ট্রলি ঠেলে রাশিয়ার সীমান্তের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন উত্তর কোরিয়ায় রুশ দূতাবাসের থার্ড সেক্রেটারি ভ্লাদিস্লাভ সরোকিন

উত্তর কোরিয়ায় নিযুক্ত রাশিয়ার কূটনীতিক এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা অস্বাভাবিক ভাবে অর্থাৎ হাতে ঠেলা ট্রলিতে চড়ে দেশটি ত্যাগ করেছেন। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে দেশটিতে ট্রেন ও যান চলাচলে কঠোর বিধিনিষেধ থাকায় বাধ্য হয়েই তারা এই পন্থায় দেশত্যাগ করেছেন বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, বাসে ও ট্রেনে করে দীর্ঘ রাস্তা ভ্রমণের পর রাশিয়ার সীমান্ত অভিমুখে কূটনীতিক ও পরিবারের সদস্যসহ আট জন রেল লাইনের ওপর দিয়ে প্রায় এক কিলোমিটার (০.৬ মাইল) রাস্তা হাতে ঠেলা ট্রলির মাধ্যমে পার হন।

করোনা সংক্রমণের কারণে গণপরিবহন চলাচল সীমিত করে দিয়েছে উত্তর কোরীয় কর্তৃপক্ষ। যদিও পিয়ংইয়ংয়ের দাবি, দেশটিতে এখন পর্যন্ত কেউ করোনায় সংক্রমিত হননি। তবে পর্যবেক্ষকরা এই দাবি মানতে রাজি নন।

গত বছরের প্রায় শুরু থেকেই সকল যাত্রীবাহী ট্রেন ও বাসের উত্তর কোরিয়ায় প্রবেশ নিষিদ্ধ রয়েছে। এছাড়া একই সময় থেকে বন্ধ রয়েছে আন্তর্জাতিক বিমান চলাচলও। আর তাই উত্তর কোরিয়া ত্যাগ করতে হলে রাশিয়ার ওই কূটনীতিকদের সামনে আর কোনো বিকল্প ছিল না বললেই চলে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ‘এক বছরেরও বেশি সময় ধরে সীমান্ত বন্ধ এবং যাত্রীদের আসা-যাওয়া বন্ধ থাকায় বাড়িতে ফিরতে তাদেরকে (কূটনীতিক) দীর্ঘ ও কষ্টসাধ্য ভ্রমণ করতে হয়েছে।’

রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শেয়ার করা ছবিতে দেখা যায়, স্যুটকেস নিয়ে রাশিয়ান কূটনীতিক ও তাদের পরিবারের সদস্যরা হাতে ঠেলা ওই রেল ট্রলিতে বসে আছেন। এছাড়া সীমান্ত পার হয়ে রাশিয়ায় প্রবেশের পর তাদের উল্লাস করতে দেখা যায় অন্য এক ভিডিওতে।

মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হাতে ঠেলা ওই ট্রলির প্রধান ‘ইঞ্জিন’ ছিলেন উত্তর কোরিয়ায় রুশ দূতাবাসের থার্ড সেক্রেটারি ভ্লাদিস্লাভ সরোকিন। তুমান নদীতে অবস্থিত ব্রিজসহ রাশিয়াতে প্রবেশ করার আগ পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তা ট্রলি ঠেলে নিয়ে যান তিনি।

তবে পিয়ংইয়ং থেকে রাশিয়ার সীমান্ত পর্যন্ত পৌঁছাতে তাদেরকে প্রায় ৩২ ঘণ্টার ট্রেন ভ্রমণ করতে হয়। পিয়ংইয়ং থেকে প্রথমে ট্রেনে ৩২ ঘণ্টা, সেখান থেকে বাসে করে আরও দুই ঘণ্টা এবং তারপর ভ্রমণের সবচেয়ে কঠিন অংশ অর্থাৎ হাতে ট্রলি ঠেলে রাশিয়ার সীমান্ত পারাপার। এই দীর্ঘ ও কষ্টকর ভ্রমণে অন্যান্যদের সঙ্গে সরোকিনের সঙ্গী ছিলেন তার তিন বছর বয়সী মেয়ে ভারইয়াও।

রাশিয়াতে প্রবেশের পরই রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা তাদের স্বাগত জানান। এরপর সেখান থেকে বাসে করে ভ্লাদিভস্তক বিমানবন্দরে যান তারা।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে উত্তর কোরিয়া তার নাগরিকদের কঠোর বিধিনিষেধ মনে চলতে বাধ্য করে আসছে। এমনকি কোয়ারেন্টাইনের শর্ত ভঙ্গ করায় দেশটিতে গত বছরের সেপ্টেম্বরে এক নাগরিককে গুলি করে হত্যার ঘটনা ঘটে বলেও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর বের হয়েছিল।

কোয়ারেন্টাইন না মানায় গুলিতে নিহত ওই ব্যক্তি ছিলেন সরকারি কর্মকর্তা। চীন থেকে দেশে ফেরার পর তাকে হাসপাতালে কোয়ারেন্টাইনে করে রাখা হয়েছিল। কিন্তু চিকিৎসককে না জানিয়ে তিনি গণশৌচাগারে গিয়েছিলেন। পরে শৌচাগার থেকে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়।

সূত্র: বিবিসি

টিএম