পায়ে গুলিবিদ্ধ ইমরান খানকে লংমার্চের স্থান থেকে হাসপাতালে নেওয়া হয়

পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় পাঞ্জাবের ওয়াজিরাবাদ শহরে লংমার্চের সময় গুলিবিদ্ধ দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বর্তমানে ভালো আছেন। বৃৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যার দিকে ইমরান খানকে লক্ষ্য করে একে-৪৭ অস্ত্র থেকে গুলি চালায় এক হামলাকারী। এতে ইমরান খানের পায়ে অন্তত তিন থেকে চারটি গুলি বিদ্ধ হয়েছে। তবে তিনি আশঙ্কামুক্ত রয়েছেন বলে জানিয়েছেন দেশটির চিকিৎসকরা।

ইমরান খানকে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচিয়েছেন বছর তিরিশের এক যুবক। ঠিক সময়ে তিনি তৎপর না হলে নিহতও হতে পারতেন পিটিআই চেয়ারম্যান। ইমরান খানের প্রাণ বাঁচিয়ে প্রশংসায় ভাসা ওই যুবক এআরওয়াই নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমি দাঁড়িয়েছিলাম, হঠাৎ দেখলাম আমার থেকে ১০-১২ ফুট দূরে এক ব্যক্তি পিস্তল বের করে (ইমরান খানের দিকে) তাক করছে। এ সময় আমি ছুটে গিয়ে তাকে ধরে ফেলি।’

‘আমি (তার কাছে) পৌঁছানোর আগেই সে এক রাউন্ড গুলি করে ফেলেছে। তার কাছে পৌঁছে আমি প্রথমেই তার বন্দুক ধরা হাতটি ধরে ফেলি। এ সময় (হামলাকারী) যেসব গুলি ছুড়েছে সেগুলো একটাও আর ঠিক লক্ষ্যে আঘাত করতে পারেনি।’

তিনি বলেন, ‘তারপরই সে আমার হাত ছাড়িয়ে সামনের দিকে ছুটে পালানোর চেষ্টা করে। আমিও তার পিছু দৌড়ে কয়েক মিনিটের মধ্যেই ধরে ফেলতে সক্ষম হই, আলহামদুলিল্লাহ। তারপর পুলিশ তাকে আটক করে নিয়ে যায়।’

আরও পড়ুন : পাকিস্তানের বিপজ্জনক রাজনীতি 

সিসিটিভির ক্যামেরায়ও ধরা পড়েছে সেই মুহূর্তের ছবি। সেখানে বন্দুক হাতে দেখা যাচ্ছে হামলাকারীকে। তবে তার বন্দুকটির নল আকাশের দিকে তাগ করা। কারণ পেছন থেকে তার বন্দুক ধরা হাতটি টেনে ধরেছেন ওই যুবক। তার পরনে ছিল লাল-সাদা-নীল একটি টি-শার্ট।

পেছন থেকে হামলাকারীর হাতের বন্দুক ছিনিয়ে নিচ্ছেন পিটিআইয়ের এক কর্মী

পাকিস্তানের জিও টিভি বলছে, ওই বন্দুক থেকে মোট ছয় রাউন্ড গুলি চলেছে। তবে লক্ষ্যে আঘাত করেনি। লাগলে কেবল ইমরান নয়, আরও অনেকেরই প্রাণ যেতে পারত।

ওয়াজিরাবাদ শহরে লংমার্চের সময় ইমরান খানকে লক্ষ্য করে গুলি চালানো হামলাকারী পুলিশের কাছে দেওয়া ভিডিও বিবৃতিতে বলেছেন, ইমরান খান লোকজনকে বিভ্রান্ত করেছেন। যে কারণে তিনি ইমরান খানকে হত্যার চেষ্টা করেছেন।

‘ইমরান খান লোকজনকে বিভ্রান্ত করেছেন।  আমি তাকে সহ্য করতে পারছিলাম না। যে কারণে তাকে হত্যা করতে চেয়েছিলাম। তাকে হত্যার চেষ্টা করেছি।’

তিনি বলেন, ‘আমি ইমরান খানকে হত্যার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়েছি। আমি কেবল ইমরান খানকে হত্যা করতে চেয়েছিলাম। এছাড়া আমার আর কাউকে হত্যার উদ্দেশ্য ছিল না।’

হামলাকারী এই যুবক বলেন, ইমরান খান লাহোর ছেড়ে যাওয়ার পর থেকে হত্যার পরিকল্পনা করছিলেন তিনি। তবে এই হামলায় তার কোনও সহযোগী আছে কিনা জানতে চাইলে মাথা নাড়িয়ে নেতিবাচক জবাব দেন হামলাকারী। বলেন, ‘আমার সাথে আর কেউ ছিল না। আমি একাই ছিলাম।’

ইমরান খানের সহযোগী রউফ হাসান বলেন, ইমরান খানকে গুলি করা এক হামলাকারী নিহত হয়েছেন। অন্য একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি বলেন, এটা ছিল পুরোপুরি হত্যাচেষ্টা। তাকে গুপ্তহত্যার চেষ্টা করেছে। এক হামলাকারী গুলিতে নিহত হয়েছেন। অপরজনকে জিম্মায় নিয়েছে পুলিশ।

আরও পড়ুন : পাকিস্তান : কান্ট্রি অব থ্রি ‘এ’ 

পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদ থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরে পাঞ্জাব প্রদেশের ওয়াজিরাবাদে এই হামলার ঘটনা ঘটেছে। সাবেক ক্রিকেট তারকা থেকে রাজনীতিক বনে যাওয়া ৭০ বছর বয়সী ইমরান খান দেশটিতে আগাম নির্বাচনের দাবিতে লংমার্চ পালন করে আসছেন।

বৃহস্পতিবার ওয়াজিরাবাদের লংমার্চে হাজার হাজার পিটিআই কর্মী-সমর্থক উপস্থিত ছিলেন। পিটিআইয়ের মুখপাত্র ফাওয়াদ চৌধুরী বলেছেন, একটি গুলি ইমরান খানের পায়ের পাতায় লেগেছে।

রয়টার্সকে তিনি বলেন, ইমরান খান এবং (দলীয় সহকর্মী) ফয়সাল জাভেদ গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। একটি গুলি ইমরান খানের পায়ের পাতায় লেগেছে। দু’জনকেই চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।

জিও টিভির এক ভিডিওতে দেখা যায়, পিটিআইয়ের কর্মী জাভেদের কাপড়ে রক্তের দাগ লেগে আছে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন পিটিআইয়ের এই কর্মী বলেন, আমাদের কয়েকজন সহকর্মীও আহত হয়েছেন। আমরা শুনেছি, আহতদের একজন মারা গেছেন। 

চলতি বছরের এপ্রিলে পাকিস্তানের সংসদে অনাস্থা ভোটে হেরে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ক্ষমতাচ্যুত ইমরান খান। ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে পাকিস্তানজুড়ে সমাবেশ করেছেন তিনি।

এসএস