সর্বশেষ লোকসভা ভোটের মাধ্যমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) অভূতপূর্ব উত্থান হয়। সেই ভোটে বিধানসভা ভিত্তিক পরিসংখ্যানে ১২১ কেন্দ্রে এগিয়েছিল তারা, যা পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতা দখলের ম্যাজিক ফিগার ১৪৮-এর কাছাকাছি।

দুই বছর পর বিধানসভা নির্বাচন যখন দোরগোড়ায় তখন সাংগঠনিকভাবে বেশ অগোছালো লাগছে নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহের দলকে। তৃণমূল ২৯১টি আসনে একইসঙ্গে প্রার্থীদের নাম ঘোষণার পর বিজেপি হোঁচট খাচ্ছে। তারা একাধিক দফায় প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে। তারপরই শুরু হয়েছে তুমুল বিক্ষোভ।

প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পর খোদ কলকাতায় বিজেপির হেস্টিংস কার্যালয়ে বিক্ষোভ হয়। বিভিন্ন জেলা থেকে আসা বিজেপি নেতাকর্মীরা দফতর ঘেরাও করে রাখেন। এরপর পরের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা হতেই মালদা, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, জগদ্দল, দুর্গাপুর, দমদমে দলীয় বিক্ষোভ দেখা যায়।

কোথাও দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর, কোথাও রাস্তা অবরোধ, রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেছেন বিক্ষুব্ধরা। প্রতিবাদে অনেক বিজেপি নেতাকর্মী দলীয় পদ ছেড়েছেন, কেউ ছেড়েছেন দল। কোচবিহার বিজেপির সহ-সভাপতি ভবেশ রায় প্রার্থী তালিকা নিয়ে অসন্তোষের জের ধরে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন।

কেন বিক্ষোভ?

বিক্ষোভের নেপথ্যে মূলত দু’টি কারণ উঠে আসছে। বহিরাগত বনাম ভূমিপুত্র এবং আদি ও নব্য বিজেপির লড়াই। বিক্ষুব্ধ বিজেপির নেতাকর্মীদের বক্তব্য, স্থানীয় পর্যায়ে যারা তৃণমূলের সঙ্গে লড়াই করে রাজনীতি করেছেন, তাদেরকে প্রার্থী করা হয়নি৷। বহিরাগত ইস্যুতে বরানগরের পার্নো মিত্র, আলিপুরদুয়ারের অশোক লাহিড়ি, দমদমের বিমলশঙ্কর নন্দর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হয়েছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও দমদম আসনের বিজেপি প্রার্থী অধ্যাপক বিমলশঙ্কর নন্দ বলেন, ‘কলেবরে বিজেপি বাড়ছে এবং পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম দল হিসেবে মনোনয়নের সময় এরকম হতেই পারে। আর যারা বিজেপির উত্থানে শঙ্কিত, তারা উদ্দেশ নিয়ে বিক্ষোভগুলো করাচ্ছে।’

দ্বিতীয়ত, যারা সদ্য তৃণমূল ও অন্য দল থেকে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন, তাদের কেন প্রার্থী করা হয়েছে, এই প্রশ্ন তুলে বিক্ষোভ করছেন কর্মীরা। সিঙ্গুর আন্দোলনের অন্যতম মুখ রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যকে নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সেখানকার বিজেপি কর্মীরা। জিতেন্দ্র তিওয়ারির বিরুদ্ধে পাণ্ডবেশ্বরে বিক্ষোভ হয়েছে।

শান্তিপুরের তৃণমূল বিধায়ক অরিন্দম ভট্টাচার্যকে জগদ্দলের প্রার্থী করায় রীতিমতো পথে নেমে, কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ে অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন বিজেপি কর্মীরা। অবশ্য অরিন্দম ভট্টাচার্য বলেন, ‘এখানে আমার বিরুদ্ধে কোনো বিক্ষোভ চোখে পড়েনি। আমি নতুন লোক নই, শান্তিপুরের বিধায়ক। কারও যদি আমার বিরুদ্ধে কিছু বলার থাকে, তাহলে দলকে বলবে।’

শুধু বহিরাগত-ভূমিপুত্র বা আদি-নব্য সংঘাত নয়, প্রার্থী তালিকা প্রকাশের ক্ষেত্রে বিজেপির মধ্যে প্রস্তুতির অভাব দেখা গেছে। চৌরঙ্গিতে শিখা মিত্রের নাম ঘোষণা করার পরই প্রয়াত কংগ্রেস নেতা সোমেন মিত্রের স্ত্রী শিখা আপত্তি জানিয়েছেন। ভোটের লড়াই থেকেও সরে গিয়েছেন তিনি।

নাম ঘোষণার পর ভোটে লড়তে চাননি বিজেপি নেতা রন্তিদেব সেনগুপ্ত। পরে শীর্ষ নেতৃত্বের অনুরোধে সিদ্ধান্ত বদল করেছেন তিনি। আবার কর্মীদের প্রবল বিক্ষোভের মুখে পড়ে ‘ড্যামেজ কন্ট্রোলে’ নেমেছে দল। সেই লক্ষ্যেই বিজেপির প্রথম তালিকায় স্থান পাওয়া আলিপুরদুয়ারের প্রার্থী অশোক লাহিড়িকে বাদ দেওয়া হয়েছে।

বিজেপির দলীয় অসন্তোষ ঘিরে নেতৃত্বের অস্বস্তি বাড়ছে যেমন, তেমনই বিরোধী পক্ষের সমালোচনাও বাড়ছে। রাজনৈতিক সভায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গেরুয়া শিবিরের উদ্দেশে খোঁচা দিয়ে বলেছেন, ‘বিজেপির যারা পুরনো লোক, এখন তারা ঘরে বসে কাঁদছে।’

সূত্র: ডয়চে ভেলে

টিএম