মধ্য আফ্রিকার দেশ কঙ্গো রিপাবলিকের প্রেসিডেন্ট ডেনিস সাসৌ এনগুয়েসো। ৩৬ বছর ধরে তিনি দেশটির প্রেসিডেন্ট পদে আছেন। তারপরও ক্ষমতা ছাড়ার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। দেশটিতে আজ রোববার অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া নির্বাচনে আবারও তিনিই জিতবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। অর্থাৎ আরও এক মেয়াদে কঙ্গো রিপাবলিকের প্রেসিডেন্ট পদে বসতে যাচ্ছেন এনগুয়েসো। 

কঙ্গো রিপাবলিকের অর্থনৈতিক সংকট ও তেলের লভ্যাংশে অব্যবস্থাপনার অভিযোগ রয়েছে এনগুয়েসোর বিরুদ্ধে। তবে কূটনীতিক ও বিশ্লেষকরা মনে করেন, নির্বাচনে তার যে ছয় প্রতিদ্বন্দ্বী রয়েছেন তারা কেউই তাকে আসলে পরাজিত করতে পারবেন না। বরং ভোটার উপস্থিতি থেকে তার জনপ্রিয়তার ইঙ্গিতই মিলবে। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ব্রাজাভিলের একজন কূটনীতিক বলেন, এ নির্বাচনে আসলে নতুন কিছু ঘটবে না। মানুষ আসলে মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে গেছে। তারা সুখী না, কিন্তু তাদের হাতে বিকল্প কিছুও নেই। 

জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের পর্যবেক্ষকদের নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। আবার ক্যাথলিক চার্চের ১১শ পর্যবেক্ষককেও নির্বাচন পর্যবেক্ষণের অনুমতি দেননি দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। পর্যবেক্ষক যারা আছেন তারা বলছেন, ২০১৬ সালে বিক্ষিপ্ত কিছু সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তবে এ বছর নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হবে বলে নিশ্চিত তারা। 

২০১৭ সালে বিরোধী যোদ্ধাদের সঙ্গে স্বাক্ষরিত একটি চুক্তির আলোকে শান্তির নতুন এই পথ দেখা যাচ্ছে। 

কঙ্গোর অর্থনীতির প্রাণশক্তি হলো তেল। দেশটির রাজস্বের তিন চতুর্থাংশ আসে এ খাত থেকে। কিন্তু দেশটির ৫০ লাখের বেশি মানুষের জীবনযাত্রায় এর কোনো প্রতিচ্ছবি নেই বললেই চলে। বিশ্ব ব্যাংক বলছে, দেশটির ৪১ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। বিশ্ব ব্যাংক বলছে, বিশ্ববাজারে তেলের দরপতনের পরিপ্রেক্ষিতে গত নির্বাচনের পর থেকে দেশটিতে অতিদরিদ্র কেবল বেড়েছেই।  

আন্তর্জাতিক এনজিও গ্লোবাল উইটনেস বলছে, এত সংকটের মধ্যেও দেশটির জাতীয় তেল কোম্পানি ও প্রাইভেট এবং পাবলিক খাতের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ এনগুয়েসোর ঘনিষ্ঠ কিছু সহযোগীর হাতেই রয়ে গেছে। কঙ্গোর সাবেক অর্থমন্ত্রী ও এই নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী মাথিয়াস ডিজন শুক্রবার নির্বাচনি প্রচারণার শেষ দিন অভিযোগ করেন, আমাদের সমস্ত টাকা দেশের বাইরে চলে গেছে। সব প্রাইভেট অ্যাকাউন্টে গেছে। 

গ্লেনকোর এবং ট্রাফিগুরার মতো তেলের বাণিজ্য করা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে কঙ্গোর যে ঋণের বোঝা আছে, পরবর্তী সময়ে যেই দেশের সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী হবে তাকে তা বইতে হবে। ব্রাজাভিলেতে নির্বাচনি প্রচারণার শেষ পর্বে এনগুয়েসো বলেন, ২০১৪ সাল থেকে কঠিন পথে হাঁটতে হচ্ছে দেশের অর্থনীতিকে। কিন্তু আমাদের বিশ্বাস আছে, অটল বিশ্বাস আছে যে আমরা আমাদের দেশকে উন্নয়নের পথে নিতে পারব। 

আশা করা হচ্ছে আজ নির্বাচনের পর চারদিনের মধ্যে ফলাফল পাওয়া যাবে। কোনো প্রার্থী যদি ৫০ শতাংশের বেশি ভোট না পান, তবে ১৫ দিন পর দ্বিতীয় দফায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। 

সূত্র : রয়টার্স। 

এনএফ/এমএমজে