মিয়ানমারে পাখির মতো মারছে মানুষ, নিহত বেড়ে ৯১
নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে আহত একজনকে উদ্ধার করে নিয়ে যাচ্ছেন গণতন্ত্রকামী বিক্ষোভকারীরা
গত মাসের সামরিক অভ্যুত্থানের পর অন্যতম এক রক্তাক্ত দিনের সাক্ষী হলো মিয়ানমার। শনিবার দেশজুড়ে অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভকারীদের ওপর নিরাপত্তা বাহিনীর নির্বিচার গুলিবর্ষণে ৯১ জনের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। বিক্ষোভকারীরা বলছেন, জান্তার লেলিয়ে দেওয়া নিরাপত্তা বাহিনী গুলি করে পাখির মতো লোকজনকে হত্যা করছে।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে। মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনী দিবসে গণতন্ত্রকামী বিক্ষোভকারীদের ওপর রক্তাক্ত অভিযান পরিচালনা করেছে নিরাপত্তা বাহিনী।
বিজ্ঞাপন
রাজধানী নেইপিদোতে শনিবার সশস্ত্র বাহিনীর প্যারেডে অংশ নিয়ে দেশটির সেনাবাহিনীর প্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লেইং বলেন, ‘দেশের জনগণের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে মিয়ানমারে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চায় সামরিক বাহিনী। অবিলম্বে একটি সুষ্ঠু অবাধ ও গণতান্ত্রিক নির্বাচনের আয়োজন করা হবে।’
শুক্রবার সন্ধ্যায় বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে এক সতর্কবাণী প্রচার করা হয়। এতে বলা হয়, আগের মর্মান্তিক মৃত্যুগুলো থেকে আপনাদের শিক্ষা নেওয়া উচিত যে, আপনাদের মাথা ও পিঠে গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। এই হুমকির মাধ্যমে আসলে নিরাপত্তাবাহিনীকে রাস্তায় বিক্ষোভকারীদের দেখা মাত্রই গুলির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কি না তা পরিষ্কার হওয়া যায়নি।
বিজ্ঞাপন
দিবসটি উদযাপন ঘিরে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী বিক্ষোভকারীদের ‘মাথায় এবং পেছনে’ গুলি করা হবে বলে হুমকি দিলেও তা উপেক্ষা করে শনিবার দেশটির বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুন, মান্দালয় এবং অন্যান্য এলাকায় বিক্ষোভ করেন হাজার হাজার মানুষ।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম মিয়ানমার নাউ বলছে, দেশজুড়ে কমপক্ষে ৯১ জনকে গুলি করে হত্যা করেছে নিরাপত্তা বাহিনী। মান্দালয়ে বিক্ষোভে অন্তত ২৯ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর নির্বিচার গুলিতে ইয়াঙ্গুনে নিহত হয়েছেন ২৪ জন। দেশটিতে অভ্যুত্থানবিরোধী আজকের বিক্ষোভ-সহিংসতায় নিহতদের মধ্যে কয়েকজন কিশোরও আছেন।
মিয়ানমারের ক্ষমতাচ্যুত আইনপ্রণেতাদের জান্তাবিরোধী গ্রুপ সিআরপিএইচের মুখপাত্র ডা. সাসা এক অনলাইন ফোরামে বলেছেন, ‘সশস্ত্র বাহিনীর জন্য আজ লজ্জা দিবস। তারা তিন শতাধিক নিরপরাধ বেসামরিক নাগরিককে হত্যার পর আজ সশস্ত্র বাহিনী দিবস উদযাপন করছে।’
এদিকে, মিয়ানমারের দুই ডজন জাতিগত সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীর একটি কারেন ন্যাশনাল ইউনিয়ন বলেছে, তারা থাই সীমান্তের কাছে সেনাবাহিনীর একটি নিরাপত্তা চৌকি গুঁড়িয়ে দিয়েছে। এতে একজন লেফটেন্যান্ট কর্নেল-সহ অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছে। তবে সেখানে সংঘাতে জাতিগত সশস্ত্র এই গোষ্ঠীর এক সদস্যেরও প্রাণ গেছে।
নিরাপত্তাবাহিনীর অভিযানে ৯০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু এবং নিরাপত্তা চৌকিতে বিদ্রোহীদের হামলার বিষয়ে জানতে টেলিফোন করলেও মিয়ানমার সেনাবাহিনীর মুখপাত্রের সাড়া পায়নি রয়টার্স।
মিয়ানমারের মধ্যাঞ্চলীয় মিনগিয়ান শহরের বাসিন্দা থু ইয়া জ্য বলেন, তারা আমাদের পাখি অথবা মুরগীর মতো হত্যা করছেন। এমনকি আমাদের বাড়িতে ঢুকে তারা এই হত্যাকাণ্ড ঘটাচ্ছেন। দেশটির এই শহরে বিক্ষোভকারীদের ওপর নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে দু’জনের প্রাণহানি ঘটেছে।
থু ইয়া বলেন, তারপরও আমরা প্রতিবাদ অব্যাহত রাখবো... জান্তার পতন না হওয়া পর্যন্ত আমরা লড়ে যাবো।
গত ১ ফেব্রুয়ারির অভ্যুত্থানের পর থেকে এখন পর্যন্ত মিয়ানমারে গণতন্ত্রকামীদের বিক্ষোভে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর সহিংসতায় নিহত হয়েছেন চার শতাধিক মানুষ। মিয়ানমারে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা বলেছেন, মিয়ানমারের ৭৬তম সশস্ত্র বাহিনী দিবস সন্ত্রাস এবং অসম্মানের এক অধ্যায় হিসেবে লিখিত থাকবে।
এসএস