মৃত্যু বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২ জনে
গ্রিসে ট্রেন দুর্ঘটনা : ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানালেন বেঁচে ফেরারা
দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের দেশ গ্রিসে দুই ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষে মৃতের সংখ্যা ২৬ জন থেকে বেড়ে ৩২ জনে দাঁড়িয়েছে। মঙ্গলবার লারিসার মধ্যবর্তী স্থানে দ্রুতগামী একটি যাত্রীবাহী ও একটি মালবাহী ট্রেন একই লাইনে চলে আসলে ভয়াবহ এ দুর্ঘটনা ঘটে।
ট্রেন দু’টি থেসালোনিকি এবং লারিসার মধ্যে চলাচল করছিল। যাত্রীবাহী ট্রেনটি রাজধানী এথেন্স থেকে থেসালোনোকিতে যাচ্ছিল। এ দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে ফেরা যাত্রীরা জানিয়েছেন ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা।
বিজ্ঞাপন
গ্রিস সংবাদমাধ্যম ইআরটিকে একজন পুরুষ যাত্রী বলেছেন, ‘আমরা শুধু বিকট শব্দ শুনতে পাই। এরপর ট্রেন গড়ানো শুরু করে। এটি পাশে গড়িয়ে থেমে গেলে আমি বের হয়ে যেতে সমর্থ হই।’
অপর এক যাত্রী বলেছেন, ‘এটি ছিল ১০ সেকেন্ডের এক দুঃস্বপ্নময়ী মুহূর্ত। ধোঁয়ার কারণে কিছু দেখা যাচ্ছিল না।’
বিজ্ঞাপন
তিনি আরও বলেছেন, ‘পড়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত আমরা বগির ভেতর উলট-পালট খাচ্ছিলাম...এরপর আতঙ্ক শুরু হয়। বৈদ্যুতিক তারে সঙ্গে সঙ্গে আগুন লেগে যায়। বগির ডান পাশ, বাঁ পাশ সবদিকে আগুন ছিল। আমরা যখন উলট-পালট খাচ্ছিলাম তখন আমাদের শরীর পুড়ে যাচ্ছিল।’
বেঁচে যাওয়া কয়েকজন যাত্রী বার্তাসংস্থা এপিকে জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার পর পর ট্রেনের সামনের বগিগুলোতে আগুন ধরে যায়। উপায় না দেখে তারা জানালা ভেঙে বের হন। তারা জানিয়েছেন, ট্রেনের সামনের দু’টি বগি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। তিন ও চার নাম্বার বগি লাইন থেকে ছিটকে পাশের মাঠে আছড়ে পড়ে। যেখানে দুর্ঘটনা ঘটেছে সেখানে একটি গিরিখাদও রয়েছে।
ভাসিলিস পোলিজোস নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা এপিকে বলেছেন, ‘সেখানে লোহার বড় টুকরো ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল।’ দুর্ঘটনার পরপরই যে কয়েকজন প্রথম ছুটে গিয়েছিলেন ভাসিলিস তাদেরই একজন।
তিনি আরও বলেছেন, ‘যাত্রীবাহী ও মালবাহী দু’টি ট্রেনই পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। আমি গিয়ে দেখি অনেকে জানালা ভেঙে বের হয়ে এসেছেন। যাত্রীরা ভয়ার্ত, অনেক ভয়ার্ত ছিলেন। তারা আশপাশে দেখছিলেন, খুঁজছিলেন। তারা বুঝতে পারছিলেন না কোথায় আছেন।’
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, ট্রেনের সামনের বগিটিতে ছিল রেস্টুরেন্ট। যখন দুর্ঘটনা ঘটে তখন সেখানে অনেকে ছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে, যারা মারা গেছেন তাদের বেশিরভাগই ওই সময় ট্রেনের ভেতর হয়ত খাবার খাচ্ছিলেন।
দুর্ঘটনার হাত থেকে বেঁচে যাওয়া এক তরুণ নাম প্রকাশ না করে বলেছেন, ‘সংঘর্ষ হওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে ট্রেনটিতে শক্ত ব্রেক অনুভব করি, এরপরই আগুনের ফুলকি দেখা যায় এবং হঠাৎ ট্রেনটি থেমে যায়। আমাদের বগিটি লাইনচ্যুত হয়নি। কিন্তু আমাদের সামনের বগিটি পড়ে যায় এবং ভেঙে যায়।’ তিনি জানিয়েছেন, এ ঘট্নায় তিনি কেঁপে ওঠেন। হঠাৎ দুর্ঘটনা শিকার হয়ে হতভম্ব হয়ে যান। কিন্তু খানিক সময় পরই নিজের ব্যাগ দিয়ে জানালা ভেঙে ট্রেন থেকে বের হন।
এদিকে গ্রিসের রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দুর্ঘটনার সময় যাত্রীবাহী ট্রেনটিতে প্রায় ৩৫০ জন মানুষ ছিলেন।
এমটিআই