দিনে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, রাতে পেস্ট্রি তৈরি করেন এই চিকিৎসক
মেডিক্যাল স্কুলে পড়ার সময় শেষের বছরগুলোতে সৌদি আরবের আবদুল্লাহ আলঘুফাইলির শখ ছিল পেস্ট্রি তৈরি করা। পরে এটি তার আসক্তিতে পরিণত হয় এবং শেষ পর্যন্ত পেস্ট্রি তৈরিই পেশায় পরিণত হয়েছে তার।
আলঘুফাইলি এখন দিনে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ এবং রাতে একজন পেস্ট্রি শেফ হিসেবে কাজ করেন। তিনি গত সপ্তাহে তার প্রথম পেস্ট্রির দোকানটি খুলেছেন। রোববার (২২ অক্টোবর) রাতে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আরব নিউজ।
বিজ্ঞাপন
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একটি সাধারণ চিজকেক দিয়ে আবদুল্লাহ আলঘুফাইলির বেকিং যাত্রা শুরু হয়েছিল। রান্নাঘরের কোনও পূর্ব অভিজ্ঞতা ছাড়াই তিনি ইউটিউবে পাওয়া রেসিপি অনুসরণ করে চিজকেক তৈরির উপাদানগুলোকে একত্রে মেশানো এবং ভাঁজ করা শুরু করেন।
বিজ্ঞাপন
কিন্তু বেকিং এবং পেস্ট্রি সম্পর্কে আলঘুফাইলির কৌতূহল মেটাতে পারেনি ইউটিউব। আলঘুফাইলি বলেন: ‘আমি পেস্ট্রির গুণমান বাড়াতে চেয়েছিলাম, কিন্তু সেই পর্যায়ে আমি ইউটিউব থেকে আর কোনও সহায়তা পাচ্ছিলাম না। আর তাই আমি বিষয়টির আরও গভীরে যেতে এবং পেস্ট্রি সম্পর্কে বাস্তব জ্ঞান বাড়ানোর কথা চিন্তা করি।’
আলঘুফাইলি এরপর বইয়ের দোকানে দোকানে ঘুরে বেড়ান এবং বেকিংয়ের বিষয়ে বিস্তারিত জ্ঞান কোথায় পাওয়া যাবে সেটির খোঁজ শুরু করেন। কিন্তু এরপরও বেকিংয়ের মৌলিক বিষয়গুলো বুঝতেই কার্যত সংগ্রাম করছিলেন তিনি।
এরপর ২০১৯ সালের শেষের দিকে মিস্ক ফাউন্ডেশন থেকে বেশ ভালো একটি সুযোগ পান আলঘুফাইলি, আর সেটিই তাকে আজকের পেস্ট্রি শেফ হতে সাহায্য করেছে। তিনি সেসময় সারা বিশ্বের পেস্ট্রি রাজধানী হিসেবে পরিচিত প্যারিসের লে কর্ডন ব্লুতে বেকিং বিজ্ঞান অধ্যয়ন করার সুযোগ পান।
আরব নিউজ বলছে, রিয়াদের কিং সৌদ বিন আবদুল আজিজ ইউনিভার্সিটি ফর হেলথ সায়েন্সে শেষ বর্ষে পড়ার সময় মিস্কের প্রোগ্রামে অধ্যয়নের সুযোগ পান আলঘুফাইলি। তিনি বলছেন, ‘আমি এই বিরল সুযোগটি ফিরিয়ে দিতে পারিনি, যদিও সেখানে পড়াশোনা করতে প্রায় ১০ লাখ সৌদি রিয়াল (২ লাখ ৬৬ হাজার মার্কিন ডলার) খরচ হয়, এর সঙ্গে সেখানে জীবনযাত্রার খরচ যোগ হয়, আমাকে আমার শেষ বর্ষের পড়াশোনা স্থগিত করতে হয়েছিল এবং পুরো এক বছর অনুপস্থিত থাকার ছুটির আবেদন করতে হয়েছিল।’
তিনি বলছেন, ‘এটি করা মোটেই সহজ জিনিস ছিল না। আমাকে আমার পরিবার এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে অনুমোদন নিতে হয়েছিল। এটি মোটেই সহজ ছিল না কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকতে যে ছুটি দেওয়া হয় তার মেয়াদ সবচেয়ে বেশি হলেও তা সাধারণত এক থেকে দুই মাস হয়।’
— Arab News (@arabnews) October 23, 2023
তবে সবকিছু পার করে অনুমোদন পাওয়ার পর আলঘুফাইলি মিশ্রণ বাটি এবং পরিমাপের কাপসহ লাগেজ প্যাক করে বিশ্বের পেস্ট্রি রাজধানীতে চলে যান। পরে ২০২০ সালের প্রথম দিকে লে কর্ডন ব্লুতে প্রোগ্রামটি শুরু করেন আলঘুফাইলি। ঠিক সেসময়ই করোনাভাইরাস মহামারি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।
তিনি বলেন: ‘কোভিড-১৯ মহামারি ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে আমার মনে হলো আমি সময়ের বিরুদ্ধে দৌড়াচ্ছি। কারণ আমি যে সময় প্যারিসে থাকার জন্য এসেছি, আমার মনে হলো তা হয়তো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।’
লকডাউনে সবকিছু স্থবির থাকায় আলঘুফাইলি বাধ্য হয়ে তার বিশ্ববিদ্যালয়ে আবারও ছুটির আবেদন করেন। অনিশ্চিত সবকিছুর মধ্যে নিজের সমস্ত পরিকল্পনাও তখন আলঘুফাইলির কাছে অস্পষ্ট বলে মনে হচ্ছিল। তবে শেষমেষ সবকিছু ভালোভাবে সম্পন্ন হয়।
আলঘুফাইলি লে কর্ডন ব্লুতে তার প্রোগ্রাম শেষ করেন, প্যাস্ট্রিতে ডিপ্লোমা পান এবং তারপরে তার মেডিকেল ডিগ্রি শেষ করতে রিয়াদে ফিরে যান। তিনি বলেন: ‘লে কর্ডন ব্লুতে অধ্যয়ন একজন পেস্ট্রি শেফ হিসাবে আমার দক্ষতাকে অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে, কিন্তু প্যারিসে থাকা এবং সেখানে বিভিন্ন পেস্ট্রির দোকানে কাজ করার ফলে আমি আজকে এতো ভালো শেফ হয়েছি।’
তার দাবি, ‘প্যারিসের পেস্ট্রির দোকানগুলো বিভিন্ন দেশ ও জাতীয়তার শেফ দিয়ে পরিচালিত হয়, তাদের প্রত্যেকেই নিজেদের নিজস্ব সংস্কৃতির স্বাদ অনুযায়ী পেস্ট্রি তৈরি করেন এবং এটি আপনাকে ভিন্ন ভিন্ন স্বাদের একটি কাঠামো তৈরি করতে সক্ষম করে।’
মূলত প্যারিস আলঘুফাইলির ওপর বেশ উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছে এবং এই কারণেই বেকড পণ্যগুলোকে তিনি তার স্বপ্নের ব্যবসার মেনুতে অন্তর্ভুক্ত করার কাজ বেছে নিয়েছেন। তিনি বলছেন: ‘আমি সৌদি কফি ফেস্টিভ্যাল এবং রিয়াদে সৌদি ফিস্ট ফুড ফেস্টিভালে অংশ নিয়েছিলাম, সেখানে স্থানীয় স্বাদের সঙ্গে ক্লিজা মশলার মিশ্রণে বিশেষভাবে তৈরি ওয়াফেলও ছিল।’
আলঘুফাইলি বলছেন, ‘ক্লিজা মশলা দিয়ে তৈরি ওয়াফলগুলো ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় এবং এই খাবারটি আমাকে প্যারিস পর্যন্ত ভ্রমণের সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়। মূলত সৌদি ফ্যাশন কমিশন আমাকে সৌদি আরবের সৃজনশীল প্রতিভা প্রদর্শনের জন্য ফ্রান্সে অনুষ্ঠিত ফ্যাশন সপ্তাহের পপ-আপ ইভেন্টের অংশ নেওয়ার জন্য প্যারিস যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছিল।’
আবদুল্লাহ আলঘুফাইলি গত বৃহস্পতিবার তার প্রথম প্যাস্ট্রির দোকানটি খুলেছেন। নাম দিয়েছেন ‘ফ্লোটেড’। তার দাবি, ফ্লোটেড সৃজনশীল ও অনন্য এবং প্রতি মাসে নতুন আইটেম সামনে আনবে। দোকানের বাইরে একটি কাচের বাক্সের দিকে ইঙ্গিত করে আলঘুফাইলি বলেন: ‘দোকানে কী পণ্য পাওয়া যাবে তা এই বাক্সটিতে প্রদর্শন করা হবে।’
তার ভাষায়, ‘ফ্লোটেড নামটি এই ধারণা থেকে এসেছে যে, এই দোকানের নির্দিষ্ট কোনও মেনু নেই। আমরা যা করছি তা বিভিন্ন ফ্লেভারে ভাসমান। আপনি এখানে কম খরচে সবচেয়ে অভাবনীয়, সুস্বাদু বেকড পণ্যগুলো পেতে পারেন, যা সবাই উপভোগ করতে পারবে।’
টিএম