চলতি মাসের শুরুর দিকে সেনাবাহিনী ও আধা-সামরিক বাহিনীর মধ্যে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার আগ মুহূর্তে সুদানের ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরশাসক ওমর আল-বশিরকে কারাগার থেকে সামরিক হাসপাতালে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। সুদানের রাজধানী খার্তুমে দুই বাহিনীর তীব্র সংঘাতের মাঝে বুধবার দেশটির সেনাবাহিনী এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।

বুধবার এক বিবৃতিতে সেনাবাহিনী বলেছে, খার্তুমের কোবের কারাগারের চিকিৎসা কর্মীদের সুপারিশের ভিত্তিতে ওমর আল-বশিরসহ অন্য প্রায় ৩০ জন বন্দিকে আলিয়া হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।

সুদানের সাবেক এই স্বৈরশাসক ও তার সাবেক সরকারের অন্যান্য কর্মকর্তাদেরকে খার্তুমের উত্তরের বাহরি শহরের কোবের কারাগারে বন্দি রাখা হয়েছিল। দেশটির দুই সামরিক বাহিনীর লড়াইয়ের সময় কারাগারটি আক্রান্ত হয়েছে। যে কারণে গত রোববার হাজার হাজার বন্দী কারাগার ভেঙে পালিয়ে গেছে।

খার্তুম থেকে কাতার-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার প্রতিনিধি হিবা মরগান বলেছেন, সুদানের সাবেক প্রেসিডেন্ট বশিরের পরিবারের সদস্যরা বলেছেন, তারা লড়াই শেষের অপেক্ষা করছেন; যাতে তিনি বিচারের মুখোমুখি হতে পারেন এবং নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে পারেন।

সুদানের সামরিক বাহিনীর সাথে আধা-সামরিক বাহিনীর সংঘাত শুরু হওয়ার পর বিভিন্ন কারাগার থেকে অন্তত ২৫ হাজার দোষী সাব্যস্ত অপরাধী মুক্তি পেয়েছেন। এর ফলে খার্তুমে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। খার্তুমের বাসিন্দারা ইতোমধ্যে শহরজুড়ে ব্যাপক লুটপাট ও সংঘবদ্ধ বিভিন্ন গ্যাংয়ের সদস্যরা ঘুড়ে বেড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন।

খার্তুমের রাস্তা এবং সুদানজুড়ে এখন যে দুই বাহিনী লড়াই করছে, তাদের প্রধানরা ২০১৯ সালে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরের সরকারকে উৎখাত করেছিলেন।

সম্প্রতি খার্তুমের কারাগার ভেঙে পালিয়ে যাওয়া বন্দীদের মাঝে বশিরের সাবেক সরকারের জ্যেষ্ঠ চার কর্মকর্তাও রয়েছেন। পরবর্তীতে এক অডিও বার্তায় ওই কর্মকর্তারা বলেছেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিতে বিচার বিভাগের কার্যক্রম যথাযথভাবে শুরু হলে তারা কর্তৃপক্ষের কাছে আত্মসমর্পণ করবেন।

মঙ্গলবার বশিরের সাবেক সরকারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা আহমেদ হারুন এক বিবৃতিতে বলেছেন, তিনি দুই বাহিনীর বর্তমান ‘ক্ষমতার দ্বন্দ্বে’ সুদানের জনগণের পাশে আছেন। আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন পক্ষ এই সংঘাতে সমর্থন দিচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি।

গত ১৫ এপ্রিল রাজধানী খার্তুমে ট্যাংক ও অন্যান্য ভারী অস্ত্র নিয়ে সেনাবাহিনীর অবস্থান লক্ষ্য করে হামলা শুরু করে সুদানের আধা-সামরিক বাহিনী আরএসএফ। আরএসএফকে দুই বছরের মধ্যে সেনাবাহিনীর সঙ্গে একীভূত করা নিয়ে এই দুই বাহিনীর মধ্যে সংঘাতের শুরু হয়। যা পরবর্তীতে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রূপ নেয়।

দেশটিতে চলমান এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত চার শতাধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে এবং আহত হয়েছেন আরও হাজার হাজার মানুষ।

সূত্র: আল-জাজিরা, রয়টার্স।

এসএস