জুতা পরার সময় ব্রাজিলীয় হলুদ বিচ্ছুর কামড়ে সাতবার হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছে ব্রাজিলের সাত বছর বয়সী এক ছেলে শিশু। জুতার ভেতরে থাকা বিচ্ছুর কামড়ের পর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ২৫ অক্টোবর মারা যায় এই শিশু। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিপেনডেন্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্রাজিলীয় হলুদ বিচ্ছু টিটিয়াস সেরুলাটাস নামেও পরিচিত; যা অত্যন্ত বিষাক্ত প্রজাতির এক প্রাণী।

শিশুটির পরিবার গত ২৩ অক্টোবর ক্যাম্পিং ট্রিপের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল। ওই সময় জুতা পরতে গিয়ে পায়ে বিচ্ছুর কামড় অনুভব করে সে। শিশুটির মা অ্যাঞ্জেলিটা প্রোয়েনকা ফুর্তাদো ব্রাজিলের দৈনিক ও গ্লোবোকে এই তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, জুতার ভেতরে পা ঢোকানোর সাথে সাথে সে ব্যথায় চিৎকার করে ওঠে। তাকে কী কামড় দিয়েছে তা আমরা খুঁজে পাচ্ছিলাম না। আমরা আশপাশে খুঁজতে থাকি। কিন্তু তার পা লাল হতে শুরু করে এবং সে বলে, ব্যথা বাড়ছে। তখনই আমি কল্পনা করেছিলাম যে এটি আসলে বিচ্ছু ছিল। তবে এটি কোন প্রজাতির বিচ্ছু সেটি খুঁজে বের করা দরকার। 

পাঁচ মিনিট পর শিশুটির বাবা-মা ভয়ঙ্কর হলুদ বিচ্ছুটি সনাক্ত করতে সক্ষম হন। দেশটিতে টিটিয়াস সেরুলাটাসের কামড়ে প্রত্যেক বছর হাজার হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটে।

নিউইয়র্ক পোস্ট বলছে, শিশুটির বাবা-মা তাকে সাও পাওলো বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি অব মেডিসিন ক্লিনিক হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসায় তার অবস্থার উন্নতি হয়।

শিশুটির মা বলেন, তিনি সন্তানের সুস্থ হওয়ার সব আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমি হাসপাতালের কক্ষে প্রবেশ করে ছেলের মাথায় হাত রাখলাম, আমার পুরো হৃদয় দিয়ে তাকে তার প্রকৃত মালিকের কাছে সমর্পণ করলাম। আমি ঠিক এভাবেই বললাম, ঈশ্বর, সে তোমার। তাকে তোমার কাছে নিয়ে যাও। তার যত্ন নিও। আমার নয়, তোমার ইচ্ছা পূরণ হোক।’

কিন্তু পরবর্তীতে শিশুটির শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়। অ্যাঞ্জেলিটা বলেন, চিকিৎসকরা কিছু ওষুধও বন্ধ করে দিয়েছিলেন। সে তার চোখ খুলেছে এবং আমার সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছে। আমি তাকে চুমু খেয়েছিলাম এবং সে খুব উত্তেজিত ছিল। তাকে ওষুধ প্রয়োগ করে শান্ত করা হয়েছিল।

দুর্ভাগ্যজনকভাবে ছোট্ট এই শিশু সাতবার হৃদরোগে আক্রান্ত হয় এবং দু’দিন পর মারা যায়। অ্যাঞ্জেলিটা বলেন, তার জীবনের সবচেয়ে খারাপ মুহূর্ত সন্তানের এই চলে যাওয়া। ক্যাম্পিংয়ে যাওয়ার জন্য তার ছেলে খুব উদ্বিগ্ন ছিল। স্বাভাবিকভাবেই সে খুব উদ্বিগ্ন ছিল। তার মনে হচ্ছিল একদিনই বাঁচতে চায় সে। আজ আমি বুঝতে পারছি, যেন সত্যিই তার তাড়া ছিল।

ব্রাজিলের আনহেম্বির পৌর কর্মকর্তারা শিশুটির মর্মান্তিক এই প্রাণহানির ঘটনায় শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করেছেন। একই সঙ্গে তার পরিবারকে সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছেন। নিউইয়র্ক পোস্টের মতে, চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ব্রাজিলের এই শহরে কেবল বিচ্ছুর কামড়েই ৫৪ জনের প্রাণহানি ঘটে।

এসএস