পরমাণু চুক্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-ইরান ‘বৈঠক’
২০১৫ সালে ছয় পরাশক্তির সঙ্গে তেহরানের স্বাক্ষরিত যে পরমাণু চুক্তি থেকে তৎকালীন ট্রাম্প প্রশাসন ২০১৮ সালে ওয়াশিংটনকে প্রত্যাহার করে নিয়েছিল সেই চুক্তিতে ফেরা নিয়ে মঙ্গলবার ভিয়েনায় যুক্তরাষ্ট্র এবং ইরানের মধ্যে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু হচ্ছে।
গত জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেন শপথ নেওয়ার পর এই ওয়াশিংটনের এই চুক্তিতে ফেরার বিষয়টি আলোচনায় আসে। চুক্তিতে দুই দেশের প্রতিশ্রুতি রক্ষা নিয়ে আলোচনা শুরু হচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
ওয়াশিংটন চুক্তি থেকে বের হয়ে ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করা ছাড়াও নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এতে এমনিতেই ভঙ্গুর ইরানের অর্থনীতি আরও বিপদে পড়ে। ওয়াশিংটন চুক্তি ত্যাগ করায় ইরানও চুক্তিতে তাদের প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘন করে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ শুরু করলে চুক্তিটির স্থায়ীত্ব নিয়ে শঙ্কা দেখা দেয়।
দীর্ঘদিনের দুই আন্তর্জাতিক প্রতিপক্ষের সঙ্গে ‘প্রত্যক্ষ ও অপ্রত্যক্ষ আলোচনার’ বিষয়টি তেহরান বারবার প্রত্যাখ্যান করেছে। ওয়াশিংটন সোমবার বলেছে, চুক্তি পুনরুদ্ধারের বিষয়ে ইরানের সঙ্গে পরোক্ষ আলোচনা কঠিন বলে মনে করছে তারা। তেহরান এবং ওয়াশিংটন উভয়ই প্রাথমিক কোনো অগ্রগতির পূর্বাভাস দেয়নি।
বিজ্ঞাপন
পশ্চিমা এক কূটনীতিক শুক্রবার ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এ প্রসঙ্গে বলেন, ভিয়েনায় তৃতীয় পক্ষের কূটনীতির (শাটল-ডিপ্লোমেসি) মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে এ নিয়ে আলোচনার পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সাঈদ খাতিবজাদেহ এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘এই চুক্তিতে অন্য পক্ষগুলো যা করে তা হলো সেটা তাদের বিষয়। তারা কোথায় এবং কীভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আলোচনা করবে তা তাদের ওপর নির্ভর করে। ভিয়েনায় কোনো পর্যায়ে ইরানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মার্কিন প্রতিনিধিদের আলোচনা হবে না।’
মঙ্গলবার আলোচনার সম্ভাবনা নিয়ে নতুন করে সন্দেহ জাগিয়ে এক ইরানি কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেছেন, ‘(ভিয়েনায়) বৈঠককালে আমাদের এজেন্ডা হবে ইরানের বিরুদ্ধে সমস্ত মার্কিন নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া। যেহেতু আমাদের সর্বোচ্চ নেতা বারবার বলেছেন, এর চেয়ে কম কোনো কিছু বলে আলোচনা তেহরান মেনে নেবে না।’
ইরানের রাষ্ট্রীয় বিষয়ে সবশেষ যার কথার ওপর ভিত্তি করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় দেশটির সেই সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি তেহরানের ওপর আরোপিত মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ধীরে ধীরে তুলে নেওয়ার ঘোরবিরোধী।
বাইডেন প্রশাসন চুক্তিটি পুনরুদ্ধারের ইচ্ছা প্রকাশ করলেও বলে আসছে, এর জন্য আলোচনা প্রয়োজন। কিন্তু উভয়পক্ষই চুক্তির প্রতিশ্রুতি ফের মেনে চলা শুরু করে ওয়াশিংটনের সাথে আলোচনায় বসার বিপক্ষে তেহরান।
তেহরান বলছে, ‘পরমাণু নিয়ে নেওয়া পদক্ষেপ থেকে ইরান তখনই ফিরে আসবে যখন যুক্তরাষ্ট্র তেহরানের ওপর আরোপিত সকল ধরনের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেবে। এটা নিশ্চিত হওয়া মাত্রই ইরান কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের পদক্ষেপ থেকে দ্রুতই সরে আসবে। এই কাজে কোনো সময় লাগবে না তখন।’
মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর অবশ্য জানিয়েছে, ভিয়েনা আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু থাকবে পরমাণু চুক্তির প্রতিশ্রুতি মেনে চলার বিষয়ে ‘পূর্ণ সম্মতিতে ফিরে যাওয়ার জন্য ইরানকে যে পারমাণবিক পদক্ষেপ নিতে হবে’ তার দিকে।
এএস