আন্তর্জাতিক নারী দিবসে ভারতে চলমান কৃষক আন্দোলনে যোগ দিয়ে সমর্থন জানিয়েছেন হাজার হাজার নারী। বিতর্কিত তিন কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে গত নভেম্বর থেকে ভারতের রাজধানী দিল্লির তিন সীমান্তবর্তী এলাকা সিঙ্ঘু, তিকরি ও গাজিপুরে শুরু হওয়া কৃষক সমাবেশে সোমবার তারা উপস্থিত হন।

বার্তাসংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৮ মার্চ শুধু তিকরির সমাবেশেই উপস্থিত ছিলেন ২০ হাজারেরও বেশি নারী। অন্যরা যোগ দিয়েছেন সিঙ্ঘু ও গাজিপুরের কৃষক সমাবেশে।

যেসব নারী তিকরির সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন, তাদের সবারই মাথা ও শরীর ঢাকা ছিল হলুদ রঙের ওড়নায়। পাঞ্জাব থেকে আসা বীনা (৩৭) নামের এক নারী আন্দোলনকারী রয়টার্সকে বলেন, পাঞ্জাব রাজ্যের অন্যতম প্রধান ফসল সর্ষে। সেই সর্ষে ক্ষেতের প্রতীক হিসেবেই তারা হলুদ রঙের ওড়না বেছে নিয়েছেন।

বীনা বলেন, ‘আজ একটি বিশেষ দিন; কারণ এই দিনটি নারী শক্তির প্রতিনিধিত্ব করে। আমরা বিশ্বাস করি, যদি আমরা নারীরা ঐক্যবদ্ধ হতে পারি, তাহলে আমরা আরও দ্রুত নিজেদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব।’

সোমবার সিঙ্ঘু, তিকরি ও গাজিপুরের কৃষক সমাবেশে পুরুষ বিক্ষোভকারীদের অব্যাহতি দিয়ে মঞ্চে অবস্থানসহ সব ধরনের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নারীরা নিজেরাই হাতে তুলে নেন। এ কারণে তিন কৃষক সমাবেশে দিনভর ছিল এক অন্যচিত্র।

সারাদিন ধরে তিন সীমান্তে কৃষি আইন প্রত্যাহারকে কেন্দ্র করে যা যা ঘটে— ভাষণ, স্লোগান, দেশাত্মবোধক গান শোনানোর পাশাপাশি লঙ্গরখানা পরিচালনা, নিরাপত্তাসহ সব দায়িত্বই পালন করেন কৃষক পরিবারের নারীরা।

তাদের সঙ্গে যোগ দেন বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী ও ছাত্র সংগঠনের নারী সদস্যরাও, যারা কৃষকদের এই আন্দোলনকে শুরু থেকে সমর্থন করে আসছেন। দিল্লি সীমান্তে আন্তর্জাতিক নারী দিবস আক্ষরিক অর্থেই হয়ে ওঠে অর্থবহ।

কৃষি আইনবিরোধী আন্দোলনকর্মী কবিতা কুরুগান্তি রয়টার্সকে জানান, আন্দোলনরত কৃষক সংগঠনগুলোর ঐক্যমঞ্চ সংযুক্ত কিষান মোর্চার নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেই এই কর্মসূচি নির্ধারণ করেছিলেন তারা।

তিনি বলেন, ‘ভারতে কৃষিকাজে নারী-পুরুষ উভয়ই শ্রম দেয়। সরকার সম্প্রতি যে আইন করেছে, তাতে ভারতের বিপুল সংখ্যক প্রান্তিক নারী কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। সংযুক্ত কিষান মোর্চার নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা করেই এই কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।’

‘তাছাড়া ভারতের কৃষি উৎপাদনে নারীদের যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে, তা জাতির সামনে আরও একবার তুলে ধরার সুযোগও করে দিয়েছে কৃষক সমাবেশে আমাদের উপস্থিতি’— বলেন কবিতা কুরুগান্তি।

২০২০ সালের ২০ সেপ্টেম্বর দেশের কৃষি ব্যবস্থার সংস্কারে ভারতের পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় তিনটি বিল উত্থাপন করে বিজেপি সরকার।

বিলগুলোতে কৃষিপণ্যের মজুতদারীর ওপর সীমা তুলে নেওয়া, কোম্পানি ও বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে চুক্তিভিত্তিক চাষ এবং উৎপাদিত কৃষি পণ্যের সরকার নির্ধারিত ন্যূনতম সহায়ক মূল্য (মিনিমাম সাপোর্ট প্রাইস—এমএসপি) তুলে নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়।

সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে রাষ্ট্রপতি স্বাক্ষরের মাধ্যমে ওই বিল তিনটি আইনে পরিণত হয়। নভেম্বর থেকে এই আইনগুলো বাতিলের দাবিতে দিল্লির সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর কয়েক লাখ কৃষক।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যদিও বলেছেন, দেশের বিস্তৃত ও মান্ধাতার আমলের কৃষি ব্যাবস্থাকে ঢেলে সাজানো ও আধুনিকায়নই নতুন তিন কৃষি আইনের উদ্দেশ্য, কিন্তু তার এই বক্তব্যে আস্থা রাখতে পারছেন না কৃষকরা।

সূত্র: রয়টার্স

এসএমডব্লিউ