সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের প্রতিবাদে জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে মিয়ানমারে প্রতিবাদ বিক্ষোভ চলছেই। থেমে নেই মৃত্যুর মিছিলও। শনিবারও (২০ মার্চ) নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে দেশটির বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুনে এক বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা ও গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, শনিবার জান্তাবিরোধী বিক্ষোভ করার সময় ইয়াঙ্গুনে এক তরুণ বিক্ষোভকারীকে গুলি করে হত্যা করে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী।

মানবাধিকার গ্রুপ অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনারস জানিয়েছে, শনিবারের সর্বশেষ মৃত্যুর ঘটনাসহ গত ফেব্রুয়ারির ১ তারিখে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের পর থেকে দেশটিতে এখন পর্যন্ত ২৩৮ জন বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন।

বিক্ষোভের প্রথম পর্যায়ে সামরিক বাহিনী দৃশ্যত সংযমের পরিচয় দিলেও গতমাসের শেষদিক থেকে ক্রমশ অসহিষ্ণু হয়ে উঠতে থাকে। আন্দোলন দমনে রাবার বুলেট-জলকামান-টিয়ারশেলের পরিবর্তে প্রাণঘাতী স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র ব্যবহার করা শুরু করে মিয়ানমারের আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা।

এরপরও প্রতিদিনই জান্তাবিরোধী বিক্ষোভে নামছেন দেশটির সাধারণ মানুষ। তারা দেশটির গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী অং সান সু চিসহ আটককৃত সকল রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি এবং গণতান্ত্রিক সরকারের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি করছেন।

তবে বিক্ষোভ চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি জান্তা সরকারের হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করতে আন্দোলনকারীরা কৌশল অবলম্বন করছেন। তেমনই এক বিক্ষোভকারী ও সংগঠক কিয়াও মিন টিকে। দেশটির দায়েই শহর থেকে রয়টার্সকে তিনি বলেন, ‘যেখানে পুলিশ বা সামরিক বাহিনীর সদস্যরা থাকে না, আমরা সেখানে বিক্ষোভ করি। যখন তাদের (নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের) আসার খবর পাই, তখন তাড়াতাড়ি আমরা সেখান থেকে সরে পড়ি।’

তিনি বলেন, ‘বিপ্লব জয়যুক্ত না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন করতেই থাকবো।’

এদিকে গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করা মিয়ানমারের সামরিক জান্তার ওপর আন্তর্জাতিক চাপ দিন দিন বাড়ছে। পশ্চিমা দেশগুলোর পাশাপাশি এখন এশিয়ার অনেক দেশও মিয়ানমারে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নিন্দা জানাচ্ছে। তবে এরপরও আন্দোলনকারীদের দমন করেই যেন ক্ষমতায় থাকতে চায় দেশটির জান্তা সরকার।

উল্লেখ্য, ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন সেনাবাহিনী সরকারকে হটিয়ে নির্বাচিত নেত্রী অং সান সু চিকে গ্রেফতার করে রাষ্ট্রক্ষমতা কুক্ষিগত করার পর থেকেই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটিতে অচলাবস্থার সূচনা হয়েছে। প্রাত্যহিক বিক্ষোভ ও অবরোধের কর্মসূচির কারণে ব্যবসায়িক পরিবেশ রুদ্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অচল হয়ে গেছে দেশটির দৈনন্দিন প্রশাসনিক কার্যক্রম।

সূত্র: রয়টার্স

টিএম