মিয়ানমার জান্তা সরকারে ইসরায়েলি লবিস্ট
ইসরায়েলের সাবেক এক গোয়েন্দা কর্মকর্তাকে লবিস্ট হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা সরকার। বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়ে লিখেছে, পশ্চিমে নিজেদের পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি তুলে ধরা ও সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষমতাধর দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা করাই হবে তার কাজ।
রয়টার্স জানিয়েছে, জান্তা সরকারে নিয়োগ পাওয়া লবিস্ট আরি বেন-মেনাশে ইসরায়েলের সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা। একইসঙ্গে তিনি কানাডারও নাগরিক। মেনাশে বলেছেন, জেনারেলরা রাজনীতি ছাড়তে আগ্রহী। তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন ঘটাতে চায়। একইসঙ্গে চীনের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ানোর ইঙ্গিতও দিয়েছেন তারা।
বিজ্ঞাপন
যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য যেসব দেশ জেনারেলদের ‘ভুল বুঝেছে’ তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার জন্য মেনাশে ও তার প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
জিম্বাবুয়ের সাবেক প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবে এবং সুদানের সেনাশাসকদের হয়ে লবিস্টের কাজ করা আরি বেন-মেনাশে নামে ইসরায়েলের সাবেক ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তা আরও বলেছেন, প্রতিবেশী বাংলাদেশে গিয়ে আশ্রয় নেওয়া সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারেও মিয়ানমারের জেনারেলরা আগ্রহী।
বিজ্ঞাপন
রোহিঙ্গা মুসলিমদের দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারেও মিয়ানমারের জেনারেলরা আগ্রহী বলে জানিয়েছেন লবিস্ট আরি বেন-মেনাশে।
রোববার বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক টেলিফোন সাক্ষাৎকারে বেন-মেনাশে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য যেসব দেশ মিয়ানমারের জেনারেলদের ‘ভুল বুঝেছে’ তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার জন্য তিনি এবং তার প্রতিষ্ঠান ডিকেন্স অ্যান্ড ম্যাডসন কানাডাকে নিয়োগ দিয়েছে মিয়ানমারের জান্তা সরকারের জেনারেলরা।
তিনি আরও বলেছেন, জেনারেলদের চাওয়া অনুযায়ী ২০১৬ সাল থেকে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ট করে তুলেছেন মিয়ানমারের প্রকৃত নেতা (ডি-ফ্যাক্টো লিডার) অং সান সু চি।
চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের বিরোধিতা করে পশ্চিমা দেশ বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে জেনারেলরা আগ্রহী।
বেন-মেনাশে বলছেন, চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের বিরোধিতা করে পশ্চিমা দেশ বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে আরও আগ্রহী মিয়ানমারের জেনারেলরা। তারা আর চীনের পুতুল শাসক থাকতে চাচ্ছে না।’
উল্লেখ্য, অভ্যুত্থানের পর এর বিরোধিতা ও তীব্র নিন্দা জানানোর পাশপাশি বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের প্রশাসন মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও সেনানিয়ন্ত্রিত ব্যবসায়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
বেন-মেনাশে বলেন, তিনি দক্ষিণ কোরিয়া থেকে কথা বলছেন। এর আগে তিনি মিয়ানমারের রাজধানী নেপিদো সফর করেছেন। সেখানে জান্তা সরকারের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেনারেল মিয়া তুন ওউ এর সঙ্গে একটি চুক্তিতে সই করেন। সামরিক বাহিনীর ওপর থেকে যদি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয় তাহলে তাকে অর্থ দেবে জেনারেলরা।
রয়টার্স এ বিষয়ে জানতে মিয়ানমারের জান্তা সরকারের এক মুখপাত্রকে ফোন করলে কোনো সাড়া পায়নি। এছাড়া বিষয়টি নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েরর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাৎক্ষণিক জবাব আসেনি।
জান্তা সরকার নাকি প্রমাণ করতে পারবে যে গত নভেম্বরের নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে এবং সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর মানুষ ভোট দিতে পারেনি।
বেন-মেনাশে আরও জানিয়েছেন, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তন নিয়ে সামরিক বাহিনীর পরিকল্পনার ওপর সমর্থন পেতে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে যোগাযোগ করার দায়িত্বও তাকে দেওয়া হয়েছে।
বেন-মেনাশের ভাষ্য অনুযায়ী জান্তা সরকার নাকি প্রমাণ করতে পারবে যে গত নভেম্বরের নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে এবং সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর মানুষ ভোট দিতে পারেনি। তবে তিনি এর পক্ষে কোনো প্রমাণ দেননি।
অভ্যুত্থানের পর থেকে দুইবার তিনি মিয়ানমার সফর করেছেন। এবং তিনি দেখেছেন যে দেশব্যাপী কোনো ধরনের বিক্ষোভ হচ্ছে না এবং অভ্যুত্থানবিরোধী এই বিক্ষোভে মিয়ানমারের মানুষের সমর্থন নেই।
তিনি আরও বলেছেন, বিক্ষোভ প্রতিরোধের কাজ পুলিশ করছে সামরিক বাহিনী নয়। অবশ্য ছবি ও ভিডিও ফুটেজে বিক্ষোভ সশস্ত্র সেনা সদস্যদের ঘুরতে দেখা গেছে। এছাড়া দেশটিতে প্রতিদিনই বিক্ষোভ হচ্ছে। সম্প্রতি দেশজুড়ে বিক্ষোভে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে একদিনে কমপক্ষে ৩৮ জন বিক্ষোভকারী নিহত হন।
জাতিসংঘের দেওয়া সবশেষ হিসাব অনুযায়ী গত এক ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের পর অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে অর্ধশতাধিক বিক্ষোভকারী প্রাণ হারিয়েছেন।
এএস