যাটদের অভিযোগ, নির্বাচনে কারচুপি ও জালিয়াতি হয়েছে বলে ট্রাম্প একের পর এক প্রমাণহীন অভিযোগ দিতে থাকেন। কিন্তু তার ওই অভিযোগ ছিল পুরোপুরি মিথ্যা। তারপর কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনের সময় ক্যাপিটল ভবনে যেতে সমর্থকদের উস্কানি দিয়েছেন ট্রাম্প। নির্বাচনে জালিয়াতির কথা শুনে সমর্থকরা আগে থেকেই উত্তেজিত ছিলেন। কিন্তু এর সঙ্গে যোগ হয়েছিল হামলার উস্কানি। এ কারণেই ক্যাপিটল ভবনে হামলা করে ট্রাম্প সমর্থকরা।
প্লাসকেটের আগে ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতা জেমি রাসকিন বলেন, ট্রাম্পের এই বিচার যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ‘সত্য প্রতিষ্ঠার মুহূর্ত’। ট্রাম্পের আইনজীবীরা দাবি করেছিলেন- সাবেক এই প্রেসিডেন্ট নাকি ক্যাপিটলে হামলায় সমর্থকদের উস্কানি দেননি। কিন্তু রাসকিন বলেন, তথ্যপ্রমাণ দেখিয়ে দেবে, এই ঘটনায় ট্রাম্পের ভূমিকা কী ছিল। তিনি ‘কম্যান্ডার ইন চিফ’-এর বদলে ‘ইনসাইটার ইন চিফ বা ‘প্রধান উস্কানিদাতা’য় পরিণত হয়েছিলেন।
এরপর রাসকিন সেসময় ট্রাম্পের করা একের পর এক টুইট উদ্ধৃত করে যুক্তি তুলে ধরে বলেন, ট্রাম্পের আইনজীবীরা যা বলছেন, তা ঠিক নয়। ট্রাম্পের একটি টুইটে বলা হয়েছিল, ‘বি দেয়ার, উইল বি ওয়াইল্ড’, অর্থ্যাৎ ‘সেখানে (ক্যাপিটলে) অবস্থান করুন, হিংস্র হোন’। এরপর রাসকিন বলেন, এসবই দেখিয়ে দিচ্ছে, ক্যাপিটল হামলার ঘটনায় ট্রাম্পের ভূমিকা কতখানি ছিল।
ডেমোক্র্যাটদের উপস্থাপিত এসব ভিডিও ফুটেজে উগ্রবাদীদের হামলা থেকে সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স ও সিনেটর মিট রমনির রক্ষা পাওয়ার কয়েক মুহূর্তের ছবি দেখা গেছে। হামলার মুখে পড়ার কিছুক্ষণ আগে তাদেরকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়। এছাড়া হামলাকারীদের মোকাবিলায় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের বিভিন্ন তৎপরতাও দেখা যায়।
ডেমোক্র্যাটদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হওয়ায় এবার ট্রাম্পের আইনজীবী ও ইমপিচমেন্ট ম্যানেজাররা ১৬ ঘণ্টা সময় পাবেন তাদের কথা ও যুক্তি তুলে ধরার জন্য। দুই দিন ধরে তারা ট্রাম্পের সমর্থনে যাবতীয় যুক্তি উপস্থাপন করবেন। ট্রাম্পের আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হলে উভয়পক্ষকে প্রশ্ন করার সুযোগ পাবেন সিনেটররা।
এরপর অভিশংসন ব্যবস্থাপকের (ইমপিচমেন্ট ম্যানেজার) এর ভূমিকায় থাকা ৯ জন ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতা শুনানির স্বার্থে সাক্ষী ডাকা কিংবা পরোয়ানা জারির অনুরোধ জানিয়ে বিচারপর্ব দীর্ঘায়িত করবেন কি না তা অবশ্য এখনও নিশ্চিত নয়। তবে ট্রাম্প সিনেটে সাক্ষ্য দেবেন না বলে ইতোমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন।
জো বাইডেনের ক্ষমতাগ্রহণের মাত্র দুই সপ্তাহ আগে যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের প্রতীক ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল ভবনে সশস্ত্র হামলা ও সহিংসতা চালায় ট্রাম্প সমর্থকরা। এতে এক পুলিশ কর্মকর্তাসহ নিহত হয় পাঁচ জন। সমর্থকদের চালানো এই হামলায় ট্রাম্প উস্কানি দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
সূত্র: বিবিসি
টিএম