ট্রাম্প বিরোধিতায় ভাঙনের সুর রিপাবলিকান দলে?
যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল রিপাবলিকান পার্টির যেসব সদস্য দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরোধী হিসেবে পরিচিত, সম্প্রতি তাদের একাংশ নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের কথা ভাবছেন। গত শুক্রবার এ বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি জুম বৈঠকও করেছেন তারা।
যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট কংগ্রেস নির্বাচনে অংশ নেওয়া কয়েকজন রিপাবলিকান নেতা এবং দেশটির সাবেক রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগান, জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশ, জর্জ ডব্লিউ বুশ এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময়কার মার্কিন প্রশাসনের বেশ কয়েকজন সদস্য, রিপাবলিকানপন্থী সাবেক কয়েকজন রাষ্ট্রদূত এবং দলের রাজনৈতিক কৌশল নির্ধাণে দায়িত্বপ্রাপ্ত কয়েকজন সদস্যসহ ১২০ জনেরও অধিক রিপাবলিকান নেতা ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
বিজ্ঞাপন
বৈঠকে সাবেক ট্রাম্প প্রশাসনের যেসব কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন, তারা হলেন যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের সাবেক শীর্ষ উপদেষ্টা জন মিটনিক, একই বিভাগের সাবেক উপপ্রধান কর্মকর্তা এলিজাবেথ নিউমান এবং সাবেক কর্মকর্তা মাইলস টেইলর। ট্রাম্পের এক মুখপাত্র অবশ্য রিপাবলিকান দলের এই ‘বিদ্রোহী’ সদস্যদের ‘হারু পার্টি’ বা লুজার বলে অভিহিত করেছেন।
রিপাবলিকান পার্টির শাখা সংগঠন হাউস রিপাবলিকান কনফারেন্সের শীর্ষ নীতি নির্ধারক এবং ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দলের মনোনয়নবঞ্চিত নেতা ইভান ম্যাকমুলিনসহ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এমন চারজন ব্যক্তির সঙ্গে সম্প্রতি যোগাযোগ করেছে আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
বিজ্ঞাপন
তারা জানিয়েছেন, ক্ষমতায় থাকাকালে দেশের সংবিধান এবং আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেননি ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্টের এই আচরণ তার দল রিপাবলিকান পার্টির যেসব সদস্যদের ক্ষুব্ধ করেছে- তাদেরই অগ্রবর্তী বা নেতৃস্থানীয় অংশ ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বলে জানিয়েছেন তারা।
বৈঠকের উদ্দেশ্য সম্পর্কে ইভান ম্যাকমুলিন রয়টার্সকে বলেন, রিপাবলিকান দলে ট্রাম্পের ক্রমবর্ধমান প্রভাব নিয়ে দলের অনেক নেতাকর্মী শঙ্কায় আছেন। বিশেষ করে গত ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলে হামলার ঘটনায় দলের জ্যেষ্ঠ ও নীতি নির্ধারক নেতাদের দৃশ্যত নিশ্চুপ থাকা অনেক নেতাকর্মী, সমর্থক ও জনপ্রতিনিধিদের হতাশ করেছে। বৈঠকে মূলত এ বিষয়গুলো নিয়েই আলোচনা হয়েছে। তবে অন্য তিনজন জানিয়েছেন, বৈঠকের মূল আলোচ্য বিষয় ছিল একটি কার্যকর নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করা।
গত নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেনের কাছে হেরে যান দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প; কিন্তু পরাজয় স্বীকার করার বদলে নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ আনেন তিনি, মার্কিন একাধিক আদালতে এ বিষয়ে বেশ কয়েকটি মামলাও করেন তিনি এবং তার সমর্থকরা।
তবে অভিযোগের পক্ষে যথাযথ প্রমাণ হাজির করতে না পারায় তার সব মামলাই খারিজ করে দেন আদালত। এরপর গত ৬ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিতে পার্লামেন্ট ভবন ক্যাপিটল যখন হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস এবং সিনেট সদস্যদের যৌথ সভা বসেছিল, তখন সেখানে হামলা করেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের কয়েক হাজার উগ্র সমর্থক। দুই পুলিশসদস্যসহ ওই দাঙ্গায় নিহত হন ৬ জন।
নিজের সমর্থকদের এই হামলায় প্ররোচনা ও উস্কানি দেওয়ার জন্য গত ১৩ জানুয়ারি তার বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রস্তাব পাস করে কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস। বর্তমানে উচ্চকক্ষ সিনেটেও তার অভিশংসন চলছে।
এ বিষয়ে শুক্রবারের বৈঠকে অংশ নেওয়া রিপাবলিকান পার্টির এক নেতা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘যে ব্যাপারটি আমাদের সবচেয়ে বেশি হতাশ করেছে তা হলো ৮ সিনেট সদস্য ও ১৩৯ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভ সদস্য জো বাইডেনকে দেশের প্রেসিডেন্ট হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়ার বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন এবং অধিকাংশ সিনেট সদস্য জানিয়েছেন, সেখানে ট্রাম্পের যে অভিশংসন চলছে-তা তারা সমর্থন করবেন না।’
ইভান ম্যাকমুলিন এ বিষয়ে বলেন, ‘রিপাবলিকান পার্টি দিন দিন মার্কিন গণতন্ত্রের জন্য হুমকি হয়ে উঠছে- এটা সত্যি বড় একটি সমস্যা। সত্য, যুক্তি ও গণতন্ত্রের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়া এখন এই দলের নেতাকর্মীদের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত। আমাদের আসলে নতুন কিছু প্রয়োজন।’
সাম্প্রতিক বৈঠকের প্রতিক্রিয়ায় হোয়াইট হাউস থেকে কোনো মন্তব্য করা হয়নি। তবে ট্রাম্পের মুখপাত্র জেসন মিলার এ সম্পর্কে বলেছেন ওই বৈঠকটি ছিল রিপাবলিকান দলের ‘হারু পার্টি’ বা লুজারদের ‘হট্টগোল সভা’।
রয়টার্সকে এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এর হচ্ছে রিপাবলিকান দলের হারু পার্টি। জো বাইডেনকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে স্বীকৃতি দিতে যখন তারা ভোট দিয়েছিল তখনই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল যে এরা দল ছেড়ে চলে যাবে।’
সূত্র: রয়টার্স
এসএমডব্লিউ