পাকিস্তানের রাজনীতিতে নতুন মোড়
দলছুট এমপিরা বিরোধী পক্ষে ভোট দিতে পারেন না: পাক সুপ্রিম কোর্ট
পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) থেকে বেরিয়ে যাওয়া এমপিরা বিরোধীদের আনা অনাস্থা প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেওয়ায় ক্ষমতা থেকে বিদায় নিতে বাধ্য হয়েছেন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। মঙ্গলবার দেশটির সুপ্রিম কোর্ট এই বিষয়ে দায়ের করা এক পিটিশনের শুনানি শেষে নাটকীয় রায় ঘোষণা করে বলেছেন, পার্লামেন্টের কোনও আইনপ্রণেতা তার দল থেকে বেরিয়ে গিয়ে বিরোধীদের পক্ষে ভোট দিতে পারেন না।
পাকিস্তানের সংবাদ মাধ্যম জিও নিউজের এক প্রতিবেদনে সুপ্রিম কোর্ট এই রায় ঘোষণা করেছেন বলে জানানো হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট বলেছেন, সংসদের ভিন্নমতাবলম্বী সদস্যরা (এমপি) তাদের সংসদীয় দলের নির্দেশের বিরুদ্ধে গিয়ে ভোট দিতে পারেন না। সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশের ফলে দেশটির বর্তমান সরকারের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
বিজ্ঞাপন
গত ২১ মার্চ পাকস্তানের প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি দলত্যাগী আইনপ্রণেতাদের ভোটদানের ক্ষমতা সংক্রান্ত দেশটির সংবিধানের ৬৩ (এ) অনুচ্ছেদের ব্যাখ্যা চেয়ে পিটিশন দায়ের করেছিলেন। পিটিশন দায়েরের ৫৮ দিন পর দেশটির সর্বোচ্চ আদালত বলেছেন, এই আইন বিচ্ছিন্নভাবে ব্যাখ্যা করা যাবে না।
তবে সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ সদস্যের বিচারকের বেঞ্চ এই ইস্যুতে বিভক্ত রায় দিয়েছেন। সুপ্রিম কোর্টের তিন বিচারক— প্রধান বিচারপতি উমর আতা বিন্দাল, বিচারপতি ইজাজুল আহসান এবং বিচারপতি মুনিব আখতার দলত্যাগী এমপিদের দলের নির্দেশনার বিরুদ্ধে দেওয়া ভোট ‘গণনা’ করা যাবে না বলে রায় দিয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
অন্যদিকে, সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চের অপর দুই বিচারপতি জামাল মানদোখাইল ও বিচারপতি মাজহার আলম খান মিয়াখেল দ্বিমত পোষণ করেন। তারা বলেছেন, প্রেসিডেন্টের আদেশের ওপর মতামত দেওয়া হলে সেটি সংবিধান পুনর্লিখনের সমান হবে।
পাকিস্তানের আর্থিক দুরবস্থা ও ভুল পররাষ্ট্রনীতির অভিযোগে ইমরান খানের বিরুদ্ধে গত ৮ মার্চ অনাস্থা প্রস্তাব আনে বিরোধী দলগুলো। তবে এ প্রস্তাবকে ‘অসাংবিধানিক’ আখ্যা দিয়ে ৩ এপ্রিল তা খারিজ করে দেন দেশটির জাতীয় পরিষদের ডেপুটি স্পিকার কাসিম খান সুরি।
সেদিনই প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে জাতীয় পরিষদ ভেঙে দেন প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি। এ পরিস্থিতিতে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে নোটিশ দেন সুপ্রিম কোর্ট। টানা পাঁচ দিন শুনানি শেষে সুপ্রিম কোর্ট ৭ এপ্রিল অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ এবং জাতীয় পরিষদ ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্তকে অসাংবিধানিক বলে ঘোষণা করেন এবং অনাস্থা প্রস্তাবের ওপর ভোট আয়োজনের নির্দেশ দেন।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা মেনে দেশটির সংসদের নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদের স্পিকার আসাদ কায়সারের সভাপতিত্বে ৯ এপ্রিল সাড়ে ১০টায় অধিবেশন শুরু হয়। দিনভর চলে নাটকীয়তা। কয়েক দফায় অধিবেশন স্থগিত করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে ক্ষমতাচ্যুত করার বিদেশি ষড়যন্ত্রের অংশ হতে পারবেন না জানিয়ে রাতে পদত্যাগ করেন জাতীয় পরিষদের স্পিকার আসাদ কায়সার। পরে স্পিকারের আসনে বসেন পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) সদস্য আয়াজ সাদিক। তার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ভোটে ইমরান খানের দল পিটিআই ত্যাগী আইনপ্রণেতারা বিরোধীদের পক্ষে ভোট দেওয়ায় ক্ষমতা থেকে বিদায় নিতে বাধ্য হন সাবেক এই ক্রিকেট তারকা।
এসএস