ভারতে মুসলিম তরুণকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ১০ জনের কারাদণ্ড
ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ঝাড়খন্ডে এক মুসলিম তরুণকে পিটিয়ে হত্যার দায়ে ১০ জনকে কারাদণ্ড দিয়েছে দেশটির একটি আদালত | ছবি: বিবিসি
ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ঝাড়খন্ডে এক মুসলিম তরুণকে পিটিয়ে হত্যার দায়ে ১০ জনকে কারাদণ্ড দিয়েছে দেশটির একটি আদালত। চার বছর আগে ওই তরুণকে হত্যার দায়ে তাদের ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, ঝাড়খন্ডে মোটরসাইকেল চুরির অভিযোগে একদল লোক চার বছর আগে তাবরেজ আনসারি (২৪) নামের ওই তরুণকে বেধড়ক মারপিট করে। আক্রান্ত হওয়ার কয়েকদিন পর মারা যান তিনি।
বিজ্ঞাপন
ওই সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, আনসারিকে মারপিট করছে উত্তেজিত জনতা। এ সময় প্রাণ ভিক্ষা করতেও দেখা যায় তাকে। হিন্দু দেবতাদের নামে স্লোগান দিতেও বাধ্য করা হয় এই মুসলিম তরুণকে। ওই সময় ভিডিওটি ভাইরাল হয়ে যাওয়ার পর ভারতে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়।
তার পরিবারের অভিযোগ, আহত হওয়া সত্ত্বেও পুলিশ তাকে চিকিৎসার সুযোগ দেয়নি। তবে রাজ্য পুলিশ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
বিজ্ঞাপন
২০১৯ সালের ১৯ জুন রাতের ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, আতঙ্কিত আনসারিকে একটি বিদ্যুতের খুঁটির সাথে বেঁধে রাখা হয়েছে। তার মুখ দিয়ে রক্ত ঝরছে। লোকজনের মারপিটের হাত থেকে বাঁচতে আর্তনাদ করেন তিনি। হামলাকারীরা তাকে বার বার ‘জয় শ্রী রাম’ বলতে বাধ্য করেন।
হামলাকারীদের নির্দেশ অনুযায়ী, আনসারি জয় শ্রী রাম স্লোগানও দেন। তারপরও রাতভর তার ওপর ব্যাপক নির্যাতন চালানো হয়। পরের দিন আহত অবস্থায় পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয় তাকে। পরে পুলিশ চুরির অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখায় তাকে। গ্রেপ্তারের পর আনসারির সাথে দেখা করতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করে তার পরিবার।
২২ জুন ওই তরুণ বমি বমি ভাব, বমি এবং বুকে ব্যথা হচ্ছে বলে জানান। পরে তাকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু বেধড়ক মারপিটে আহত এই তরুণ মারা যান।
গত সপ্তাহে ঝাড়খন্ডের একটি আদালতের বিচারক অমিত শেখর ১০ জনকে দোষী সাব্যস্ত করে রায় ঘোষণা করেন। এ সময় তিনি বলেন, অভিযুক্তরা অপরাধমূলক হত্যাকাণ্ডের দায়ে দোষী।
সেই সময় প্রাথমিকভাবে হত্যার অভিযোগ না নেওয়ায় পুলিশের বিরুদ্ধে সমালোচনাও হয়েছিল দেশটিতে। পরে সম্পূরক অভিযোগপত্রে সব আসামির বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনে পুলিশ।
দেশটির কট্টরপন্থী হিন্দু জনতার হাতে আনসারির মারপিট বিচ্ছিন্ন কোনও ঘটনা নয়। গত কয়েক বছরে ভারতে প্রায় একই ধরনের কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে।
গরুর মাংস খেয়েছে বা গরু পাচারের চেষ্টা করছে, এমন গুজব ছড়িয়ে তথাকথিত গোরক্ষকরা প্রায়ই দেশটিতে মুসলিমদের ওপর হামলা চালায়। ভারতে গরুকে অনেক হিন্দু পবিত্র বলে মনে করেন। দেশটির অনেক রাজ্যে গরু জবাইয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
বিভিন্ন সময়ে দেশটির সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার নিন্দা করেছেন বিরোধী রাজনীতিকরা। দেশটির বিরোধীদল কংগ্রেসের জ্যেষ্ঠ নেতা রাহুল গান্ধী আনসারির পিটিয়ে হত্যার ঘটনাকে ‘মানবতার কলঙ্ক’ বলে নিন্দা জানিয়েছিলেন।
সমালোচকরা বলছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হিন্দু জাতীয়তাবাদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০১৪ সাল থেকে দেশটিতে মুসলিম-বিরোধী সহিংসতা বেড়েছে। তারা বলছেন, নরেন্দ্র মোদি এই ধরনের হামলার দ্রুত বা কঠোর নিন্দা জানাননি।
সূত্র: বিবিসি।
এসএস