বিউটি পার্লার বন্ধের প্রতিবাদে রাস্তায় নামলেন আফগান নারীরা
আফগানিস্তানে বিউটি পার্লার বন্ধের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছেন নারীরা। এই নারীদের প্রায় সবাই সরকারি নির্দেশে বন্ধ হয়ে যাওয়ার মুখে থাকা বিভিন্ন পার্লারের মালিক ও কর্মচারী।
বুধবার রাজধানী কাবুলের বুচের স্ট্রিট এলাকায় প্রায় ৫০ জন এই বিক্ষোভে অংশ নেন বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে এএফপি। কাবুলের এই এলাকায় বেশ কয়েকটি বিউটি পার্লার রয়েছে।
বিজ্ঞাপন
এএফপির প্রতিবেদেন অনুসারে, বুধবার সকালে বুচের স্ট্রিট এলাকায় জড়ো হন নারীরা। এ সময় তাদের বেশ কয়েকজনের হাতের প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, ‘আমাদের রুটি-পানি কেড়ে নেবেন না।’
কাবুলের রাস্তায় সব সময় টহল দিয়ে বেড়ায় ক্ষমতাসীন তালেবান সরকারের পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা, কোনো এলাকায় বিক্ষোভ ঘটলে তাৎক্ষণিকভাবে সেটি ছত্রভঙ্গ করে দেওয়াই তাদের কাজ।
বিজ্ঞাপন
তবে বুধবার বুচের স্ট্রিটের নারীদের প্রতিবাদী অবস্থান ছত্রভঙ্গ করতে তাৎক্ষণিকভাবে তারা এগোননি বলে জানিয়েছে এএফপি। কিছু সময় পরে অবশ্য ফাঁকা গুলি এবং জলকামান ব্যবহার করে বিক্ষোভকারী নারীদের সরিয়ে দেওয়া হয়।
পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের আসার আগ পর্যন্ত খানিকটা সময় পেয়েছিলেন প্রতিবাদী নারীরা। এই সময়ের মধ্যে তারা সমাবেশের ছবি তুলে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেন, উপস্থিত সাংবাদিকদের ছবি তুলতে দেন এবং তাদের সঙ্গে কথাও বলেন।
গত মাসে একটি নোটিশ জারি করে ক্ষমতায় আসীন কট্টর ইসলামপন্থী তালেবান সরকারের ‘পুণ্যের প্রচার ও পাপের দমন’ মন্ত্রণালয়। তালেবান গোষ্ঠীর শীর্ষ নেতা হেবায়েতউল্লাহ আখুন্দজাদা স্বাক্ষরিত সেই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আগামী এক মাসের মধ্যে দেশের সব বিউটি পার্লার চিরতরে বন্ধ করে দিতে হবে।’
নোটিশে আরও বলা হয়, ‘আফগানিস্তানের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে বিউটি পার্লারের পরিষেবা গ্রহণ এক প্রকার অর্থের অপচয়— তাছাড়া বিউটি পার্লারে যাওয়া-আসা করা ও কাজ করা ইসলামসম্মত নয়।’
বুধবারের প্রতিবাদ সমাবেশে অংশ নেওয়া এক পার্লারকর্মী এএফপিকে বলেন, ‘এটা আমাদের রুটি-রুজির ব্যাপার। আমরা সরকারের প্রতিনিধি ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করতে চাই যে এই নির্দেশ বাস্তবায়ন শুরু হলে আমরা কীভাবে আমাদের পরিবার পরিজনদের মুখে খাবার তুলে দেবো। এ কারণেই আজকের প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছিল।’
‘কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য— কেউ আমাদের সঙ্গে আলোচনা করার জন্য এগিয়ে আসেনি। বরং ফাঁকাগুলি ও জলকামান দিয়ে আমাদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হলো।’
আফগানিস্তানের অধিকাংশ বিউটি পার্লার গড়ে উঠেছে ২০০১ সালে মার্কিন বাহিনীর হাতে তালেবান গোষ্ঠীর পতনের পর গত ২০ বছরে। এর আগে ১৯৯৬ সালে যখন প্রথমবার ক্ষমতা দখল করেছিল তালেবান, সে সময় দেশটিতে নারীদের সাজসজ্জার ব্যাপারটি গোপনে করা হতো।
মার্কিন ও ন্যাটো বাহিনী আফগানিস্তান থেকে বিদায়ের পর ২০২১ সালের ১৫ আগস্ট দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতা দখল করে তালেবানগোষ্ঠী এবং তারপর প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে তারা আঘাত হানে নারীদের শিক্ষার ওপর। দেশজুড়ে মেয়েদের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্কুলগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়, সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়েও নারীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
গত প্রায় ২ মাস আগে আগে তালেবান সরকারে ‘পুন্যের প্রচার ও পাপের দমন’ মন্ত্রণালয় পার্ক, রেস্তোঁরা, ব্যয়ামাগার এমনকি গণশৌচাগারেও নারীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত মাসে বন্ধ করতে বলা হয়েছে দেশটির সব বিউটি পার্লার।
এসএমডব্লিউ