পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) চেয়ারম্যান ইমরান খানকে নাটকীয়ভাবে গ্রেপ্তারের পর দেশজুড়ে যে সহিংস বিক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছিল তাতে বেশ ভালোই আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। এই ইস্যুতে এবার আসরে নেমেছেন খোদ দেশটির প্রেসিডেন্ট।

তিনি বলেছেন, গত ৯ মে যে ঘটনা ঘটেছিল তার প্রকাশ্যে নিন্দা করা উচিত ইমরান খানের। শুক্রবার (১৯ মে) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তান তেহরিক ইনসাফ (পিটিআই) চেয়ারম্যান ইমরান খানের ৯ মের ঘটনার প্রকাশ্যে নিন্দা করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন প্রেসিডেন্ট ড. আরিফ আলভি। বৃহস্পতিবার জিও নিউজের ‘ক্যাপিটাল টক’- অনুষ্ঠানে সাংবাদিক হামিদ মীরকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এই মন্তব্য করেন।

পিটিআই প্রধান ইমরান খানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী পাকিস্তানের এই প্রেসিডেন্ট সেদিনের সেই ঘটনার সাথে জড়িত দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন।

দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল বলছে, দলীয় চেয়ারম্যানসহ পিটিআই নেতৃত্ব রাওয়ালপিন্ডিতে অবস্থিত পাকিস্তানের সেনা সদর দপ্তরে হামলার নিন্দা করেছে এবং এসব ঘটনায় সুপ্রিম কোর্টের নেতৃত্বে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে।

আল-কাদির ট্রাস্ট মামলায় ইমরান খানের গ্রেপ্তারের পর পাকিস্তানজুড়ে হিংসাত্মক বিক্ষোভ শুরু হয়। যার ফলে কমপক্ষে ১০ জনের মৃত্যু হয় এবং আরও শত শত মানুষ আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ হাজার হাজার পিটিআই কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে।

ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের জেরে সৃষ্ট সহিংস বিক্ষোভে সামরিক স্থাপনাগুলো আক্রমণের শিকার হওয়ার পর পাকিস্তানের সেনাবাহিনী বলেছিল, দেশের ইতিহাসে ৯ মে তারিখটি ‘অন্ধকার অধ্যায়’ হিসাবে থাকবে। একইসঙ্গে পাকিস্তান আর্মি অ্যাক্ট, অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট এবং অন্যান্য আইনের অধীনে সেনা স্থাপনায় হামলাকারী ও ভাঙচুরকারীদের বিচার করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে সামরিক বাহিনী এবং সরকার।

পাকিস্তানের বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা এবং সরকারের কেউ কেউ আর্মি অ্যাক্টের অধীনে বেসামরিক লোকদের বিচারের বিরোধিতা করেছে। কিন্তু ভাঙচুরকারীদের বিচার করা উচিত এবং এক্ষেত্রে ‘যথাযথ প্রক্রিয়া’ অনুসরণ করা উচিত বলে সম্মত হয়েছে তারা।

হামিদ মীরকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, বিচারের সময় সন্দেহভাজন অপরাধীদের মানবাধিকারকে সম্মান করা উচিত এবং তাদের নির্যাতন করা উচিত নয়। তিনি বলেন, দাঙ্গা-সহিংসতায় জড়িতদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেওয়া উচিত।

প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি আরও বলেছেন, পিটিআই চেয়ারম্যান ইমরান খান পাকিস্তানের বর্তমান সেনাপ্রধান (সিওএএস) জেনারেল আসিম মুনিরের বিরোধিতা করেননি। তিনি বলেন, ‘ইমরান খান আমাকে জেনারেল বাজওয়াকে বলতে বলেছিলেন যে, সামরিক বাহিনী যাকে পরবর্তী প্রধান হিসেবে অনুমোদন করবে তাকে যেন তিনি গ্রহণ করেন।’

অবশ্য ইমরান খান সামরিক বাহিনীর বর্তমান নেতৃত্বের সমালোচনা করেছেন এবং গত বছরের ৩ নভেম্বর তাকে হত্যা প্রচেষ্টায় জড়িত থাকার জন্য সশস্ত্র বাহিনীর একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে দায়ী করেছেন।

তবে একইসাথে, পাকিস্তানের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী এটিও বলেছেন, তিনি ক্ষমতায় ফিরে এসে সামরিক বাহিনীর কোনও বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবেন না। তিনি বলেছেন, ‘আমি সামরিক বাহিনীর বিষয়ে হস্তক্ষেপ করি না। আমি বারবার এটা বলেছি।’

টিএম