মিয়ানমার এখন আতঙ্কের অপর নাম: ব্লিনকেন
শনিবার মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনী দিবসের দিন দেশটিতে ১১৪ জন বিক্ষোভকারী নিহতের ঘটনায় উদ্বেগ ও নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন এক বার্তায় বলেছেন, মিয়ানমারে ‘ত্রাসের রাজত্ব’ চলছে।
শনিবার এক বার্তায় ব্লিনকেন বলেন, ‘মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতিতে আমার উদ্বিগ্ন, আতঙ্কিত। দেশটির ক্ষমতাসীন জান্তা সরকার নিজেদের স্বার্থে অবলীলায় মানুষের জীবন নিয়ে খেলছে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে কোনো অনুতাপ, বিবেকবোধ কাজ করছে না। পুরো দেশে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে তারা।’
বিজ্ঞাপন
দেশটির বিক্ষোভকারীদের প্রতি সম্মান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মিয়ানমারের সাহসী জনগণ জান্তা সরকারের দমন-পীড়ন, ভীতি প্রদর্শনকে প্রত্যাখ্যান করেছে। এটি আশাব্যঞ্জক, তবে দেশটির সামরিক বাহিনীর সহিংসতা, বেপরোয়া কার্যক্রম তীব্রভাবে নিন্দনীয়।’
এর আগে মিয়ানমারে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস থেকে বলা হয়েছিল, ‘জান্তা সরকার নিরস্ত্র সাধারণ মানুষ হত্যা করছে।’
বিজ্ঞাপন
শনিবার (২৭ মার্চ) ছিল মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনী দিবস; আর এই দিনেই দেশজুড়ে অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভকারীদের ওপর নিরাপত্তা বাহিনীর নির্বিচার গুলিবর্ষণে নিহত হয়েছেন ১১৪ জন।
মিয়ানমারের কারাবন্দিদের সহায়তা দানকারী বেসরকারী সংস্থা অ্যাডভোকেসি গ্রুপ অ্যাসিস্টান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনারস (এএপিপি) ও স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, শনিবারের সহিংসতার ঘটনার পর এ পর্যন্ত নিরাপত্তাবাহিনীর গুলিতে দেশটিতে নিহতের সংখ্যা সাড়ে চারশ ছাড়িয়ে গেছে।
মিয়ানমারে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) প্রতিনিধি শনিবারের সহিংসতার প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘এই দিনটি মিয়ানমারের ইতিহাসে একটি অসম্মানজনক, রক্তাক্ত ও ভীতির দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।’
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এক বার্তায় বলেছেন, ‘সহিংসতার এই ঘটনায় আমি গভীরভাবে শোকাহত।’ যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র সচিব ডমিনিক রাব বলেছেন, গণহত্যার মাধ্যমে মিয়ানমারের জান্তা সরকার ‘নতুন আইন’ তৈরি করতে যাচ্ছে।
এএপিপি সূত্রে জানা গেছে, শনিবার মিয়ানমারের প্রধান শহর ইয়াঙ্গুন, দ্বিতীয় প্রধান শহর মান্দালয়, ম্যাগওয়ে, মোগক, কিয়াউকপাদাউং ও মায়াঙ্গনে শহরে বিক্ষোভকারীদের ওপর নিরাপত্তাবাহিনী নির্বিচারে গুলি চালানোর কারণে ঘটেছে নিহতের ঘটনাগুলো। এ ব্যাপারে জানতে চেয়ে সামরিক বাহিনীর মুখপাত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি যথারীতি ফোন ধরেননি।
নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগে গত ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলে নেওয়ার পর থেকে দেশটির লাখ লাখ মানুষ সেনাশাসনের অবসানের দাবিতে বিক্ষোভ করে আসছেন। গৃহবন্দি নেত্রী অং সান সু চির মুক্তি এবং নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি করছেন তারা। অভ্যুত্থানবিরোধীদের এই বিক্ষোভ দেশটির বড় বড় শহরের পাশাপাশি বিভিন্ন অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়েছে।
তারপর থেকেই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটিতে অচলাবস্থার সূচনা হয়। প্রাত্যহিক বিক্ষোভ ও অবরোধের কর্মসূচির কারণে ব্যবসায়িক পরিবেশ রুদ্ধ হওয়ায় অচল হয়ে গেছে দেশটির দৈনন্দিন প্রশাসনিক কার্যক্রম।
বিক্ষোভের প্রথম পর্যায়ে সামরিক বাহিনী দৃশ্যত সংযমের পরিচয় দিলেও গতমাসের শেষদিক থেকে ক্রমশ অসহিষ্ণু হয়ে উঠতে থাকে। আন্দোলন দমনে রাবার বুলেট-জলকামান-টিয়ারশেলের পরিবর্তে প্রাণঘাতী স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র ব্যবহার করা শুরু করেন মিয়ানমারের আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা।
এএপিজির হিসেব মতে এ পর্যন্ত দেশটিতে সামরিক বাহিনীর গুলিতে মরা গেছেন প্রায় সাড়ে চারশ মানুষ। নিহতদের নিহতদের ৯০ শতাংশকেই গুলি করে এবং তাদের এক-চতুর্থাংশকে মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে এএপিজি।
শুক্রবার সন্ধ্যায় বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে এক সতর্কবাণী প্রচার করা হয়। সেখানে বলা হয়, আগের মর্মান্তিক মৃত্যুগুলো থেকে আপনাদের শিক্ষা নেওয়া উচিত যে, আপনাদের মাথা ও পিঠে গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।
মিয়ানমার বিষয়ক আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের একাংশ বলছেন, এই হুমকির মাধ্যমে আসলে নিরাপত্তাবাহিনীকে রাস্তায় বিক্ষোভকারীদের দেখা মাত্রই গুলির নির্দেশ দিয়েছে জান্তা সরকার।
শনিবার মিয়ানমারের সেনাপ্রধান মিন অং হ্লেইং সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে এক ভাষণে জানিয়েছিলেন, সামরিক বাহিনী দেশের জনগণের হাতে হাত মিলিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়; এবং অবিলম্বে মিয়ানমারে একটি সুষ্ঠু, গণতান্ত্রিক নির্বাচন হবে। আর সেদিনই দেশটিতে ঘটল একদিনে সর্বোচ্চ নিহতের ঘটনা।
মিয়ানমারের মধ্যাঞ্চলীয় মিনগিয়ান শহরের বাসিন্দা থু ইয়া জ্য বলেন, তারা (নিরাপত্তা বাহিনী) এমনভাবে গুলি করছে, যেন আমরা মানুষ নই— মুরগি কিংবা পাখি।
‘তবে আমরা পিছু হঠছি না। প্রতিবাদ অব্যাহত রাখবো... জান্তার পতন না হওয়া পর্যন্ত আমরা লড়ে যাবো।’
সূত্র: বিবিসি
এসএমডব্লিউ