আমাকে পিটিয়ে হত্যার প্রেক্ষাপট তৈরি করা হচ্ছে: ভারতের মুসলিম এমপি
বহুজন সমাজ পার্টির (বিএসপি) মুসলিম সাংসদ দানিশ আলি
ভারতের সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভায় বিজেপির সাংসদ রমেশ বিধুরির সাম্প্রদায়িক মন্তব্য ঘিরে দেশটিতে ব্যাপক বিতর্ক শুরু হয়েছে। বিধুরির সাম্প্রদায়িক মন্তব্যের পর বিজেপির সাংসদ নিশিকান্ত দুবের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ করেছেন বহুজন সমাজ পার্টির (বিএসপি) মুসলিম সাংসদ দানিশ আলি। তিনি বলেছেন, বিজেপির সাংসদরা আমাকে পিটিয়ে হত্যার প্রেক্ষাপট তৈরি করছেন।
তবে বিজেপির সাংসদ রমেশ বিধুরির সাম্প্রদায়িক মন্তব্যের নিন্দা জানিয়েছেন দুবে। একই সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জাতপাত নিয়ে কথা বলায় দানিশ আলীরও সমালোচনা করেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) দেওয়া বার্তায় দুবে বলেছেন, ‘কোনও সভ্য সমাজ লোকসভায় রমেশ বিধুরির দেওয়া বক্তব্যকে সঠিক বলে মেনে নিতে পারে না... তবে লোকসভার স্পিকারকেও দানিশ আলীর অশালীন কথা ও আচরণের তদন্ত করা উচিত।’
তিনি বলেছেন, ‘লোকসভার নিয়ম ও প্রক্রিয়া অনুযায়ী, নির্ধারিত সময়ের মাঝে বক্তব্য দেওয়ার সময় একজন সাংসদকে বাধাদান, আসনে বসে কথা বলাও শাস্তির আওতায় আসে। আমি গত ১৫ বছর ধরে এমপি। লোকসভার অধিবেশন শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আমি সেখানেই থাকি। এমন একটি দিন দেখতে পাব, তা আমি কখনই ভাবিনি।’
বিজ্ঞাপন
— Al Jazeera English (@AJEnglish) September 22, 2023
অভিযোগের বিষয়ে দানিশ আলী বলেন, বিজেপি সাংসদের মন্তব্যের পেছনের উদ্দেশ্য হলো সংসদের বাইরে তাকে শারীরিকভাবে পিটিয়ে হত্যা করা। তিনি বলেন, সংসদের ভেতরে ইতিমধ্যে মৌখিকভাবে এই কাজটা করা হয়ে গেছে।
রোববার দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা পিটিআইকে দানিশ আলী বলেছেন, ‘বিজেপির সাংসদ নিশিকান্ত দুবের চিঠি (লোকসভা স্পিকারের কাছে) সংসদের বাইরে আমাকে পিটিয়ে হত্যার প্রেক্ষাপট তৈরি করছে। কারণ আমার ‘ভার্বাল লিঞ্চিং’ ইতিমধ্যে ঘটে গেছে।
গত বৃহস্পতিবার দেশটির সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভায় চন্দ্রযান-৩ মিশনের সাফল্য নিয়ে আলোচনা চলাকালীন বিজেপির সাংসদ রমেশ বিধুরি বিএসপিদলীয় এমপি দানিশ আলীর বিরুদ্ধে আপত্তিকর এবং সাম্প্রদায়িক শব্দ ব্যবহার করেন। ভাষণ দেওয়ার সময় মুসলিম এমপি দানিশ আলীকে লক্ষ্য করে রমেশ বিধুরিকে বলতে শোনা যায়, ‘তুমি চরমপন্থী... আমি তোমাকে বলছি, তুমি খতনা করেছ।’
চরমপন্থী শব্দটি ভারতে মুসলমানদের উদ্দেশ্য করে গালি হিসেবে প্রায়ই ব্যবহার করা হয়। এমনকি ভাইরাল সেই ভিডিওর শেষের দিকে মুসলিম এমপিকে উদ্দেশ্য করে দেওয়া স্পষ্ট হুমকিতে বিধুরি বলেন, ‘আমি এই মোল্লাকে বাইরে দেখে নেবো।’
আলজাজিরা বলছে, ‘মোল্লা’ দক্ষিণ এশিয়ার মুসলমানদের জন্য আরেকটি নিন্দনীয় শব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আর সংসদে মুসলিম এমপিকে উদ্দেশ্য করে বিজেপির রমেশ বিধুরি যখন এসব ভাষায় কথা বলছিলেন, তখন তার পাশে বসে অন্তত দুইজন সিনিয়র বিজেপি নেতা এবং সাবেক একজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে হাসতে দেখা যায়।
বিধুরির মন্তব্য ঘিরে দেশটিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে সাধারণ জনগণের মাঝে ব্যাপক বিতর্ক শুরু হয়। অনেকেই বিধুরির মন্তব্যের নিন্দা জানান। শুক্রবার বিজেপির পক্ষ থেকে বিধুরিকে কারণ দর্শানোর নোটিশ ও লোকসভায় করা তার আচরণের ব্যাখ্যাও দিতে বলা হয়।
সূত্র: এনডিটিভি, আলজাজিরা।
এসএস