ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত : ‘আদিপুরুষ’ নিষিদ্ধের দাবি নেপালে
মুম্বাই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি তথা বলিউডের পরিচালক ওম রাউত পরিচালিত সাম্প্রতিক হিন্দি সিনেমা ‘আদিপুরুষ’-এর বিরুদ্ধে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগ উঠেছে ‘হিমালয়কন্যা’ বলে পরিচিত দেশ নেপালে।
এই অভিযোগের জেরে এই প্রথমবার ভারতের সঙ্গে লাগোয়া এই দেশটির রাজধানী কাটমান্ডুসহ বিভিন্ন শহরে ‘আদিপুরুষ’ ও অন্যান্য বলিউডি ফিল্ম প্রদর্শন নিষিদ্ধের দাবি উঠেছে।
বিজ্ঞাপন
দক্ষিণ ভারতীয় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির সুপারহিট সিনেমা বাহুবলীর আদলে নির্মিত ‘আদিপুরুষ’ সিনেমার কাহিনী গড়ে উঠেছে সনতন ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র ধর্মীয় গ্রন্থ রামায়ণকে ভিত্তি করে। রামায়ণের প্রধান তিন চরিত্র রাম, সীতা ও রাবণের ছায়া অবলম্বন করে তৈরি করা হয়েছে ‘আদিপুরুষ’ ছবির তিন প্রধান চরিত্র লঙ্কেশ, জানকী এবং রাঘব। এই তিন চরিত্রে অভিনয় করেছেন যথাক্রমে প্রভাস, কৃতি শ্যানন ও সাইফ আলী খান।
রামায়নের কাহিনীর এক পর্যায়ে লঙ্কায় বসাবাসরত রাক্ষসজাতির রাজা রাবণ হরণ করেন রামের স্ত্রী সীতাকে। তারপর হনুমানের সহায়তায় রাবণকে পরাজিত করে স্ত্রীকে উদ্ধার করেন রাম। এই সিনেমাতেও খলচরিত্র রাঘবকে পরাজিত করে স্ত্রী জানকীকে উদ্ধার করেন নায়ক লঙ্কেশ।
বিজ্ঞাপন
নেপালের জনগণের আপত্তি এই সিনেমার কাহিনীর একটি অংশ নিয়ে, যেখানে বলা হয়েছে— জানকী ‘ভারতীয় কন্যা’।
সনাতন ধর্মে সীতার আরেক নাম ‘জানকী’। হিন্দু ধর্মীয় পুরাণ অনুযায়ী, জনকপুর রাজ্যে জন্ম হয়েছিল বলেই এই নামকরণ হয় তার।
সনাতন ধর্মের পণ্ডিতদের একাংশের মতে, এই জনকপুর কল্পিত কোনো রাজ্য নয়। নেপালের রাজধানী কাটমান্ডু থেকে ২২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত শহর জনকপুরকে প্রাচীন জনকপুর রাজ্য বলে অভিহিত করেছেন তারা।
নেপালের মোট জনসংখ্যার ৮০ শতাংশেরও বেশি সনাতন ধর্মাবলম্বী। তারাও সীতার জন্মস্থান সংক্রা্ন্ত এই ব্যাখ্যা বিশ্বাস করেন। তাদের অভিযোগ, সীতাকে ‘ভারতের কন্যা’ বলার মাধ্যমে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা হয়েছে।
কাটমান্ডুর মেয়র বলেন্দ্র শাহ রোববার এক ফেসবুক পোস্টে জানান, ইতোমধ্যে রাজধানীসহ অন্যান্য শহরের সিনেমা হল ও সিনেপ্লেক্সে ‘আদিপুরুষ’সহ অন্যান্য সব বলিউডি সিনেমা প্রদর্শন বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং তা কার্যকরও করা হয়েছে।
‘যতদিন আপত্তিকর এই অংশটি বাদ না দেওয়া হচ্ছে, ততদিন আদিপুরুষ তো বটেই— অন্য কোনো হিন্দি ফিল্ম কাটমান্ডু শহরের কোনো সিনেমা হল-সিনেপ্লেক্সে চলবে না,’ ফেসবুক পোস্টে বলেন বলেন্দ্র।
এদিকে, নেপালের পাশাপাশি ভারতের বিভিন্ন রাজ্যেও কাহিনীগত কারণে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে ‘আদিপুরুষ’। অনেক ভারতীয় দর্শক গত কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই সিনেমার সমালোচনা করছেন।
এই দলে আছেন ভারতের ছত্তিশগড় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেলও। রোববার এক টুইটবার্তায় তিনি বলেন, এই ছবিতে যেসব সংলাপ ব্যবহার করা হয়েছে— তারমধ্যে বেশ কিছু সংলাপ ধর্মীয়ভাবে আপত্তিজনক।
‘আদিপুরুষ’ সিনেমার কাহিনীর সহলেখক মনোজ মুনতাশির শুক্লা অবশ্য বলেছেন, কারো ধর্মানুভূতিতে আঘাত করা তাদের উদ্দেশ্য নয় এবং সংলাপের যেসব লাইন বিতর্ক সৃষ্টি করেছে, সেগুলো পরিবর্তন করা হবে।
‘আদিপুরুষের সংলাপ হিসেবে আমি নিজে ৪ হাজার লাইন লিখেছি। তার মধ্যে মাত্র ৫টি লাইন ঘিরে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। এই লাইনগুলো পরিবর্তন করা হবে। কেউ ধর্মানুভূতিতে আঘাত পেয়ে থাকলে আমরা দুঃখিত,’ টুইটবার্তায় বলেন মনোজ।
সূত্র : বিবিসি
এসএমডব্লিউ