চাঁদে ৬০ লাখ স্পার্মের নমুনা পাঠাতে চান বিজ্ঞানীরা
পৃথিবী আর কতদিন বাসযোগ্য থাকবে মানুষের জন্য? শুধু মানুষই নয়, নীল রঙের সমগ্র জীবজগৎই যেন এক বিপন্নতার মুখোমুখি। অবলুপ্তির ভ্রূকুটির সম্মুখীন বহু প্রজাতির প্রাণী। এবার সেদিকে তাকিয়েই এক অভিনব পরিকল্পনা করছেন বিজ্ঞানীরা। তাদের প্রস্তাব, সভ্যতা বাঁচাতে এবার চাঁদে তৈরি করা হোক স্পার্ম ব্যাংক।
সব মিলিয়ে প্রায় ৬০ লাখ ৭০ হাজার প্রজাতির প্রাণীর শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর নমুনা সংরক্ষণ করা হবে চাঁদে। ভবিষ্যতে তা সভ্যতাকে নতুন দিশা দেখাতে পারে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। ‘মডার্ন গ্লোবাল ইনশিওরেন্স পলিসি’ নামে এই অভিযানের পরিকল্পনা করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জেকান থাঙ্গা এই ব্যাংক গড়ার প্রস্তাব দিয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
সম্প্রতি আরিজোনায় অনুষ্ঠিত হয়েছে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং এয়ারোস্পেস কনফারেন্সে এই প্রস্তাব দেন তিনি। প্রস্তাবনাপত্রে জেকান থাঙ্গা দাবি করেন, তিনি দল নিয়ে ৬০ লাখ ৭০ হাজার শুক্রাণু এবং ডিম্বাণু সংগ্রহের কাজের জন্য প্রস্তুত। প্রস্তাবিত কর্মসূচি অনুমোদন পেলেই সেগুলো চাঁদে পাঠানোর কাজ শুরু হতে পারে।
প্রাকৃতিক সম্পদের আধার কমে আসার কারণে দীর্ঘদিন ধরে মানুষ এই গ্রহের বাইরে উপনিবেশ গড়ার চিন্তা-ভাবনা করছে। যে তালিকায় চাঁদ এবং মঙ্গল গ্রহের নামও আছে।
বিজ্ঞাপন
চাঁদের পরিবেশ আদৌ ভবিষ্যতে মানুষের বসবাসের অনুকূল হবে কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক আছে। তবে এই বিতর্কে মনযোগ দিতে চান না থাঙ্গা। তবে সহজ-সরল চিন্তা থেকে তিনি চাঁদে একটি জিন ব্যাংক তৈরি করতে চান। যেখানে মানুষ-সহ পৃথিবীর ৬০ লাখ ৭০ হাজার প্রাণীর শুক্রাণু এবং ডিম্বাণু সঞ্চিত থাকবে। আর এই প্রক্রিয়াকে তিনি ‘আর্ক’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। যা বাইবেলের সেই কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।
যেখানে বলা হয়েছে, মহাপ্লাবনের আগে সৃষ্টিকর্তা নূহ (আ.)-কে একটি সুবিশাল আর্ক বা জলযান তৈরির নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেখানে সংরক্ষণ করতে বলেছিলেন পৃথিবীর প্রাণীকূলের প্রত্যেকের একটি করে নারী এবং পুরুষ সদস্য। যাতে প্লাবন-পরবর্তী পৃথিবীতে প্রাণীবৈচিত্র্যের ধারাটি অব্যাহত থাকে আগের মতো। থাঙ্গাও সেটাই করতে চেয়েছেন।
অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জেকান থাঙ্গার দাবি, এই বিপুল পরিমাণ শুক্রাণু এবং ডিম্বাণু সঞ্চয়ের জন্য চন্দ্রপৃষ্ঠের গহ্বর আদর্শ জায়গা। সেগুলো মাটি থেকে ৮০-১০০ মিটার গভীর, ফলে সেখানে সুরক্ষিত থাকবে পৃথিবীর প্রাণের বীজ।
থাঙ্গা বলেছেন, ইতিমধ্যে পৃথিবীর অনেক প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বিলুপ্তির দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে আছে আরও অসংখ্য প্রাণী। তাই তিনি যতটা সম্ভব তাদের শুক্রাণু এবং ডিম্বাণু সঞ্চয় করে রাখতে চান চাঁদে। যাতে লোপ পেলেও কৃত্রিম প্রজনন পদ্ধতির সাহায্যে পৃথিবীতে তাদের আবার ফিরিয়ে আনা যায়। নিউজ১৮।
এসএস