বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ ধনী কে এই গৌতম আদানি?
মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের বিলিওনেয়ারের সূচক অনুযায়ী, এই মুহূর্তে বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ ধনী ভারতের শিল্পপতি গৌতম আদানি। গত সপ্তাহে ব্লুমবার্গ বিশ্বের শীর্ষ ধনীর যে তালিকা প্রকাশ করেছে, তাতে স্পেসএক্সের ইলন মাস্ক ও অ্যামাজনের জেফ বেজোসের ঠিক পরেই আদানির অব্স্থান।
ধনসম্পত্তির বিচারে ভারতের এই শিল্পপতির অবস্থান এমনকি বিল গেটস, ওয়ারেন বাফেটের ওপরে। তার মালিকানাধীন আদানি শিল্পগোষ্ঠীর সাম্রাজ্য এখন আফ্রিকা থেকে অস্ট্রেলিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত। এমনকি বাংলাদেশেও রয়েছে তার বিনিয়োগ। সোমবার ভারত সফরের প্রথম দিনে গৌতম আদানির সাথে একটি বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বিজ্ঞাপন
কে এই আদানি?
ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় গুজরাটে ১৯৬২ সালে জন্ম গৌতম আদানির। ব্লুমবার্গ লিখেছে, গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য বিভাগের ছাত্র ছিলেন তিনি। কিন্তু পড়াশুনা শেষ করেতে পারেননি। ব্যবসা বাণিজ্যের মাধ্যমেই অঢেল সম্পদ গড়েছেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
আদানি গ্রুপের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, তার মোট সম্পদের পরিমাণ ২৪২ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। আদানি গ্রুপের অধীনে রয়েছে মোট সাতটি কোম্পানি রয়েছে।
বন্দর ব্যবস্থাপনা, কয়লা উৎপাদন এবং কয়লার ব্যবসা, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সঞ্চালন, গ্যাস সরবরাহ, সড়ক ও রেলপথ নির্মাণ, প্রতিরক্ষা ও মহাকাশ সরঞ্জাম উৎপাদন, বিমানবন্দর পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা, আমদানি রপ্তানি পণ্য পরিবহন, আবাসন, ভোজ্যতেল, খাদ্যপণ্য এরকম নানা খাতে ব্যবসা রয়েছে কোম্পানিটির।
আর এসব ব্যবসা শুধু ভারতে নয় আদানি গ্রুপ বিশ্বব্যাপী তার শিল্প সম্রাজ্য গড়ে তুলেছে।
বাংলাদেশে আদানির ব্যবসা কী?
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে গৌতম আদানির নাম বেশ গুরুত্বের সাথে উঠে এসেছে। সফরের প্রথম দিন সোমবার সন্ধ্যার দিকে আদানি শিল্পগোষ্ঠীর মালিক গৌতম আদানির সাথে বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৈঠকের পরপরই আদানি এক টুইট বার্তায় লিখেছেন, ‘আমরা ২০২২ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের মাঝে আমাদের ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট গোড্ডা বিদ্যুৎ প্রকল্প এবং ট্রান্সমিশন লাইন চালু করতে বদ্ধপরিকর।’
যদিও এই বিদ্যুৎ বাংলাদেশ এখনো পেতে শুরু করেনি। কিন্তু এরই মধ্যে বাংলাদেশের কাছ থেকে সার্ভিস চার্জ বাবদ অর্থ পেতে শুরু করেছে আদানির প্রতিষ্ঠান। এ নিয়ে এক ধরনের বিতর্কও আছে।
ভারতের ঝাড়খন্ডে নির্মাণাধীন কোম্পানিটির গোড্ডা বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে আলাদা সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে সেখানে উৎপাদিত বিদ্যুতের প্রায় পুরোটাই বাংলাদেশে রপ্তানি করার কথা রয়েছে। ২০১৫ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের সময় এই বিদ্যুৎ প্রকল্পের বিষয়টি নিয়ে কথাবার্তা হয়।
নরেন্দ্র মোদির সাথে গৌতম আদানির বিশেষ সখ্যের কথা ভারতীয় এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে নানাভাবে উঠে এসেছে। ২০১৭ সালে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহের বিষয়ে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডর সাথে চুক্তি হয়।
চলতি বছরের এপ্রিলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের সাথে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে একটি বিশেষ ভারতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরির চুক্তি করে আদানি গ্রুপের সাবসিডিয়ারি কোম্পানি আদানি পোর্টস। যেখানে ভারতীয় কোম্পানির পণ্য প্রাধান্য পাবে।
গত কয়েক বছরে আদানি শিল্পগোষ্ঠী যেভাবে বাংলাদেশের ঘরে ঘরে ঢুকে পড়েছে- তা প্রায় অভাবনীয়। বাংলাদেশের বাজারে মোড়কজাত সয়াবিন তেলের বড় বিক্রেতা আদানি গ্রুপ। বাংলাদেশ এডিবল অয়েল লিমিটেডের সয়াবিন তেল ব্র্যান্ড রূপচাঁদার নাম হয়ত শুনেছেন। বাংলাদেশ এডিবল অয়েল লিমিটেডের যৌথ মালিক ভারতের আদানি গ্রুপ এবং সিঙ্গাপুরের উইলমার ইন্টারন্যাশনাল গ্রুপ।
আদানির কয়লা খনি ঘিরে বিতর্ক
অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডে কারমাইকেল কোল মাইন নামের একটি কয়লা খনির মালিক আদানি গ্রুপ। ভারতসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে কয়লা পৌঁছে দেওয়ার জন্য কাজ করছে আদানি অস্ট্রেলিয়া।
কিন্তু প্রায় আড়াই লাখ স্কয়ার কিলোমিটার জায়গাজুড়ে অবস্থিত খনিটি পরিবেশবাদীদের সমালোচনার কারণে বিতর্কিত হয়ে উঠেছে। অস্ট্রেলিয়াতে কোম্পানিটির বিরুদ্ধে পরিবেশবাদীরা ব্যাপক আন্দোলন করেছে।
এমনকি সেখানে ‘স্টপ আদানি’ নামে একটি ক্যাম্পেইন রয়েছে যার সদস্য সংখ্যা বিপুল। বিশ্বের আরও অনেক দেশের এই ক্যাম্পেইনের সমর্থক রয়েছে। কারমাইকেল খনির প্রভাবকে কেন্দ্র করে পরিবেশবাদীরা অস্ট্রেলিয়ান সরকারকে আদালতের কাঠগড়ায় পর্যন্ত দাঁড় করিয়েছে।
এই আন্দোলন ও মামলা নিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বিস্তর খবর প্রকাশিত হয়েছে। কয়লাকে মনে করা হয় পরিবেশের জন্য সবচাইতে ক্ষতিকর জ্বালানি এবং পশ্চিমা বহু দেশ কয়লা ব্যাবহার থেকে সরে এসেছে।
ইন্দোনেশিয়াতেও কয়লা উৎপাদন করে কোম্পানিটি। আফ্রিকার তানজানিয়া, ভিয়েতনাম ও শ্রীলঙ্কায় বন্দর উন্নয়নের দায়িত্বে রয়েছে এই গ্রুপ। মধ্যপ্রাচ্যে ও আফ্রিকাতে নবায়নযোগ্য জ্বালানী খাতে অন্য একটি কোম্পানির সাথে যৌথভাবে কাজ করছে আদানি গ্রুপ। বিবিসি বাংলা।
এসএস