তৃণমূলে যোগ দিলেন বিজেপিদলীয় ভারতের সাবেক অর্থমন্ত্রী
পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের আগে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের দল তৃণমূল কংগ্রেস থেকে নরেন্দ্র মোদির বিজেপিতে যোগদানের হিড়িক চলছে। কিন্তু বিজেপিদলীয় ভারতের সাবেক অর্থমন্ত্রী যশোবন্ত সিনহার হাত ধরে উল্টো ঘটনা ঘটলো এবার। শনিবার তিনি তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন। খবর এনডিটিভি অনলাইনের।
শনিবার দুপুরে কলকতায় তৃণমূল কংগ্রেসের মূল কার্যালয় তৃণমূল ভবনে যোগদানের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন যশোবন্ত সিনহা। দলের অন্যতম জ্যেষ্ঠ নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন, সুদীপ বন্দোপাধ্যায় ও সুব্রত মুখোপাধ্যায় এ সময় উপস্থিত ছিলেন। দলে যোগ দেওয়ার আগে তৃণমূল সভানেত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের বাড়িতে গিয়ে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন যশোবন্ত।
বিজ্ঞাপন
যোগদানের আনুষ্ঠানিকতা শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বিজেপির সাবেক এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, ‘দেশ এখন এক ক্রান্তিকাল পার করছে। যে মূল্যবোধগুলোর ওপর ভিত্তি করে আমাদের দেশ, সংস্কৃতি দাঁড়িয়ে আছে, বর্তমানে সেগুলোর টালমাটাল অবস্থা। বিচারব্যবস্থাসহ দেশের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলো দিনকে দিন দুর্বল হচ্ছে….আসলে পুরো দেশজুড়ে এখন একটা যুদ্ধাবস্থা চলছে এবং এই যুদ্ধ কোনও রাজনৈতিক যুদ্ধ নয়। এই যুদ্ধ গণতন্ত্রকে রক্ষা করার যুদ্ধ।’
বক্তব্যে তিনি ভারতের সাম্প্রতিক কৃষক আন্দোলন এবং সীমান্ত এলাকায় চীনের সঙ্গে ভারতের দ্বন্দ্বসহ বিভিন্ন প্রসঙ্গে কথা বলেন। পাশপাশি নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বর্তমান বিজেপি সরকার এবং ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ীর নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকারের মধ্যকার পার্থক্যও তুলে ধরেন ভারতের সাবেক এই কেন্দ্রীয় অর্থ ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রী।
বিজ্ঞাপন
যশোবন্ত সিনহা বলেন, ‘বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার ভুলপথে যাচ্ছে এবং এমন কেউ নেই যে সরকারকে নিবৃত্ত করতে পারে। অটলজী (অটল বিহারি বাজপেয়ী) বিবেককে গুরুত্ব দিতেন, আর বর্তমান সরকার জোর-জবরদস্তিতে বিশ্বাস করে। অটলজীর আস্থা ছিল সহযোগিতামূলক সম্পর্কে, আর এই সরকার যে কোনো মূল্যে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে পরাভূত করতে চায়। অটলজী জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলেছিলেন, তিনি কখনও উড়ে এসে জুড়ে বসা নীতি সমর্থন করতেন না; আর এই সরকার যেসব নীতি নিচ্ছে, তা জাতীয় ঐক্যের জন্য বিপর্যয়কর।’
১৯৬০ সালে ভারতের আইএএস (ইন্ডিয়ান অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস) কর্মকর্তা হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন যশোবন্ত সিনহা। পরে ১৯৮৪ সালে জনতা দলের হাত ধরে রাজনীতিতে যোগ দেন যশোবন্ত। এরপর ১৯৯০ সালের নভেম্বর থেকে ১৯৯১ সালের জুন পর্যন্ত কংগ্রেস জোট সরকারের অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন তিনি। সেসময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন জনতা দলের সভাপতি চন্দ্র শেখর।
তার রাজনীতির দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু হয় ৯০ দশকের মাঝামাঝি সময়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর। ১৯৯৮ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০০২ সালের জুলাই পর্যন্ত দ্বিতীয় দফায় কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পান যশোবন্ত সিনহা। তারপর তাকে দেওয়া হয় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর দায়িত্ব। সেই পদে তিনি ছিলেন ২০০৪ সালের মে পর্যন্ত।
দলের সাথে মতানৈক্যের কারণে ২০০৯ সালে বিজেপির কেন্দ্রীয় সহসভাপতির পদ থেকে অব্যহতি নেন তিনি। তারপর ২০১৮ সালে অটল বিহারি বাজপেয়ীর মৃত্যুর পর বিজেপি থেকেই পদত্যাগ করেন যশোবন্ত।
নির্বাচনকে সামনে রেখে পশ্চিমবঙ্গে দল বদলের যে হিড়িক চলছে, তাতে শুভেন্দু অধিকারী, রাজীব বন্দোপাধ্যায়ের মতো তৃণমূলের অনেক নেতাই দল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে যশোবন্ত সিনহার মতো অভিজ্ঞ ও প্রাজ্ঞ সাবেক বিজেপি নেতার তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদানে স্বাভাবিকভাবেই উচ্ছসিত দলটি।
দলের মুখপাত্র সুব্রত মুখোপাধ্যায় সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের সৌভাগ্য, যশোবন্ত সিনহা তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন। আমরা গর্বিত তাকে আমাদের মাঝে পেয়ে।’
সূত্র: এনডিটিভি
এএস/এসএমডব্লিউ