পাকিস্তানে এক নারীকে ধর্ষণের দায়ে আবিদ মালহি ও শাফকাত আলি বেগ নামের দুই ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন দেশটির একটি আদালত। শনিবার দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় শহর লাহোরের একটি বিশেষ আদালত এই রায় দিয়েছেন বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বিবিসি।

গত বছর ৯ সেপ্টেম্বর লাহোরের কাছে ধর্ষণের শিকার ওই নারী পাকিস্তানি বংশোদ্ভুত এবং ফ্রান্সের নাগরিক। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে গণধর্ষণ, অপহরণ, ডাকাতি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে এই দণ্ড দেওয়া হয়েছে ‍দুই ব্যক্তিকে।

গত ৯ সেপ্টেম্বর নিজের দুই সন্তানকে নিয়ে গাড়িতে করে লাহোরের বাইরে যাচ্ছিলেন ওই নারী (৩৫)। পথিমধ্যে গাড়ির পেট্রোল ফুরিয়ে যায়। তিনি তার আত্মীদের ফোন করে সমস্যাটি জানালে, তারা তাকে পাকিস্তান সড়কপথের জরুরি সহায়তা নাম্বারে ফোন করার পরামর্শ দেন। ওই নাম্বারে ফোনও করেছিলেন তিনি।

তারপর তিনি যখন গাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে জরুরি সহায়তাদানকারী কর্মীদের জন্য অপেক্ষা করছেন, তখনই ওই দুই ব্যক্তি তার গাড়ির কাছাকাছি আসেন। তারা সেখানে গাড়িটি ভাঙচুর করেন, টাকা এবং অলঙ্কার সামগ্রী ছিনিয়ে নেন এবং ওই নারী ও তার শিশু সন্তানদের সড়কের পার্শ্ববর্তী একটি শস্যখেতে নিয়ে গিয়ে সন্তানদের সামনে তাকে পালাক্রমে ধর্ষণ করেন।

পুলিশসূত্রে জানা গেছে, ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধারের পর মানসিকভাবে চরম আতঙ্কগ্রস্ত অবস্থায় ছিলেন ওই নারী। তবে সেই অবস্থাতেও ধর্ষকদের চেহারার ঠিকঠাক বিবরণ দিতে পেরেছিলেন তিনি। যার ফলে অপরাধীদের ধরা সহজ হয়েছে।

এদিকে পরদিন ১০ সেপ্টেম্বর লাহোর পুলিশের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ওমর শেখ দেশটির সংবাদমাধ্যমে মন্তব্য করেন, ঘটনার কিছুটা দায় ওই নারীরও রয়েছে। তিনি যদি কোনো ব্যস্ত সড়ক বেছে নিতেন কিংবা যাত্রা শুরুর আগে গাড়িতে প্রয়োজনীয় পেট্রোল রয়েছে কিনা পরীক্ষা করে নিতেন, তাহলে এমন ঘটত না।

তিনি আরো বলেন, ওই নারী ভেবেছিলেন পাকিস্তান ফ্রান্সের মতো নিরাপদ দেশ। ওমর শেখের এই মন্তব্যের পর সমালোচনার ঝড় ওঠে দেশটির সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে। পাকিস্তানের অনেক শহরে পুলিশ কর্মকর্তার এ মন্তব্যের প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিলও হয়েছে।

অবশেষে শনিবার অপরাধী দুই ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড দিলেন আদালত। তাদের আইনজীবী অবশ্য এএফপি নিউজ এজেন্সিকে জানিয়েছেন, তারা এই আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চতর আদালতে আবেদন করবেন।

গত ডিসেম্বরে ধর্ষণ বিষয়ক নতুন আইন প্রণয়ন করেছে পাকিস্তান। এই আইনে ধর্ষণের দ্রুত বিচার ও অপরাধী ব্যক্তির শাস্তি আরো কঠোর করা হয়েছে।

সূত্র: বিবিসি

এসএমডব্লিউ