নোবেল জিতে যেভাবে ইরানের ক্ষমতাসীনদের জবাব দিলেন নার্গিস
নার্গিস মোহাম্মাদি
ইরানের কারাবন্দি মানবাধিকারকর্মী ও আইনজীবী নার্গিস মোহাম্মাদি নোবেল জয়কে দেশটির কট্টর ইসলামপন্থী শাসকগোষ্ঠীর জন্য ‘উপযুক্ত জবাব’ এবং সরকারবিরোধী আন্দোলনকারীদের প্রেরণা হিসেবে দেখছেন আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষকরা। ইরানের ক্ষমতাসীনরা যে তার নোবেলজয়ে বিন্দুমাত্র খুশি নয়, তা ও ইতোমধ্যে স্পষ্ট।
শান্তিতে নোবেল দেওয়া শুরু হয়েছে ১৯০১ সাল থেকে। শুরু থেকেই নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি এই পুরস্কার প্রদান করে আসছে।
বিজ্ঞাপন
১৯০১ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত শান্তি ও মানবতা সংক্রান্ত বিভিন্ন খাতে অবদানের জন্য নোবেল জয় করেছেন মোট ১০৪ জন। চলতি বছর ১০৫ তম ব্যক্তি এবং ১৯তম নারী হিসেবে শান্তিতে নোবেল পেলেন নার্গিস।
আরও পড়ুন : শান্তিতে নোবেল পেলেন ইরানের নার্গিস মোহাম্মাদি
বিজ্ঞাপন
ইরানের মানবাধিকার রক্ষার সংগ্রামে বছরের পর বছর ধরে আপসহীন অবস্থান ধরে রাখার স্বীকৃতি হিসেবে নার্গিস মোহাম্মাদি ২০২৩ সালের নোবেলের জন্য মনোনীত করেছে নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি। শুক্রবার সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে চলতি বছরের নোবেলজয়ীর নাম ঘোষণার সময় নার্গিসকে ইরানের সাম্প্রতিক সরকারবিরোধী আন্দোলনের ‘অবিসংবাদিত নেতা’ বলে আখ্যা দিয়েছেন নোবেল কমিটির প্রধান বেরিত রেইস-অ্যান্ডারসেন। তাকে অবিলম্বে কারাগার থেকে মুক্তি দিতে ইরানের ক্ষমতাসীন শাসকগোষ্ঠীকে আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।
বেরিত রেইস অ্যান্ডারসেন বলেন, ‘গত বছর ‘নারী-জীবন-স্বাধীনতা’ নামে যে আন্দোলন শুরু করেছিলেন নার্গিস, তা ইতোমধ্যে ইরানে বৈষম্য ও নিপীড়নের শিকার লাখ লাখ নারীর প্রতিবাদের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছে।’
‘এ পুরস্কার সেই আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা নার্গিস মোহাম্মাদি সংগ্রামী জীবনের সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। যদি ইরানের সরকার সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়, সেক্ষেত্রে তারা নার্গিসকে মুক্তি দেবে এবং তিনি যেন এই পুরস্কার গ্রহণ করতে এখানে আসতে পারেন— সেজন্য সহযোগিতা করবে।’
তবে ইরানের ক্ষমতাসীন কট্টর ইসলামপন্থী সরকার যে নার্গিসের নোবেলজয়ে সন্তুষ্ট নয়, তা বলাই বাহুল্য। শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে ইরানের কোনো সংবাদমাধ্যম নার্গিস মোহাম্মাদির নোবেল জয়ের সংবাদ প্রকাশ করেনি।
বেশ কিছুক্ষণ পর দেশটির আধা সরকারি সংবাদমাধ্যম ফার্স এক প্রতিবাদেনে জানিয়েছে, ‘ইরানের জাতীয় নিরাপত্তাবিরোধী কর্মকাণ্ডের জন্য পশ্চিমাদের কাছ থেকে পুরস্কার পেলেন নার্গিস মোহাম্মাদি।’
পেশায় আইনজীবী নার্গিস মোহাম্মদি ইরানের মানবাধিকার সংস্থা দ্য ডিফেন্ডার্স অব হিউম্যান রাইটস সেন্টারের উপপ্রধান। এই সংস্থাটির প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধানের নাম শিরিন এবাদি, যিনি ২০২৩ সালে শান্তিতে নোবেল পেয়েছিলেন।
সাম্প্রতিক সরকারবিরোধী আন্দোলনে সংশ্লিষ্টতার জন্য নার্গিসকে ১২ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে ইরানের বিচার বিভাগ। বর্তমানে দেশটির এভিন কারাগারে বন্দি আছেন তিনি।
নার্গিসের স্বামী তাঘি রাহমানি তাৎক্ষণিক এক প্রতিক্রিয়ায় রয়টার্সকে বলেন, ‘নোবেল পুরস্কার যে নার্গিসকে আরও উৎসাহিত করবে— তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কারণ এ পুরস্কার আসলে তার ‘নারী-জীবন-স্বাধীনতা’ আন্দোলনের পুরস্কার।’