পুলিশের গুলিতে মিয়ানমারে আরও পাঁচ প্রাণহানি
মিয়ানমারের মৃত্যুর মিছিল চলছেই। শুক্রবারও রাতভর অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভ হয়েছে মিয়ানমারজুড়ে। বিক্ষোভ দমনে পুলিশের গুলিতে পৃথক তিনটি শহরে পাঁচ জন নিহত হয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে এ খবর জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
অভ্যুত্থানের পর যেসব নেতাকর্মীকে জান্তা সরকার গ্রেফতার করেছে, তাদের মুক্তির দাবিতে শুক্রবার রাতে থারকেতা পুলিশ স্টেশনের সামনে বিক্ষোভকারীরা জড়ো হলে পুলিশের গুলিতে ঘটনাস্থলেই দুজন বিক্ষোভকারী প্রাণ হারান। আহত হন আরও কয়েকজন।
বিজ্ঞাপন
এছাড়া শনিবার মান্দালয় শহরে অভ্যুত্থানবিরোধী অবস্থান কর্মসূচিতে পুলিশ গুলি চালালে আরও দুজন নিহত হন। সেখানেও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। পুলিশের গুলিতে আরও একজন নিহত হয়েছেন মধ্যাঞ্চলীয় পাইয়া শহরে।
১৯৮৮ সালের সেনাশাসনবিরোধী বিক্ষোভে নিহত তৎকালীন রেঙ্গুন ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির শিক্ষার্থী ফোন মাওয়ের মৃত্যুবার্ষিকীতে আরও প্রাণহানির পর বিক্ষোভ জোরালো করার আহ্বান জানানো হচ্ছে। চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মাওয়ের মৃত্যুর পর তখন সামরিক জান্তাবিরোধী বিক্ষোভে ফুঁসে উঠেছিল গোটা মিয়ানমার।
বিজ্ঞাপন
দেশটিতে শুরু হওয়া অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভ ও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অসহযোগ আন্দোলন দিন দিন বেগবান হচ্ছে। এদিকে মিয়ানমারে গণতন্ত্র ফেরাতে কাজ করবে বলে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও জাপানের নেতাদের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি আসার মধ্যেই বিক্ষোভ জোরালো করার এই ডাক এলো।
রয়টার্স জানিয়েছে, ফোন মাওয়ের মৃত্যুবার্ষিকী পালন ও জান্তাবিরোধী বিক্ষোভের জন্য রাস্তায় নামার আহ্বান জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে বিভিন্ন পোস্টার পোস্ট করা হয়েছে। উল্লেখ্য, রেঙ্গুন ইনস্টিটিউট অব টেকনোলোজি ক্যাম্পাসে ঢুকে ওইদিন নিরাপত্তাকর্মীরা গুলি করে মাওকে হত্যা করেছিল।
মাওকে গুলি করে হত্যা ও তার কয়েক সপ্তাহ পর আরেক শিক্ষার্থী নিরাপত্তাকর্মীদের গুলিতে নিহত হওয়ার পর সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে মিয়ানমারজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়। মিয়ানমারের ওই বিক্ষোভ ৮-৮-৮৮ বিক্ষোভ নামে পরিচিত। ওই বিক্ষোভে দেশটির প্রায় তিন হাজার বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছিল।
জান্তাবিরোধী ওই আন্দোলনের সময় গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী হিসেবে বিশ্বজুড়ে পরিচিতি পান অং সান সু চি। ওই বিক্ষোভের পর প্রায় দুই দশক তাকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়। ২০০৮ সালে তিনি মুক্তি পাওয়ার পর নির্বাচনে তার দল এনএলডি নির্বাচনে জয় পায়। গত নভেম্বরের নির্বাচনেও দলটি বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জয় পেয়েছিল।
কিন্তু গত নভেম্বরের জাতীয় নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে অভিযোগ তুলে নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করে জেনারেলরা। বন্দি করা হয় সু চি ও মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট ছাড়াও সরকারের মন্ত্রী আর এনএলডির নেতাদের। এরপর থেকে শুরু হওয়া জান্তাবিরোধী বিক্ষোভে শিক্ষার্থীসহ ৭০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।
এএস/এমএমজে