২৭ বছর পর থাই রাজার ২য় সন্তানের আশ্চর্য প্রত্যাবর্তন
২৭ বছর পর আশ্চর্যজনকভাবে প্রকাশ্যে এসেছেন থাইল্যান্ডের রাজপরিবারের এক সদস্য। থাই রাজপরিবারের এই সদস্যের নাম ভাচারেসর্ন ভিভাচরাওংসে এবং তিনি থাইল্যান্ডের রাজার দ্বিতীয় জ্যেষ্ঠ পুত্র।
মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) থাইল্যান্ডে সুবিধাবঞ্চিত পরিবারগুলোর শিশুদের একটি কেয়ার সেন্টার পরিদর্শন করেন তিনি। দীর্ঘ ২৭ বছর পর ভিভাচরাওংসের দেশে ফিরে আসা এবং শিশু-যত্ন কেন্দ্র পরিদর্শনে যাওয়াকে আশ্চর্য প্রত্যাবর্তন হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
বিজ্ঞাপন
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, থাইল্যান্ডের রাজা মহা ভাজিরালংকর্নের দ্বিতীয় জ্যেষ্ঠ পুত্র ২৭ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো স্বদেশে ফিরে এসেছেন এবং মঙ্গলবার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশটিতে সুবিধাবঞ্চিত পরিবারের শিশুদের একটি কেয়ার সেন্টার পরিদর্শন করেছেন।
রয়টার্স বলছে, ৪২ বছর বয়সী ভাচারেসর্ন ভিভাচরাওংসের এই আকস্মিক প্রত্যাবর্তন এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হলো যখন থাই রাজপরিবারের জন্য কঠিন সময় যাচ্ছে। থাই রাজার বড় মেয়ে গত বছরের ডিসেম্বর থেকে কোমায় রয়েছেন।
ভাচারেসর্ন ভিভাচরাওংসে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের একটি আইন সংস্থায় কাজ করেন। মঙ্গলবার তিনি রাজপরিবারের সহায়তায় পরিচালিত ফাউন্ডেশন ফর স্লাম চাইল্ড কেয়ার পরিদর্শন করেন এবং শুভাকাঙ্ক্ষীদের শুভেচ্ছা জানান। জিন্স এবং কালো শার্ট পরিহিত অবস্থায় তিনি তার পিতা ও তার পিতামহ রাজা ভূমিবল আদুলিয়াদেজের প্রতিকৃতির সামনে ছবির তোলার জন্য দাঁড়ান।
ব্যাংকক ফাউন্ডেশনে ভাচারেসর্ন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি ফিরে আসতে পেরে আনন্দিত... আমি দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে দূরে ছিলাম’। তিনি বলেন, ‘ফিরে এসে যেন আমার স্বপ্ন বাস্তব হয়েছে।’
থাইল্যান্ডের রয়্যাল প্যালেস এই সফর নিয়ে কোনও মন্তব্য করেনি। এছাড়া প্যালেস হাউসহোল্ড ব্যুরোও এই বিষয়ে মন্তব্য করেনি বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
বার্তাসংস্থাটি বলছে, ভাচারেসর্নের প্রত্যাবর্তনে অনেক থাই নাগরিক অবাক হয়েছেন। ব্যাংককের ‘টুক-টুক’ অটো-রিকশায় তার একটি ছবি সোমবার তিনি তার ফেসবুক পেজে পোস্ট করেছেন এবং সেটি হাজার হাজার লাইক পেয়েছে। এছাড়া আগে টুইটার নামে পরিচিত সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে #SonOfTenReturnToThailand হ্যাশট্যাগটি প্রায় ৩ লাখ ৯০ হাজার বার ব্যবহার করা হয়েছে।
অবশ্য যারা ভাচারেসর্নকে দেখেছেন তারা বেশ মুগ্ধ হয়েছেন। অঙ্গসানা সিপ্রাসিত নামে ৬৬ বছর বয়সী এক ব্যক্তি বলেন, ‘আমি খুব অনুপ্রাণিত, তিনি দীর্ঘদিন ধরে দূরে ছিলেন। আমার কাছে তিনি এখনও রাজপরিবারের সদস্য।’
রাজা ভাজিরালংকর্নের দ্বিতীয় স্ত্রী সুজারিনি বিভাচরাওংসের চার ছেলের মধ্যে ভাচারেসর্ন দ্বিতীয়। সুজারিনি একজন সাবেক অভিনেত্রী ছিলেন এবং তার সঙ্গে তৎকালীন যুবরাজ (ভাজিরালংকর্ন) ১৯৯৬ সালে বিবাহবিচ্ছেদ করেন।
ভাচারেসর্ন ভিভাচরাওংসের কোনও আনুষ্ঠানিক রাজকীয় উপাধি নেই। ১৯৯৬ সালের বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনার পরে তিনি, তার মা, তিন ভাই এবং এক বোন বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। মূলত সেসময় তার মাকে প্রকাশ্যে ব্যভিচারের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছিল এবং তারা বিদেশে চলে যান।
অবশ্য ভাচারেসর্নের ছোট বোনকে পরবর্তীতে রাজপরিবারে অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং রাজকীয় উপাধি দেওয়া হয় প্রিন্সেস সিরিভান্নাভরি নারিরতনা। তিনি একজন ফ্যাশন ডিজাইনার এবং অশ্বারোহী। ২০১৪ সালের এশিয়ান গেমসে থাইল্যান্ডের হয়ে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন।
রয়টার্স বলছে, তিনবার তালাকপ্রাপ্ত রাজা ভাজিরালংকর্নের সাত সন্তান রয়েছে। তিনি রানি সুথিদাকে বিয়ে করেছেন। সুথিদা হচ্ছেন ভাজিরালংকর্নের সাবেক প্রধান দেহরক্ষী এবং ২০১৯ সালে রাজ্যাভিষেকের আগে তাকে বিয়ে করেন বর্তমান থাই রাজা।
৭১ বছর বয়সী রাজা মহা ভাজিরালংকর্ন অবশ্য আনুষ্ঠানিকভাবে তার উত্তরাধিকারীর নাম এখনও ঘোষণা করেননি।
এছাড়া গত বছরের ডিসেম্বরের শেষের দিকে থাইল্যান্ডের এই রাজার জ্যেষ্ঠ সন্তান রাজকুমারী বজ্রকিটিয়াভা নরেন্দিরা দেব্যাবতী হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে গুরুতরভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। আর তারপর থেকেই কোমায় রয়েছেন ৪৪ বছর বয়সী এই রাজকুমারী।
টিএম