আমাকে মানুষের কাছে যেতেই হবে: মমতা
নির্বাচনী প্রচারণায় গিয়ে আহত হয়ে হাসপাতালে দুইদিন থাকার পর ছাড়া পেয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা চিকিৎসকদের পরামর্শ পুরোপুরি না মেনেই সোমবার থেকে আবারও নির্বাচনী প্রচারে নামার ঘোষণা দিয়েছেন। সব ঠিকঠাক থাকলে তার সফর শুরু হবে ঝাড়গ্রাম জেলা থেকে। তবে তিনি চলাফেরা করবেন হুইল চেয়ারে।
আগামী সোমবার থেকে আবারও নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর আগে রোববার নন্দীগ্রাম দিবসে (১৪ মার্চ) বাড়ি থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করবেন মমতা। গত বৃহস্পতিবার ইশতেহার প্রকাশের কথা ছিল। কিন্তু তার আকস্মিক দুর্ঘটনায় কর্মসূচির পরিবর্তন করতে হয়। উল্লেখ্য, মমতা নন্দীগ্রামেই আহত হয়েছিলেন।
বিজ্ঞাপন
এসএসকেএম হাসপাতাল থেকে শুক্রবার সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। গত বুধবার নন্দীগ্রামে মনোনয়ন জমা দেওয়ার পরে কেন্দ্র সফরের সময় অজ্ঞাত চার-পাঁচ ব্যক্তির ধাক্কায় বাঁ পায়ে গুরুতর আঘাত পেয়েছিলেন তিনি। আঘাত লাগে শরীরের আরও কয়েকটি জায়গায়। দ্রুত সেখান থেকে তাকে আনা হয় কলকাতায়।
পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসকরা আঘাত লাগা পায়ে প্রাথমিক প্লাস্টার করেছিলেন। সেই প্লাস্টার খুলে শুক্রবার ফের পরীক্ষার পরে আরও একটি প্লাস্টার করা হয়। দেওয়া হয় বিশেষ ধরনের ‘প্লাস্টার শ্যু’।
বিজ্ঞাপন
চিকিৎসকেরা আরও ৪৮ ঘণ্টা তাকে হাসপাতালে রাখতে চেয়েছিলেন। অন্তত ৭ দিন বিশ্রামের পরামর্শ দিলেও মমতা কিছুটা জোর করেই বাড়ি ফিরে যান। তাকে ৭ দিনের মাথায় ফের পরীক্ষা করার কথা চিকিৎসকদের।
হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে শুক্রবার বাড়ি ফিরে তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী বলেন, ‘আঘাত, যন্ত্রণা সবকিছুর পরেও বলছি, মানুষের কাছে গিয়ে আমাকে দাঁড়াতেই হবে। কারণ নির্বাচন একটি বড় রাজনৈতিক সংগ্রাম। সেখানে মানুষই আমার শক্তি। তাই নিজের কষ্টের থেকে মানুষের সামনে পৌঁছনো আমার কাছে বেশি জরুরি।’
পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আপাতত হুইল চেয়ার ব্যবহার করতে হবে মমতাকে। বন্দোবস্ত করা হয়েছে দুটি হুইল চেয়ারের। একটি তার গাড়ির সিট খুলে সেখানে বসানো হবে। ওই হুইলচেয়ারেই তিনি ঢালু পথ বেয়ে উঠবেন হেলিকপ্টার বা বিমানে। মঞ্চে ওঠার জন্য একই ভাবে থাকবে ঢালু পথ। হুইলচেয়ারে বসেই বক্তৃতা করবেন।
এছাড়া নির্বাচনী সফরের সময় বিভিন্ন জেলায় যেসব হোটেল বা গেস্ট হাউসে তিনি রাত্রিযাপন করবেন, সেখানেও প্রয়োজনীয় বন্দোবস্ত রাখা হবে। কালীঘাটের বাড়িতে তার থাকার ঘরটি অপ্রশস্ত। সেই ঘরেই একটি হুইলচেয়ার তার শয্যার সমান সমান উচ্চতায় রাখা হয়েছে, যাতে চেয়ার থেকে খাটে ওঠা একটু সহজ হয়।
আঘাতের কারণে শুক্র ও শনিবারের নির্বাচনী কর্মসূচি বাতিল করতে হয়েছে মমতাকে। সোমবার তার সভা করার কথা ঝাড়গ্রামের লালগড় ও গোপীবল্লভপুরে। পরদিন মঙ্গলবার তিনি পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতা, কেশিয়াড়ি ও খড়্গপুর গ্রামীণ বিধানসভা কেন্দ্রে পৃথক তিনটি সভা করবেন বলে ঠিক করা রয়েছে।
মমতা বন্দোপাধ্যায় সাধারণত মঞ্চে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে বক্তৃতা করতে অভ্যস্ত নন। বরং হাতে মাইক নিয়ে মঞ্চের এ মাথা থেকে মাথা হেঁটে বক্তৃতা করাই তার অভ্যাস। তবে এখন হুইল চেয়ার ছাড়া উপায় নেই।
এ প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করা হলে মমতা শুক্রবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘নিজের সুবিধা-অসুবিধার কথা ভাবার সময় এখন নয়। আমি বিশ্বাস করি, যাদের সামনে যাবো, সেই জনতার সহযোগিতা পাব। এটাই সবচেয়ে বড় পাওয়া।
সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা
এএস