‘জার্মানির নাৎসী নেতা এডলফ হিটলারের দেহে ইহুদি রক্ত ছিল’ - রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের এমন এক বক্তব্যের পর ইসরায়েল ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। এমনকি বিতর্কিত এই মন্তব্যের জন্য ল্যাভরভকে ক্ষমাও চাইতে বলেছেন ইহুদি এই দেশটির নেতারা।

রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভকে ইতালিয়ান টিভির এক সাক্ষাৎকারে প্রশ্ন করা হয় যে ইউক্রেনকে কেন রাশিয়া ‘নাৎসী’ হিসেবে চিত্রিত করছে - যেখানে দেশটির প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি একজন ইহুদি। ল্যাভরভ বলেন, এতে কিছু আসে যায় না - ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ইহুদি হলেই যে ইউক্রেনে নাৎসীরা নেই এটি প্রমাণ হয় না।

তিনি বলেন, আমার ভুল হতে পারে, কিন্তু হিটলারেরও দেহেও ইহুদি রক্ত ছিল। তিনি আরও বলেন, ‘জ্ঞানী ইহুদিরা বলেন যে সবচেয়ে কড়া ‘অ্যান্টি-সেমাইট’রাও সাধারণত ইহুদি হয়ে থাকেন।’

ল্যাভরভের এ বক্তব্যে ইসরায়েলে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেট এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়াইর লাপিদ এর কড়া নিন্দা জানিয়ে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে এ জন্য ক্ষমা চাইতে বলেন।

হিটলারের বংশে কি আসলেই ‘ইহুদি রক্ত’ ছিল?

এমন একটি ঐতিহাসিক দাবি বহু দশক ধরেই চলছে যে হিটলারের পিতামহ - যাকে শনাক্ত করা যায়নি - হয়তো ইহুদি ছিলেন। তবে এ দাবি প্রমাণিত নয়। হিটলারের একজন আইনজীবী ছিলেন যার নাম হ্যান্স ফ্র্যাংক।

তিনি একটি স্মৃতিকথা লিখেছিলেন যা প্রকাশিত হয় ১৯৫৩ সালে। এতে তিনি লেখেন, হিটলার নিজেই তাকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, তার পূর্বপুরুষদের মধ্যে কেউ ইহুদি ছিলেন বলে যে গুজব আছে - তা তদন্ত করতে।

ফ্র্যাংক বলেন, তিনি তথ্যপ্রমাণ উদ্ঘাটন করেছিলেন যে হিটলারের পিতামহ আসলেই ইহুদি ছিলেন। তার এই দাবি পরে ষড়যন্ত্র-তাত্ত্বিকদের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা পায় - কিন্তু মূলধারার ইতিহাসবিদদের মধ্যে এ দাবি নিয়ে সংশয় আছে।

জার্মানির নাৎসী নেতা এডলফ হিটলারের শাসনামলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন ‘হলোকস্ট’ নামে ইহুদি-নিধনযজ্ঞ চালানো হয় - যাতে ৬০ লাখ ইহুদিকে হত্যা করা হয়।

রাশিয়া শুরু থেকেই বলছে, ইউক্রেনে তাদের অভিযান ওই দেশটিকে নাৎসীমুক্ত করার অভিযান। কারণ মস্কোর মতে ‘ইউক্রেনের রাজনীতি ও সামরিক বাহিনীর ভেতরে উগ্র-জাতীয়তাবাদী নাৎসী মতাদর্শের লোকজন ঘাঁটি গেড়ে বসেছে।’

এ প্রেক্ষাপটেই সের্গেই ল্যাভরভকে ইতালিয়ান টিভির জোনা বিয়াংকা অনুষ্ঠানে ওই সাক্ষাৎকারে প্রশ্ন করা হয়েছিল। কিন্তু লাভরভ এর যে জবাব দেন তাতে ইসরায়েলের নেতারা চরম ক্ষুব্ধ হন। মাত্র কয়েকদিন আগেই ইসরায়েলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন ইহুদি নিধনযজ্ঞের স্মারক দিবস পালিত হয়েছে।

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেট বলেন, রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ওই মন্তব্য একটি মিথ্যে কথা এবং রাজনৈতিক উদ্দেশে হলোকস্টকে ব্যবহার করা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।

অন্যদিকে ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়াইর লাপিদ এ ব্যাপারে ইসরায়েলে রুশ রাষ্ট্রদূতকে তলব করে ব্যাখ্যা দাবি করেন। লাপিদ বলেন, ল্যাভরভের বক্তব্য নিন্দনীয় এবং ক্ষমার অযোগ্য। আর ঐতিহাসিকভাবেও এটি মারাত্মক ভুল। এ জন্য ল্যাভরভকে ক্ষমা চাইতে হবে বলেও দাবি করেন তিনি।

এছাড়া ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রো কুলেবা বলেছেন, ল্যাভরভের মন্তব্যে প্রমাণ হয় যে রাশিয়ার ভেতরে গভীর ইহুদিবিদ্বেষ রয়েছে।

সূত্র : বিবিসি বাংলা

টিএম