যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো জোট আফগানিস্তান থেকে তাদের সৈন্যদের সরিয়ে নিলে পুরো দেশজুড়ে তালেবানরা দ্রুত সামরিক শক্তি অর্জন করে আরও বেশি আক্রমণাত্মক হয়ে উঠতে পারে বলে সতর্ক করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন। আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি বরাবর সম্প্রতি এক চিঠিতে এই সতর্কবার্তা দিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

অ্যান্টনি ব্লিনকেনের ওই চিঠির একটি অনুলিপি পেয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। চিঠিতে তিনি আগামী ৯০ দিনের মধ্যে আফগানিস্তানে সহিংসতা কমিয়ে আনার আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্টের প্রতি।

পাশাপাশি একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানোর জন্য জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে একটি নতুন আন্তর্জাতিক শান্তি প্রক্রিয়া শুরু করারও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। দেশটির নিরাপত্তা পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ার আগেই জরুরি ভিত্তিতে এই পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেছেন ব্লিনকেন।

চিঠিতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানানো হবে—সংস্থাটি যেন আফগানিস্তান সরকার, রাষ্ট্রদূত এবং কয়েকটি দেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠকে বসে। সেখানে তালেবান প্রতিনিধিরাও থাকবেন। উচ্চ পর্যায়ের এই বৈঠকের সম্ভাব্য স্থান হতে পারে তুরস্ক। রাশিয়া, চীন, পাকিস্তান, ইরান, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা বৈঠকে থাকতে পারবেন।’

বিবিসির প্রধান আন্তর্জাতিক সংবাদদাতা লিস ডুসেট বলেছেন, চিঠিতে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘতম যুদ্ধের শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য ওয়াশিংটনের প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

বিবিসির সংবাদদাতা আরও জানান, সৈন্য সরিয়ে নেয়ার ফলে গৃহযুদ্ধের শঙ্কা ও আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের পতন এড়াতেই প্রেসিডেন্ট গনি এবং তালেবানদের উপর চাপ বাড়িয়ে দিচ্ছেন ব্লিংকেন।

২০০১ সালে আফগানিস্তান আক্রমণ করে দেশটির তৎকালীন ক্ষমতাসীন তালেবান সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয় মার্কিন ও ন্যাটো নেতৃত্বাধীন সেনাবাহিনী। যুক্তরাষ্ট্রে ৯/১১ সন্ত্রাসী হামলার প্রতিক্রিয়ায় ওই সামরিক অভিযান চালানো হয়েছিল।

তারপর থেকে আফগানিস্তানে অবস্থান করছে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো বাহিনীর ২৫০০ টি সেনা ট্রুপ। এই ট্রুপগুলোর সেনা সদস্যদের প্রত্যাহার করে নিতে তালেবান নেতাদের সঙ্গে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে চুক্তি করেছিল যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন মার্কিন প্রশাসন।

চুক্তিতে তালেবানদের ওপর শর্ত আরোপ করা হয়েছিল— তারা নিজেদের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকাগুলোয় আল-কায়েদা বা অন্যান্য জঙ্গিদের ভিড়তে দেবে না; এবং জাতীয় শান্তি আলোচনার প্রক্রিয়া এগিয়ে নেবে।

যদি তালেবান তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে তবে যুক্তরাষ্ট্র এবং ন্যাটো পরবর্তী ১৪ মাসে, অর্থাৎ ২০২১ সালে ১ মের মধ্যে সমস্ত সেনা প্রত্যাহার করে নেবে বলে উল্লেখ করা হয়েছিল চুক্তিতে। আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে, ওই চুক্তিতে ট্রাম্প প্রশাসন মূলত আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারকেই অগ্রাধিকার দিয়েছিল।

কিন্তু পরিস্থিতি কিছুটা বদলে যায় যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর; অর্থাৎ ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নেতা জো বাইডেন দেশটির নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণের পর। চলতি বছর জানুয়ারিতে বাইডেন প্রশাসন জানায়— ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট থাকাকালে তালেবানের সাথে যে শান্তি চুক্তি হয়েছিল, সেটি পুনরায় পর্যালোচনা করা হচ্ছে।

সম্প্রতি হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সেনা প্রত্যাহরের আগে মার্কিন প্রশাসন নিশ্চিত হতে চায় যে আফগান জঙ্গিগোষ্ঠী তাদের ‘প্রতিশ্রুতি’ অনুসারে কাজ করছে কিনা। বিশেষ করে সহিংসতা হ্রাস এবং সন্ত্রাসীদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার প্রতিশ্রুতি তারা কতদূর রক্ষা করেছে।

যদিও ওই চুক্তির পর থেকে কট্টরপন্থী ইসলামী গোষ্ঠী তালেবান আন্তর্জাতিক সেনাবাহিনীর উপর হামলা চালানো বন্ধ করেছে, তবে আফগানদের বিরুদ্ধে তাদের লড়াই অব্যাহত আছে। দেশটিতে সহিংসতার মাত্রা এখন অনেক বেশি - সাংবাদিক, অধিকারকর্মী , রাজনীতিবিদ এবং নারী বিচারকদের লক্ষ্য করে হত্যা করা হচ্ছে সেখানে।

২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে কাতারের রাজধানী দোহায় আফগানিস্তান সরকার ও তালেবান প্রতিনিধিদের মধ্যে শান্তি আলোচনা শুরু হয়, তবে এখনও ওই আলোচনায় বড় ধরনের কোনও অগ্রগতি হয়নি। বর্তমানে স্থগিত অবস্থায় রয়েছে ওই আলোচনা।

এই প্রেক্ষাপটে শনিবার আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি জঙ্গি সংগঠনটিকে সহিংসতা ত্যাগ করে নতুন করে আলোচনা বসার আহ্বান জানিয়েছেন।

সূত্র: বিবিসি

এসএমডব্লিউ