ভারতে বিনিয়োগের বিষয়ে কোনো চীনা কোম্পানিকে ‘সবুজ সংকেত’ দেয়নি নয়াদিল্লি। ভারত সরকারের পক্ষ থেকেও চীনের কোনো বিনিয়োগ প্রস্তাব এখনো গৃহীত হয়নি। সরকারি সূত্রের বরাতে ভারতের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি মঙ্গলবার এক অনলাইন প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে।

পূর্ব লাদাখ সীমান্তে দুই প্রতিবেশীর সামরিক উত্তেজনা সম্প্রতি শেষ হওয়ার পর চীনের বেশ কিছু বিনিয়োগ প্রস্তাব ভারত অনুমোদন দিতে যাচ্ছে— সোমবার ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য প্রকাশ করার একদিন পর এনডিটিভি ভারতের সরকারি সূত্রের বরাতে এই তথ্য জানাল। 

এনডিটিভি সূত্রের বরাতে জানিয়েছে, গত ২২ জানুয়ারির এক বৈঠকে হংকংভিত্তিক মাত্র তিনটি কোম্পানির বিনিয়োগ প্রস্তাবের অনুমোদন দিয়েছিল সরকার। প্রস্তাবগুলো দিয়েছিল সিটিজেন ওয়াচেস, নিপ্পন পেইন্টস এবং নেটপ্লে। তিন কোম্পানির দুটি জাপানের, অপরটির মালিকানা বিদেশে বসবাসরত ভারতীয় নাগরিকের।

গত বছরের জুনে লাদাখ সীমান্তে চীন-ভারত সীমান্ত বিভাজনকারী রেখা লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোলের (এলএসি) গালওয়ান উপত্যকায় দুই দেশের মধ্যে সামরিক সংঘর্ষ হয়। এতে ভারতের ২০ সেনা নিহত হন। এরপর বেইজিংকে পাল্টা জবাব দিতে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) নীতিতে পরিবর্তন আনে ভারত সরকার।

সরকারি এক সূত্র এনডিটিভিকে জানিয়েছেন, ‘ভারত সরকার একটি শক্তিশালী এফডিআই নীতি তৈরি করেছে। সংশোধিত নীতিমালায় বলা হয়েছে যে, ভারতের সাথে সীমান্ত রয়েছে এমন দেশের বিনিয়োগ প্রস্তাবগুলো নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে যেতে হবে এবং এ নিয়ে বিশদ বিশ্লেষণের পরেই অনুমতি দেওয়া যেতে পারে।’ নিরাপত্তা সংক্রান্ত এই সিদ্ধান্ত ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নেয় বলে জানিয়েছেন সরকারি ওই সূত্র।  

তিনি ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, ‘পাইপলাইনে থাকা প্রস্তাবগুলোর বিষয়ে যদি কোনো ধরনের নিরাপত্তা জটিলতা দেখা দেয় কিংবা এর সঙ্গে চীন সরকারের কোনো সংশ্লিষ্টতা থাকে তাহলে বিষয়টি নিয়ে কঠোর তদন্ত করতে হবে। আর এই নিরাপত্তা সংক্রান্ত তদন্তে উতরে গেলে তবেই সেসব বিনিয়োগ প্রস্তাব অগ্রাধিকার দেওয়া যেতে পারে।’

সোমবার বার্তা সংস্থা রয়টার্স ভারতের সরকারি ও বাণিজ্য সংক্রান্ত সূত্রের বরাতে তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, ভারত ৪৫টি চীনা বিনিয়োগ প্রস্তাব অনুমোদন দিতে যাচ্ছে। এরমধ্যে গ্রেট ওয়াল মোটর ও সাংহাই অটোমোবাইল ইন্ডাস্ট্রি করপোরেশনও (সাইক) রয়েছে। 

চীনের গাড়ি নির্মাতা কোম্পানি গ্রেট ওয়াল গত বছর তাদের ভারতীয় কারখানা বিক্রির জন্য বড় এক চীনা গাড়ি নির্মাতা কোম্পানির দ্বারস্থ হয়েছিল। কারখানাটি তারা ২৫ থেকে ৩০ কোটি ডলারে বিক্রি করতে চায়। 

অপরদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত সাইক মোটর করপোরেশন তাদের ব্রিটিশ ব্র্যান্ড এমজি মোটরের নামে ২০১৯ সালে ভারতে গাড়ি বিক্রি শুরু করেছিল। চীনা এই কোম্পানি ভারতে প্রায় ৬৫ কোটি ডলার বিনিয়োগে আগ্রহী। ইতোমধ্যে কোম্পানিটি ৪০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে। আরও বিনিয়োগ করতে অনুমোদনের প্রয়োজন পড়বে।

রয়টার্স ওই প্রতিবেদন জানায়, সরকারি দুটি সূত্র ওই তালিকা দেখেছে।

প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, যে ৪৫টি চীনা বিনিয়োগ প্রস্তাব প্রাথমিক অনুমোদন পাওয়ার জন্য আবেদন করেছে সেগুলোর বেশিরভাগ নির্মাণখাতের। ভারতের জাতীয় নিরাপত্তার সংক্রান্ত নীতিতে এই খাতটিকি স্পর্শকাতর হিসেবে বিবেচনা করা হয় না।   

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে আরও বলা হয় যে, লাদাখ সীমান্তে চীন-ভারত উত্তেজনার মধ্যে ভারত সরকার দেশে চীনা বিনিয়োগ নিয়ন্ত্রণে কড়াকড়ি আরোপের পর গত বছর থেকেই এই প্রস্তাবগুলো আটকে ছিল। ‘সীমান্ত পরিস্থিতির উন্নতির’ পরিপ্রেক্ষিতে ভারত সরকারের নীতিতে এই ‘পরিবর্তন’ আসে। 

লাদাখের প্যাংগং এলাকা থেকে দুই দেশ তাদের সব সেনা, ট্যাংক ও অন্যান্য সামরিক সরঞ্জাম সরিয়ে নিয়েছে বলে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে গত রোববার এক যৌথ বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়। তার একদিন পর বার্তা সংস্থা রয়টার্স ওই প্রতিবেদন প্রকাশ করে। 

পাইপলাইনে দুশো কোটি ডলারের চীনের প্রায় ১৫০টি বিনিয়োগ প্রস্তাব আটকে রয়েছে বলে জানায় রয়টার্স। তাতে বলা হয়, ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আন্তমন্ত্রণালয় প্যানেল এমন কড়কড়ি আরোপের সিদ্ধান্ত নিলে হংকংকে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগ প্রস্তাবগুলোও ঝুলে রয়েছে।

এএস