সুয়েজ: জাহাজ কবে সরবে আর খাল কবে খুলবে, ঠিক নেই
টানা ষষ্ঠ দিনের মতো মিসরের সুয়েজ খালে আটকে রয়েছে বিশাল আকৃতির একটি জাহাজ। পানামার পতাকাধারী এভার গিভেন নামের এই জাহাজটি গত মঙ্গলবার লোহিত সাগর থেকে ভূমধ্যসাগরে যাওয়ার পথে সুয়েজ খালের তীরের অগভীর পানিতে আটকা পড়ে। কবে নাগাদ জাহাজটিকে মুক্ত করে সুয়েজ খালকে চলাচলের জন্য আবারও উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে তা এখনও অনিশ্চিত।
এদিকে আটকে পড়া জাহাজটিকে সরিয়ে নিতে এবং জাহাজ চলাচলের জন্য বৈশ্বিক গুরুত্বপূর্ণ এই রুটটি ফের চালু করতে চেষ্টা করে যাচ্ছে মিসরীয় কর্তৃপক্ষ। গত মঙ্গলবার দক্ষিণের রুট দিয়ে সুয়েজ খালে প্রবেশ করে প্রায় ছয় কিলোমিটার যাওয়ার পরই সুয়েজ শহরের কাছে অগভীর পানিতে আটকে যায় জাহাজটি।
বিজ্ঞাপন
শনিবার সুয়েজ শহরে এক সংবাদ সম্মেলনে খাল কর্তৃপক্ষের প্রধান ওসামা রাবিই জানিয়েছেন, অচলাবস্থা কাটাতে কাজ চলছে। কিন্তু এখনও নিশ্চিত নয় যে, কখন জাহাজটি আবারও পানিতে ভাসতে পারবে।
বিজ্ঞাপন
সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘জাহাজের পশ্চাৎদেশ সুয়েজের দিকে ঘুরতে শুরু করেছে। (স্থানীয় সময়) রাত ১১টা পর্যন্ত এটাই ইতিবাচক দিক। কিন্তু তীব্র স্রোতের কারণে আমরা কাজ বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছি।’
ওসামা রাবিই আরও বলেন, জাহাজটি কখন নাগাদ মুক্ত করা সম্ভব হবে, সে বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা ঘোষণা করা সম্ভব নয়। কিন্তু আটকে যাওয়া স্থানে খননের মাধ্যমে এটাকে মুক্ত করা যাবে বলে আমরা আশাবাদী।
আটকে পড়া জাহাজটি মুক্ত করতে ১৪টি উদ্ধারকারী নৌকা (টাগবোট) কাজে লাগানো হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আশা করি আটকে থাকা জায়গা থেকে জাহাজটি যেকোন সময় সরে আসবে।
সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, সুয়েজ খাল বন্ধ হয়ে থাকায় এর প্রবেশ মুখ লোহিত সাগরের পোর্ট সুয়েজ ও ভূমধ্যসাগরের পোর্ট সাইদে ৩২১টি জাহাজ আটকা পড়েছে। এতে করে সেখানে বড় ধরনের জাহাজজট তৈরি হয়েছে।
এদিকে জাহাজ আটকে সুয়েজ খাল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে গত পাঁচ দিন ধরে বহু মালবাহী জাহাজকে তাদের মূল রুট থেকে সরিয়ে বিকল্প পথে আফ্রিকা ঘুরে গন্তব্যে পাঠানো হচ্ছে। বিকল্প পথে জাহাজ চলাচলের সংখ্যা প্রতিদিনই বৃদ্ধি পাচ্ছে।
গত মঙ্গলবার মিসরের স্থানীয় সময় সকালে দুই লাখ ২০ হাজার টন ওজনের এই জাহাজটি প্রবল বাতাস ও ধূলি ঝড়ের কারণে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ঘুরে গিয়ে সুয়েজ খালের দক্ষিণাংশের সংকীর্ণ একক লেনে আড়াআড়িভাবে আটকে যায়, এতে সামুদ্রিক জাহাজ চলাচলের গুরুত্বপূর্ণ রুটটি বন্ধ হয়ে যায়। আর এতে ব্যাহত হচ্ছে বিশ্ব বাণিজ্যের পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা।
বার্তাসংস্থা রয়টার্স বলছে, সমুদ্রে দৈনিক হিসেবে চলাচলকারী জাহাজের ৩০ শতাংশই যাতায়াত করে থাকে সুয়েজ খাল দিয়ে। সুয়েজ খাল কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে বছরজুড়ে প্রায় ১৯ হাজার জাহাজ চলাচল করেছে এই খাল দিয়ে। দৈনিক হিসেবে যা প্রায় ৫২টি।
সুয়েজ খালে আটকে যাওয়া ‘এভার গিভেন’ জাহাজটি ২০১৮ সালে নির্মাণ করা হয়। পানামায় নিবন্ধনভুক্ত এবং দেশটির পতাকাবাহী এই জাহাজটি চীন থেকে নেদারল্যান্ডসের রটারডাম বন্দরে যাচ্ছিল।
মিসরের সুয়েজ অঞ্চলে ভূমধ্যসাগর ও লোহিত সাগরকে যুক্ত করে প্রায় ১৯৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এই খালটি খনন করা হয়। ১৮৫৬ সালে গঠিত হয় সুয়েজ ক্যানেল কোম্পানি। প্রায় তিন বছর পর, ১৮৫৯ সালের এপ্রিল মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় খালটির খননকাজ।
১০ বছর পর ১৮৬৯ সালের ১৭ নভেম্বর নৌ-চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয় সুয়েজ খাল। এই খালের আয় দিয়েই পূরণ হয় মিসরের জাতীয় বাজেটের প্রায় ৮০ শতাংশ।
সুয়েজ খাল খনন করার আগ পর্যন্ত ইউরোপের বিভিন্ন দেশের জাহাজগুলোকে ভূমধ্যসাগর থেকে পুরো আফ্রিকা মহাদেশ ঘুরে, উত্তমাশা অন্তরীপ পাড়ি দিয়ে আরব সাগর হয়ে ভারত এবং প্রশান্ত মহাসাগরে যেতে হতো। এই যাত্রা ছিল সময়সাপেক্ষ ও বিপজ্জনক। তবে সুয়েজ খাল খনন ও চালুর পর এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যকার সেই দূরত্ব বহুগুনে কমে এসেছে।
সূত্র: আলজাজিরা
টিএম