আফ্রিকার অন্যতম সামাজিক অস্থিরতাপ্রবণ দেশ নাইজেরিয়ায় ফের স্কুলে হামলা ও শিক্ষার্থী অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে দ্বিতীয়বারের মতো এমন ঘটনা ঘটল দেশটিতে।

শুক্রবার নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য জামফারের একটি স্কুলের তিন শতাধিক ছাত্রীকে অপহরণ করেছে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। অপহরণকারীদের পরিচয় এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। জামফারা রাজ্য সরকারের তথ্য কমিশনার সুলাইমান তানাই আঙ্কা আন্তর্জাতিক বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে এই তথ্য জানিয়েছেন।

আঙ্কা বলেন, ‘বন্দুকধারী সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা কয়েকটি গাড়িতে করে ওই স্কুলে এসেছিল এবং অস্ত্রের মুখে তারা ৩০০ ছাত্রীকে অপহরণ করেছে। কয়েকজন ছাত্রীকে তারা গাড়িতে তুলেছে বাকিদের পায়ে হেঁটে তাদের অনুসরণ করতে বাধ্য করেছে।’

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের নাইজেরিয়া প্রতিনিধি পিটার হকিন্স বলেছেন, ‘এই ঘটনা শোনার পর থেকে আমরা অত্যন্ত ক্ষুব্ধ ও হতভম্ব অবস্থায় আছি।’

নাসিরু আব্দুল্লাহি নামের এক অভিভাবক জার্মানির সংবাদসংস্থা ডিপিএ নিউজকে বলেন, ‘আমার দুই মেয়ে ওই স্কুলে পড়ত। একজনের বয়স ১০, অপরজনের ১৩। স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আমার দুই মেয়েকেও নিয়ে গেছে অপহরণকারীরা।’

যে স্কুল থেকে ওই ছাত্রীদের অপহরণ করা হয়েছে, সেটি একটি আবাসিক স্কুল। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার নাইজেরিয়া প্রতিনিধি বলেন, ‘স্থানীয় লোকজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মধ্যরাতের দিকে তারা ওই স্কুলের হোস্টেলে এসেছিল এবং কয়েক ঘণ্টা অবস্থান করেছিল সেখানে।’

নাইজেরিয়ার উত্তর এবং উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের নিরাপত্তা পরিস্থিতি দিন দিন দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠছে। গত সপ্তাহে দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য নাইজারে একটি আবাসিক স্কুলে হামলা চালিয়ে ৪২ জনকে অপহরণ করেছিল একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী। অপহৃতদের ২৭ জনই ওই স্কুলের ছাত্র।

মধ্যরাতের ওই হামলা এবং অপহরণকাণ্ডের সময় সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হয় এক শিক্ষার্থী। ঘটনার পর এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও  অপহৃতদের মুক্তি মেলেনি। এই অপহরণের সঙ্গে কারা যুক্ত— তাও শনাক্ত করা যায়নি এখন পর্যন্ত।

আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠী ‘আল-শাবাব’ সক্রিয় রয়েছে নাইজেরিয়ায়। গত কয়েক বছর ধরে দেশটিতে অব্যাহতভাবে বেড়ে যাওয়া হত্যা, অপহরণ, ধর্ষণ ও সহিংসতার সঙ্গে এই জঙ্গিগোষ্ঠীর সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ মিলেছে বেশ কয়েকবার। এমনকি স্কুলের ছাত্রীদের অপহরণ করে বিক্রি করে দেওয়ার মতো অপরাধও সংঘটিত করেছে আল-শাবাব।

তবে এক সপ্তাহের ব্যবধানে দেশটিতে স্কুল শিক্ষার্থীদের অপহরণের যে দু’টি ঘটনা ঘটল- তার সঙ্গে এই জঙ্গিগোষ্ঠীর সরাসরি সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি। ঘটনার দায় স্বীকার করে আল-শাবাব বা অন্য কোনও সন্ত্রাসী বা জঙ্গিগোষ্ঠী এখন পর্যন্ত কোনও বিবৃতি দেয়নি।

সূত্র: রয়টার্স, আলজাজিরা।

এসএমডব্লিউ