জার্মানির কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারগুলো লকডাউনের মেয়াদ ৭ই মার্চ পর্যন্ত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। স্থানীয় সময় বুধবার দুপুর ও সন্ধ্যাজুড়ে আলোচনার পর আরও এক মাস লকডাউন বাড়ানোর ঘোষণা দেন তারা। খবর জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলের।

তবে রাজ্য পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানোর ঘোষণা দিলেও মহামারি করোনা সংক্রমণের কমে চলা হারের আলোকে পরিস্থিতির উন্নতির আশা করছেন জার্মান চ্যান্সেলর মেরকেল।

বুধবার চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মেরকেল ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের বৈঠকের আগেই অবশ্য এমন সিদ্ধান্তের কথা মোটামুটি স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল।

অবশ্য জার্মানির চলমান লকডাউনের মেয়াদ যে আরও বাড়ানো হবে বুধবার চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মেরকেল ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের বৈঠকের আগেই তা মোটামুটি স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। বাকি ছিল শুধু ঘোষণা দেওয়া।

লকডাউন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিলেও একইসঙ্গে তার পরের সময়ের জন্য ইতিবাচক পূর্বাভাসও শোনা গেল দেশটির শীর্ষ নেতাদের মুখে। তাদের মতে, বর্তমান কঠোর বিধিনিষেধের ফলে দেশে দৈনিক সংক্রমণের হার যেভাবে লাগাতার কমে চলেছে, তার আলোকে আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে বিপদ কেটে যেতে পারে। তখন ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফিরতে পারবেন জার্মানির মানুষ।

তাদের মতে প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে করোনা সংক্রমণের গড় হার ৩৫ এর নীচে নামলেই এমন সুযোগ পাওয়া যাবে। কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকানবাজার, মিউজিয়াম, আর্ট গ্যালারিসহ একাধিক পরিষেবা আবারও চালু হবে। উল্লেখ্য, বুধবার জার্মানিতে গড় সংক্রমণের হার ছিল ৬৮। গত ২২ ডিসেম্বর যা ছিল ১৯৮।

মেরকেল ও মুখ্যমন্ত্রীরা বুধবার কয়েকটি স্পষ্ট পদক্ষেপেরও ঘোষণা দেন। মার্চের প্রথম দিন থেকে দেশজুড়ে চুল কাটার সেলুন খোলা হবে। হোটেল-রেস্তোঁরা খোলার বিষয়ে এখনো কিছু স্থির হয়নি। তবে স্কুল ও কিন্ডারগার্টেন খোলার সিদ্ধান্ত রাজ্য সরকারগুলোর হাতেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

অনেক রাজ্য অবশ্য ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। স্থানীয় পরিস্থিতি বিবেচনা করে যত দ্রুত সম্ভব শিশু-কিশোরদের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক ছন্দে নিয়ে আসতে চান মুখ্যমন্ত্রীরা। শিক্ষকদের স্বাস্থ্যের ঝুঁকি কমাতে করোনা টিকার ক্ষেত্রে তাদের অগ্রাধিকারের মাত্রা বাড়ানোর কথাও ভাবা হচ্ছে।

আগামী ৩ মার্চ পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে মেরকেল ও মুখ্যমন্ত্রীরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানাবেন।

এমন সব ইতিবাচক পূর্বাভাসের মাঝেও জার্মানির নেতারা করোনাভাইরাসের আরও ছোঁয়াচে মিউট্যান্ট বা নতুন ধরন সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছেন। এসব নতুন ধরন আরও দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে জার্মানিতে করোনা সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কার কথা বলেন চ্যান্সেলর ম্যার্কেল।

তবে এখনো পর্যন্ত সংক্রমণের ধীর গতির আলোকে তিনি অদূর ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আশাবাদী। আগামী ৩ মার্চ পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে মেরকেল ও মুখ্যমন্ত্রীরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানাবেন।

ইউগভ সংগঠনের জনমত সমীক্ষা অনুযায়ী জার্মানির প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ লকডাউনের মেয়াদ আরও বাড়ানোর পক্ষে। মাত্র এক চতুর্থাংশ মানুষ এমন পদক্ষেপের বিরোধিতা করছেন। শিল্পবাণিজ্য জগত অর্থনীতির লাগাতার ক্ষতি সম্পর্কে সতর্ক করে দিলেও মার্চ পর্যন্ত পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবে বলে আশা প্রকাশ করেছে।

তবে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে টিকাদান কর্মসূচির ধীরগতি। বুধবারের হিসাব অনুযায়ী ১০ লাখ মানুষ— অর্থাৎ মোট জনসংখ্যার এক দশমিক এক শতাংশ ইতোমধ্যে টিকার দুটি ডোজ পেয়েছেন। এপ্রিল থেকে জুন মাসের মধ্যে টিকার সরবরাহ স্বাভাবিক হলে এই সংখ্যা আরও দ্রুত বাড়বে বলে রাজনীতিকরা আশা করছেন।

করোনা মহামারি মোকাবিলায় ইউরোপের মধ্যে বিচ্ছিন্নভাবে জার্মানির সাফল্য কতটা স্থায়ী হবে, সে বিষয়েও প্রশ্ন উঠছে। বিশেষ করে অস্ট্রিয়া ও চেক প্রজাতন্ত্রের মতো প্রতিবেশী দেশে সংক্রমণের মারাত্মক হার জার্মানির বাভেরিয়া রাজ্যে দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠছে। প্রয়োজনে সীমান্ত বন্ধ করার বিষয়েও ভাবনাচিন্তা চলছে এখন। 

এএস