কৃষিজমি ও কৃষকের বন্ধু নামে পরিচিত কেঁচো প্রকৃতপক্ষে বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম শস্য এবং ডাল জাতীয় রবিশস্য উৎপাদনকারী। এক গবেষণায় দেখা গেছে, কেঁচোর উপস্থিতির কারণে প্রতি বছর পৃথিবীর শস্যভাণ্ডারে যোগ হয় ১৪ কোটি টন চাল, গম, ভুট্টা, যব।

শতকরা হিসেবে এই হার এ বছরে বিশ্বের মোট উৎপাদিত শস্যের ৬ দশমিক ৫ শতাংশ।

এছাড়া প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে যে পরিমাণ শিম, বাদাম, বিভিন্ন ধরনের ডাল ও ছোলা উৎপাদিত হয়, তার ২ দশমিক ৩ শতাংশের ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখে কেঁচো।

যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক স্টিভেন ফন্টের নেতৃত্বাধীন একটি গবেষক দলের সাম্প্রতিক বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এই তথ্য। গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কৃষিজমির মাটির নিচে কেঁচোদের বসবাস, চলাচল, খাদ্যগ্রহণ, মলমূত্র ত্যাগ এবং বংশবিস্তারের জেরে মাটিতে বিদ্যমান জৈব উপদানগুলোর গুণগত পরিবর্তন ঘটে। এতে একদিকে মাটির ভেতরে বায়ু চলাচল এবং উর্বরতা, ফসলের জন্য প্রয়োজনীয় পানি ধরে রাখার ক্ষমতা বাড়ে; অন্যদিকে ফসলের জন্য ক্ষতিকর কার্বন আলাদা হয়ে যায়।  

কৃষিজমির এসব গুণগত পরিবর্তনের প্রভাবে ফসলের উৎপাদনও বাড়ে।

গবেষক দলের প্রধান স্টিভেন ফন্টে যুক্তরাজ্যের জাতীয় দৈনিক গার্ডিয়ানকে বলেন, ‘আমরা সবাই জানি কেঁচো কৃষি এবং কৃষকের বন্ধু; কিন্তু কেঁচো যে আসলে কৃষিজমির জীববৈচিত্র রক্ষার ক্ষেত্রে কত বড় ইঞ্জিনিয়ার এবং কেবলমাত্র কেঁচোর কারণে প্রতি বছর এই বৈশ্বিক খাদ্যের বাজার কী পরিমাণে সমৃদ্ধ হচ্ছে—সে সম্পর্কে এতদিন স্পষ্ট ধারণা ছিল না আমাদের। গবেষণায় আমরা এই জায়গাটিতে আলো ফেলতে চেয়েছি।’

ফন্টে আরও বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের প্রচলিত ধারণা হলো মাটিতে বেশি বেশি সার, কীটনাশক ও সেচ দিলেই বেশি ফসল ফলে। কিন্তু এটি পুরোপুরি সঠিক নয়। আপনি যদি প্রাকৃতিকভাবে মাটির উর্বরাশক্তি বাড়াতে পারেন, একটি সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র গড়ে উঠতে দেন— সেক্ষেত্রে জমিতে স্বাভাবিকের চেয়ে অতিরিক্ত সার-কীটনাশক-সেচের প্রয়োজন নেই।’

ফন্টে জানিয়েছেন, বিশ্বের কৃষিপ্রধান বিভিন্ন অঞ্চলের জমিতে কেঁচোর উপস্থিতি এবং সেসব জমির গুণগত মান পরীক্ষা করতে গিয়ে তারা দেখেছেন, বিশেষ করে আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকার কৃষি উৎপাদনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় রয়েছে কেঁচো। যদি কেঁচো না থাকতো— সেক্ষেত্রে আফ্রিকার সাব সাহারা অঞ্চল ও দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোর বাৎসরিক কৃষি উৎপাদন ৮ থেকে ১০ শতাংশ কমে যেতো।

তবে এ ব্যাপারে আরও উচ্চতর ও গভীর বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান প্রয়োজন উল্লেখ করে স্টিভেন ফন্টে বালেন, ‘আসলে এখন পর্যন্ত মাটি আমাদের কাছে একটি বিশাল আকৃতির ব্ল্যাকবক্সের মতো। আমরা এখনও মাটিকে সম্পূর্ণ বুঝে উঠতে পারিনি। আমরা এই গবেষণার মধ্যে দিয়ে এই বার্তা দিতে চেয়েছি যে মাটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোনো কিছুই ফেলনা নয়।’

সূত্র : গার্ডিয়ান

এসএমডব্লিউ