গত বছর ভারতীয় সৈন্যদের সাথে সংঘর্ষের সময় নিহত চীনা সৈন্যদের বিষয়ে অপবাদ দেওয়ার অভিযোগে একজন ব্লগারকে গ্রেপ্তার করেছে বেইজিংয়ের আইনশৃঙ্খলবাহিনী। গ্রেপ্তারকৃত ওই ব্যক্তি লাদাখ সংঘাতের বিষয়ে বিদ্বেষপরায়ণ হয়ে সত্যের বিকৃতি করেছেন বলে অভিযোগ আনা হয়েছে।

চীনা পুলিশের পক্ষ থেকে এই ব্লগারের পরিচয় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। তবে কর্তৃপক্ষ বলছে তার বংশনাম কিউ। ভারতীয় ও চীনা সৈন্যদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় এ ধরনের কথিত আপত্তিকর মন্তব্যের অভিযোগ অন্তত সাতজনকে আটক করা হয়েছে এবং সবশেষ এই ব্লগারকে গ্রেফতার করা হল।

গত বছরের জুনে এই সংঘর্ষ হয় এবং ৪৫ বছরের ইতিহাসে বিরোধপূর্ণ ভারত-চীন সীমান্তের লাদাখে প্রথমবারের মতো প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। চীনে ২০১৮ সালে একটি আইন পাস হয়, যেখানে দেশের বীর ও শহীদদের নামে কলঙ্ক রটানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

তবে চীনের সরকারি দৈনিক চায়না ডেইলির এক নিবন্ধে বলা হয়েছে, এ ধরনের অপরাধের জন্য চীনের ফৌজদারি আইনের আওতায় এখনই কোনও ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করা যাবে না। কেননা এই আইনটির সংশোধনী এখনও কার্যকর হয়নি। আগামী মাস থেকে সংশোধিত আইনটি কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে। তার পরেই এই আইনের আওতায় অভিযুক্ত ব্যক্তিকে তিন বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড দেওয়া হতে পারে।

চীনে ২০১৮ সালে একটি আইন পাস হয়, যেখানে দেশের বীর ও শহীদদের নামে কলঙ্ক রটানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

চায়না ডেইলির একজন কলামিস্ট বলেছেন, আটক ব্লগার যদি এই কাজটি আর মাত্র দশদিন পরে করতেন, তাহলে তিনিই হতেন এই আইনের আওতায় সাজাপ্রাপ্ত প্রথম ব্যক্তি। এটা খুবই দুঃখজনক।

নানজিং জননিরাপত্তা ব্যুরোর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, কিউ নামের এই ব্লগারকে আটক করা হয়েছে ১৯ ফেব্রুয়ারি। তার বয়স ৩৮ বছর।

স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, মাল্টিব্লগিং সাইট উইবোতে তার ২৫ লাখ অনুসারী রয়েছে। তবে বিবিসির পক্ষে এই তথ্যের সত্যতা যাচাই করে দেখা সম্ভব হয়নি। কেননা তার অ্যাকাউন্ট ইতোমধ্যে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। উইবোর পক্ষ থেকে গত সপ্তাহে ঘোষণা দেওয়া হয়, কিউর অ্যাকাউন্ট এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

ব্লগার কিউ আটক হওয়ার পর তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ স্বীকার করে নিয়েছেন বলে দেশটির গণমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে। তিনি ইন্টারনেটে লোকজনের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য এই অবৈধ আচরণ করেছেন। উইবোতে তথ্যের বিকৃতি ঘটিয়েছেন এবং যেসব বীর সৈনিক সীমান্ত রক্ষা করছিল তাদের নামে কলঙ্ক রটিয়েছেন।

তার পর থেকেই তিনি ঝগড়া ও সমস্যা তৈরিতে প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে আটক রয়েছেন। চীনে সমালোচনাকারীদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ আনা একটি সাধারণ ঘটনা।

চীন ও ভারতীয় সৈন্যদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় মন্তব্য করার অভিযোগে আরো কিছু ব্যক্তি আটক রয়েছেন, তবে তারা ঠিক কী বলেছেন সেবিষয়ে কিছু প্রকাশ করা হয়নি। গত সপ্তাহেই চীন প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করে যে ভারতের লাদাখ অঞ্চলের গালওয়ান উপত্যকায় ভারতীয় সৈন্যদের সাথে সংঘর্ষে তাদের চারজন সৈন্য নিহত হয়েছে।

এর আগে, ভারতের পক্ষ থেকে ওই সংঘর্ষে ২০ জন চীনা সৈন্য নিহত হওয়ার কথা বলা হয়েছিল। সেসময় চীন সরকার তাদের সৈন্য হতাহত হওয়ার কথা স্বীকার করে নিলেও কোনও সংখ্যার কথা উল্লেখ করেনি। 

চীনের সামরিক সংবাদ মাধ্যমে পিএলএ ডেইলিতে বলা হয়, যেসব সৈন্য তাদের যৌবন, রক্ত এবং জীবন দিয়েছেন; তাদের বীর হিসেবে সম্মানিত করা হয়েছে।

নিহত সব সৈন্যকে মরণোত্তর পুরষ্কারও দেওয়া হয়। চীন ও ভারতের মধ্যে এই সীমান্ত বিরোধ কয়েক দশকের। এর একটি বড় কারণ হিসেবে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত ঠিক মতো চিহ্নিত না হওয়াকেই দায়ী করা হয়। নদী, হ্রদ, তুষারে ঢাকা পাহাড় ও পর্বতসঙ্কুল দুর্গম এলাকাটিতে সীমান্ত চিহ্নিত করা খুব কঠিন।

কোথায় চীন আর কোথায় ভারত অনেক জায়গাতেই সেটা স্পষ্ট নয়। ফলে অনেক জায়গাতেই দু'দেশের সৈন্যরা মুখোমুখি অবস্থানে চলে আসে যখন সংঘাতের মতো ঘটনা ঘটে। তবে দুটি দেশের মধ্যেই এরকম পরিস্থিতিতে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার না করার বিষয়ে সমঝোতা রয়েছে। বিবিসি বাংলা।

এসএস