নন্দীগ্রামে তুমুল উত্তেজনা, আদালতে যাওয়ার হুঁশিয়ারি মমতার
ভোট ঘিরে তুমুল উত্তেজনা দেখা দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের ‘হটস্পট’ নন্দীগ্রামে। ভারতের কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপি নন্দীগ্রাম আসনটি জিততে সীমাহীন অনিয়ম করেছে অভিযোগ করে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল কংগ্রেসের সভানেত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় জানিয়েছেন, নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে আদালতে যাবে তৃণমূল কংগ্রেস।
বৃহস্পতিবার নন্দীগ্রামের বয়াল মক্তব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোটকেন্দ্র থেকে সাংবাদকর্মীদের তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানানো হয়েছে। ৬৩টি অভিযোগ পড়েছে। কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশেই এমনটা করা হচ্ছে। আমরা আদালতে যাব। আইনি ব্যবস্থা নেব।’
বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবার পশ্চিমবঙ্গে শুরু হয়েছে দ্বিতীয় দফার বিধানসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। রাজ্যের ৩৯টি আসনে ভোট হবে এই দিনে। এই আসনগুলোর মধ্যে রয়েছে এবারের নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে স্পর্ষকাতর আসন নন্দীগ্রাম। তৃণমূল সভানেত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় নিজে এই আসনে দাঁড়িয়েছেন , আর এখানে তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপি প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী, একসময় যিনি তৃণমূলের কেন্দ্রীয় নেতা ও মমতার বিশেষ আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
বৃহস্পতিবার সকালে ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার পর থেকেই নন্দীগ্রামের বয়াল, গোকুলনগর, সোনাচূড়সহ একাধিক এলাকা থেকে নানা অভিযোগ সামনে আসছিল। স্থানীয় তৃণমূল কংগ্রেসের স্থানীয় নেতা-কর্মী ও নির্বাচনী এজেন্টরা অভিযোগ জানাচ্ছিলেন, সেখানকার কোনো ভোটকেন্দ্রে তৃণমূল এজেন্টদের বসতে দেওয়া হয়নি। এক জন এজেন্ট গেলেও তাকে মেরে তাড়িয়ে দেন বিজেপি কর্মীরা। ছিঁড়ে দেওয়া হয় তার কাগজপত্র।
বিজ্ঞাপন
এ ব্যাপারে একাধিবার জানানোর পরও কেন্দ্রীয় বাহিনীও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ করেন তারা। দলের নেত্রীকে তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকরা আরো বলেন, বয়ালের ওই বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনীর সহায়তায় স্থানীয় ভোটারদের সরিয়ে দিয়ে বিজেপির কর্মী-সমর্থকরা অবাধে ভোট দিচ্ছে।
একই কথা বলেছেন সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দারাও। মমতার কাছে অভিযোগ জানিয়ে তারা বলেন, কেন্দ্রীয় বাহিনী তাদের ভোট দিতে বাধা দিচ্ছে, মারধর করছে। মমতার কাছে পুনর্নির্বাচনের দাবিও জানিয়েছেন তারা।
অভিযোগ খতিয়ে দেখতে বৃহস্পতিবার দুপুর সোয়া একটার দিকে বয়াল মক্তব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোটকেন্দ্রে গিয়ে পৌঁছান মমতা বন্দোপাধ্যায়। তিনি সেখানে পৌঁছতেই তাকে দেখে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দেওয়া শুরু করেন বিজে-র কর্মী-সমর্থকরা। ফলে, পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে; সরাসরি সঙ্ঘাতে জড়িয়ে পড়েন তৃণমূল এবং বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা।
পরস্পরের সঙ্গে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন তারা, শুরু হয় এলোপাথাড়ি ঢিলবৃষ্টিও। পরিস্থিতি সামাল দিতে এগিয়ে আসে রাজ্য পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনী। দুই শিবিরকে আলাদা করে দেয় তারা। কিন্তু বুথের বাইরের পরিস্থিতি শান্ত না হওয়ায়, বুথের ভিতরই আটকে পড়েন মমতা। তাঁকে অন্য রাস্তা দিয়ে বার করিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল, কিন্তু যথেষ্ট সংখ্যক কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন না থাকায় তা হয়ে ওঠেনি। বাধ্য হয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে মানবশৃঙ্খল গড়ে বিক্ষোভকারীদের আটকানোর চেষ্টা করা হয়।
এদিকে কার্যত অবরুদ্ধ অবস্থায় ওই ভোটকেন্দ্রে বসেই পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় এবং সাংবাদিকদের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন মমতা বন্দোপাধ্যায়।
তিনি বলেন, ‘আমরা নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ জানিয়েছিলাম, পশ্চিমবঙ্গ নির্বাচনে কেন্দ্রীয় বাহিনীর যেসব সদস্য দায়িত্বপালন করবেন, বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলো থেকে যেন তাদের না নেওয়া হয়। কিন্তু আমাদের সেই অনুরোধ রাখে নি নির্বাচন কমিশন।’
‘আমি এখন ভোটকেন্দ্রের ভেতর আছি। বাইরে যারা স্লোগান দিচ্ছে, তাদের স্লোগান শুনেই বোঝা যায়, বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলো থেকে এসেছে তারা।’
‘আরো স্পষ্ট করে বললে, বিহার ও উত্তরপ্রদেশের গুন্ডারা এসে ঝামেলা পাকাচ্ছে। যারা ঝামেলা করছে, এক জনও বাংলা জানে না। সব হিন্দি বলছে।’
তৃণমূল কংগ্রেস সূত্র জানিয়েছে, দলের কেন্দ্রীয় পর্যায়ের জ্যেষ্ঠ নেতা ডেরেক ও ব্রায়েন বৃহস্পতিবার নন্দীগ্রামের ঘটনা তুলে ধরে ইতোমধ্যে ভারতের নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়েছেন। চিঠিতে তিনি বলেন, ‘নন্দীগ্রামের ৬,৭, ২০, ৪৯, ২৭, ২১, ২৬, ১৩, ১৬২, ২৫৬, ২৬২, ১৬৩ ও ২০ নাম্বার ভোট কেন্দ্রে সকাল থেকেই ভীড় করেছে বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা। এই ভোটকেন্দ্রগুলোতে স্থানীয় কোনো ভোটারকে তারা ঢুকতে দেয়নি, ইভিএম দখল করেছে এবং ইচ্ছেমত ভোট দিয়েছে।’
এসএমডব্লিউ