খাসোগি মামলা থেকে দায়মুক্তির সুযোগ আছে সৌদি যুবরাজের
ছবি: রয়টার্স
ভিন্ন মতাবলম্বী সৌদি সাংবাদিক ও দেশটির রাজপরিবারের কঠোর সমালোচক জামাল খাসোগি খুনে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে যে মামলা চলছে, তা থেকে দায়মুক্তির সুযোগ এসেছে তার সামনে।
যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনের জেলা জজ আদালতে এই মামলার কার্যক্রম চলছে। সোমবার সেখানে যুবরাজের পক্ষের আইনজীবীরা একটি পিটিশন জমা দিয়েছেন। সেখানে বলা হয়েছে, যেহেতু সৌদি যুবরাজ এখন সৌদি আরবের প্রধানমন্ত্রীর পদে রয়েছেন এবং বর্তমানে তিনিই দেশটির সরকারপ্রধান, সুতরাং যুক্তরাষ্ট্রের প্রচলিত আইন অনুযায়ী নিজের পদাধিকারবলেই এই মামলা থেকে অব্যহতি পেতে পারেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
‘রাজকীয় আদেশের পর আর কোনো সন্দেহ থাকে না যে যুবরাজ তার মর্যাদা অনুযায়ী দায়মুক্তি পাওয়ার অধিকার রাখেন,’ পিটিশনে উল্লেখ করেন আইনজীবীরা।
পাশপাশি, অতীতে এই জাতীয় বিভিন্ন মামলায় আদালতের রায় পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে মামলাটি খারিজ করে দেওয়ার অনুরোধও জানিয়েছেন তারা।
বিজ্ঞাপন
২০১৮ সালে তুরস্কের সৌদি কনস্যুলেটে যখন হত্যা করা হয় খাসোগিকে, সেসময় দেশের উপপ্রধানমন্ত্রী ছিলেন মোহাম্মদ বিন সালমান। গত সপ্তাহে রাজকীয় এক ডিক্রি জারির মাধ্যমে তাকে দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ঘোষণা করেন তার পিতা ও সৌদি আরবের রাষ্ট্রপ্রধান বাদশাহ সালমান।
অবশ্য প্রধানমন্ত্রীর যেসব কাজ, আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধামন্ত্রীর পদ পাওয়ার আগে থেকেই মোহাম্মদ বিন সালমান সেসব দায়িত্ব পালন করে আসছেন বলে রয়টার্সকে জানিয়েছেন সৌদি সরকারের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা।
২০১৮ সালের ২ অক্টোবর বিয়ের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করতে ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটে গিয়ে নিখোঁজ হন খাসোগি। পরে জানা যায়, তাকে কনস্যুলেটের ভেতরেই হত্যা করে লাশ টুকরো টুকরো করে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর পক্ষ থেকে বলা হয়, ওই খুনের আদেশ স্বয়ং যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান দিয়েছেন বলে তাদের বিশ্বাস।
সিআইএর এই দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে তুরস্কের আইনশৃঙ্খলা ও গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলেছেন, এটি সত্য যে খাসোগিকে এজেন্টরাই হত্যা করেছে, কিন্তু এই হত্যার নির্দেশ এসেছিল সৌদি সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে।
খাসোগি হত্যাকাণ্ডে বিশ্বব্যাপী নিন্দার ঝড় উঠলে দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সৌদি যুবরাজের ভাবমূর্তি।
অবশ্য শুরুর দিকে সৌদি যুবরাজ খাসোগি হত্যায় নিজের সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করলেও পরে বলেছেন, তার অধীনে থাকা লোকজনই এ ঘটনার জন্য দায়ী।
ওয়াশিংটন পোস্টে লেখা কলামে সৌদি যুবরাজের বিভিন্ন নীতির কড়া সমালোচনা করা খাসোগি তার বাগদত্তা, তুর্কি নাগরিক হেতিস চেঙ্গিসকে বিয়ে করার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আনতে ২০১৮ সালের ২ অক্টোবর ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটে গিয়ে খুন হন।
যুক্তরাষ্ট্রে যুবরাজের বিরুদ্ধে যে মামলা চলছে, সেটি হেতিস চেঙ্গিস এবং খাশুগজির প্রতিষ্ঠিত একটি মানবাধিকার সংগঠন যৌথভাবে করেছে; মামলায় পশ্চিমা দেশগুলোতে এমবিএস নামে পরিচিত মোহাম্মদ বিন সালমানের কাছে অনির্দিষ্ট পরিমাণ ক্ষতিপূরণও চাওয়া হয়েছে।
মামলার যুবরাজ ছাড়াও আরও ২০ জনেরও অধিক সৌদি নাগরিককে আসামি করা হয়েছে। এবং মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, খাসোগি তার মানবাধিকার সংস্থাকে সৌদি আরবে ‘গণতান্ত্রিক সংস্কার ও মানবাধিকার নিয়ে কাজ করার প্ল্যাটফর্ম’ হিসেবে ব্যবহার করার পরিকল্পনা করছেন জানতে পেরে এমবিএস ও আসামির তালিকায় থাকা বাকিরা অন্যদের সঙ্গে নিয়ে ‘খাসোগিকে চিরতরে চুপ করিয়ে দেওয়ার’ ছক কষেন।
এ মামলার আসামির তালিকা থেকে মোহাম্মদ বিন সালমানের দায়মুক্তি আছে কিনা, আদালত সে বিষয়ে ৩ অক্টোবরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের আইন মন্ত্রণালয়ের অভিমত জানতে চান।
তার প্রতিক্রিয়ায় যুবরাজের প্রধানমন্ত্রীর পদে আসীন হওয়ার দিকে ইঙ্গিত করে ৩ অক্টোবর মার্কিন আইন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, যেহেতু পরিস্থিতে কিছুটা পরিবর্তন, তাই এ ব্যাপারে অভিমত জানাতে খানিকটা সময় চায় আইন মন্ত্রণালয়।
রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অভিমত জানাতে আইন মন্ত্রণালয় ৪৫ দিন সময় চেয়েছে।
সোমবার আইন মন্ত্রণালয়ের আবেদন মঞ্জুর করে ওয়াশিংটন জেলা জজ আদালতের বিচারক জন ডি. বেটস বলেন, পরবর্তীতে সাক্ষ্য-প্রমাণ সংগ্রজনিত প্রয়োজন ছাড়া এই ইস্যুতে আর বাড়তি সময় দেবেন না আদালত।
আইন মন্ত্রণালয়কে জবাব দেওয়ার জন্য আগামী ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত সময় ধার্য করেছেন বিচারক।
এসএমডব্লিউ