যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের রাজধানী আটলান্টায় ম্যাসাজ পার্লারে বন্দুক হামলায় ৮ জন নিহত হওয়ার প্রতিবাদে এবং অভিযুক্তের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভে করেছেন সাধারণ মানুষ। স্থানীয় সময় শনিবার (২০ মার্চ) জর্জিয়ার ক্যাপিটল ভবনের সামনে বিক্ষোভ করেন তারা। বিক্ষোভের পাশাপাশি এশিয়ানদের বিরুদ্ধে তারা বর্ণবাদ অবসানেরও দাবি জানান।

গত মঙ্গলবার আটলান্টার তিনটি ম্যাসাজ পার্লারে পৃথক হামলায় ৮ জন নিহত হন। নিহতদের মধ্যে ৬ জনই এশিয়ান নারী। অবশ্য বর্ণবাদী বিদ্বেষ থেকে এই হামলা হয়েছে কি না, সেটা নিশ্চিত করতে পারেনি পুলিশ। তবে গোয়েন্দাদের ধারণা, এটি পুরোপুরি বর্ণবিদ্বেষমূলক ঘটনা। এই ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে।

এরপরই শনিবার জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের ক্যাপিটল ভবনের সামনে বিক্ষোভে নামেন সাধারণ মানুষ। এসময় বিভিন্ন ধরনের লেখা সম্বলিত প্লাকার্ড হাতে তারা এশীয় আমেরিকানদের বিরুদ্ধে বর্ণবিদ্বেষ বন্ধের দাবি জানায়। প্লাকার্ডে বিভিন্ন ধরনের লেখার মধ্যে- ‘ঘৃণা বা বিদ্বেষ এক ধরনের ভাইরাস’, ‘এশিয়ানদের প্রতি বিদ্বেষ বন্ধ করো’, ‘আমি তোমার প্রার্থিত সংখ্যালঘু নই’-ছিল উল্লেখযোগ্য।

শনিবারের এই বিক্ষোভে যোগ দিতে টানা আট ঘণ্টা গাড়ি চালিয়ে ফ্লোরিডা থেকে আটলান্টায় এসেছেন টিমোথি ফান। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন’কে তিনি বলেন, ‘হামলায় মারা যাওয়া নারীদেরকে আমার পরিবারের সদস্য বলেই মনে হয়েছে। আমার মনে হচ্ছে- আমাদেরকে (একে অপরের থেকে) আলাদা করে দেওয়া হয়েছে।’

হামলার পর স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাত সাড়ে আটটা নাগাদ ঘটনাস্থল থেকে ২৪০ কিলোমিটার দূরে, দক্ষিণ জর্জিয়ার চেরাকি কাউন্টির উডস্টকে গ্রেফতার করা হয় ২১ বছর বয়সী রবার্ট অ্যারন লংকে। তার বিরুদ্ধে অস্ত্র নিয়ে হামলা ও একাধিক হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ আনা হয়েছে।

তবে ম্যাসাজ পার্লারে হামলা ও গুলি চালানোর কথা স্বীকার করলেও বর্ণবাদী কোনো বিদ্বেষ থেকে এই হামলা চলানো হয়নি বলে দাবি করেছে অভিযুক্ত রবার্ট অ্যারন লং। এশিয়ান-আমেরিকান কমিউনিটি অবশ্য এই হামলার জন্য দশকের পর দশক ধরে চলে আসা বর্ণবাদ, নারী বিদ্বেষসহ বিভিন্ন অনিয়মকে দায়ী করেছেন।

জর্জিয়ায় প্রযুক্তি নিয়ে পড়াশোনা করছেন ২৪ বছর বয়সী চীনা ছাত্র বার্নার্ড ডং। শনিবারের বিক্ষোভে তিনিও যোগ দিয়েছিলেন। বার্তাসংস্থা এপি’কে তিনি বলেন, সকল সংখ্যালঘুদের অধিকার নিশ্চিত করার দাবিতে তিনি এই বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন।

তার ভাষায়, ‘অধিকাংশ সময়ই এশীয় লোকজন খুবই চুপচাপ থাকে। কিন্তু সময় পরিবর্তন হয়েছে।’ তিনি বলেন, হামলার ঘটনা শোনার পর তিনি খুবই রাগান্বিত হয়েছিলেন। কারণ এটা এশীয়, সংখ্যালঘু ও নারীদের বিরুদ্ধে হামলা।

এদিকে আটলান্টার ওই হামলার পর শুক্রবার স্থানীয় এশিয়ান-আমেরিকান কমিউনিটির সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। সেখানে এ ধরনের বিদ্বেষমূলক অপরাধ বন্ধের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, মূল্যবোধ ও বিশ্বাসের ভিত্তিতে আমেরিকান জাতি হিসেবে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া উচিত। যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে ঐক্যবদ্ধ থাকার পাশাপাশি বিদ্বেষ ও বর্ণবাদের বিরুদ্ধেও আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

বর্ণবিদ্বেষের কারণে এই হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করা হলেও কেন বা কী উদ্দেশ্যে এই হামলা চালানো হয়েছে, তা এখনও নিশ্চিত নয়। তবে এশিয়ান-আমেরিকানদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক অপরাধের ঘটনা সাম্প্রতিক সময়ে অনেক বেড়েছে। এশিয়ান লোকজনের কারণে কোভিড-১৯ রোগের বিস্তার ঘটেছে বলে একটি ধারণা এসব বিদ্বেষের পেছনে ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করা হয়।

সূত্র: আলজাজিরা

টিএম