ইন্দোনেশিয়া: ফুটবল মাঠে মৃতদের ৩২ জন শিশু
ইন্দোনেশিয়ায় ফুটবল মাঠে পদদলিত হয়ে ১২৫ জন মারা গেছে। এদের মধ্যে ৩২ জনই শিশু। এর আগে প্রাণ হারানো শিশুদের সংখ্যা ১৭ বলে জানানো হয়েছিল। কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে সোমবার (৩ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত শনিবার রাতে ঘটা এই ঘটনাকে বিশ্বে সবচেয়ে খারাপ স্টেডিয়াম বিপর্যয়গুলোর মধ্যে একটি হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। মর্মান্তিক এই বিপর্যয় ঠিক কীভাবে ঘটল তা ব্যাখ্যা করার জন্য দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটির ওপর কার্যত চাপ তৈরি হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
রয়টার্স বলছে, সহিংসতা এবং গুন্ডামি দীর্ঘদিন ধরে ইন্দোনেশিয়ার ফুটবলের বৈশিষ্ট্য, বিশেষ করে রাজধানী জাকার্তার মতো জায়গায় এটি বেশ সাধারণ। কিন্তু জাভাতে একটি ছোট শহরে শনিবারের ওই বিপর্যয় আসলে পুরো সমস্যাকেই সামনে তুলে এনেছে।
শনিবারের ওই ঘটনায় স্টেডিয়ামে খেলা দেখতে গিয়ে মারা যান ১৫ বছর বয়সী আহমেদ কাহিও এবং ১৪ বছর বয়সী মুহাম্মদ ফারেল। এই দু’জনের বড় বোন এন্ডাহ ওয়াহিউনি বলছেন, ‘আমার পরিবার এবং আমি কখনোই ভাবিনি যে- এমন কোনো ঘটনা ঘটবে।’
বিজ্ঞাপন
রোববার তার ভাইদের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার সময় তিনি বলেন, ‘তারা ফুটবল পছন্দ করত, কিন্তু আরেমা ক্লাবের খেলা কখনোই কাঞ্জুরুহান স্টেডিয়ামে সরাসরি দেখেনি, এটিই ছিল তাদের প্রথমবার খেলা দেখতে যাওয়া।’
ইন্দোনেশিয়ার নারী ক্ষমতায়ন ও শিশু সুরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান উদ্ধৃত করে দেশটির রাষ্ট্রীয় বার্তাসংস্থা অন্তরা জানিয়েছে, শনিবারের ঘটনায় ১৭ শিশু নিহত হয়েছে। ওই ৩২ জনের মধ্যে এন্ডাহ ওয়াহিউনির দুই ভাইও রয়েছে।
এর আগে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা নাহার জানিয়েছিলেন, ‘১৭ শিশু মারা গেছে এবং সাতজনকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তবে এটি (হতাহতের সংখ্যা) আরও বাড়তে পারে।’
পরে জানানো হয়, নিহত শিশুদের সংখ্যা বেড়ে ৩২ জনে দাঁড়িয়েছে। নারী ক্ষমতায়ন ও শিশু সুরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা নাহার রয়টার্সকে জানিয়েছেন, নিহত শিশুদের বয়স ৩ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে।
ইন্দোনেশিয়ান দৈনিক কোরান টেম্পো সোমবার তাদের পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠা কালো রংয়ে বের করেছে। সেখানে ‘আমাদের ফুটবল ট্র্যাজেডি’ লিখে মৃতদের তালিকা লাল রঙে মুদ্রিত হয়েছে।
রয়টার্স বলছে, হোম সাইড আরেমা এফসি ওই ম্যাচটি তাদের দীর্ঘদিনের প্রতিদ্বন্দ্বী পার্সেবায়া সুরাবায়ার কাছে ৩-২ গোলে হেরে যায়। যদিও কর্তৃপক্ষ বলেছিল, নিরাপত্তার কারণে পার্সেবায়ার ভক্তদের টিকিট দেওয়া হয়নি।
বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা বলেছে, এই ঘটনাটি ‘সকলের জন্য একটি অন্ধকার দিন’। একইসঙ্গে ইন্দোনেশিয়ার ফুটবল কর্তৃপক্ষের কাছে এই ঘটনার একটি প্রতিবেদনও চেয়েছে সংস্থাটি।
ফিফার নিরাপত্তা নীতি অনুযায়ী, ম্যাচের সময় মাঠে আগ্নেয়াস্ত্র বা ‘ভিড় নিয়ন্ত্রণ গ্যাস’ ব্যবহার করা উচিত নয়।
নিউইয়র্কভিত্তিক হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ডেপুটি এশিয়া ডিরেক্টর ফিল রবার্টসন সোমবার বলেছেন, ‘এই বিপর্যয়ের জন্য দায়ী সকলকেই তাদের পদ বা অবস্থান নির্বিশেষে জবাবদিহিতার আওতায় আনা উচিত।’
টিএম