সম্প্রতি গাজার আল-আহলি আরব নামের একটি হাসপাতালে হামলার ঘটনায় বহু মানুষের প্রাণহানি হয়। সেখানে অসংখ্য আহত ও অসুস্থ মানুষ চিকিৎসা নিচ্ছিলেন

টানা তিন সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে হামলা চালিয়ে আসছে ইসরায়েল। অবিরাম এই হামলায় ইতোমধ্যেই ৮ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে প্রায় সাড়ে ৫ হাজারই নারী ও শিশু।

নিহতদের তালিকায় আছেন বিপুল সংখ্যক বয়স্ক নাগরিকও। এই পরিস্থিতিতে ইসরায়েলকে অবশ্যই গাজার বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের রক্ষা করতে হবে বলে জানিয়ে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। একইসঙ্গে ইসরায়েলি বাহিনীকে অবশ্যই হামাস যোদ্ধা ও বেসামরিক লোকদের পার্থক্য করতে পারতে হবে বলেও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

স্থানীয় সময় রোববার (২৯ অক্টোবর) হোয়াইট হাউস থেকে ইসরায়েলকে এই সতর্কতা দেওয়া হয়। সোমবার (৩০ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হামাস যোদ্ধা ও বেসামরিক নাগরিকদের মধ্যে পার্থক্য বুঝে ইসরায়েলকে অবশ্যই গাজার নিরপরাধ বাসিন্দাদের রক্ষা করতে হবে বলে রোববার হোয়াইট হাউস সতর্ক করে দিয়েছে। এছাড়া যুদ্ধ-বিধ্বস্ত এই ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর জন্য মরিয়া হয়ে আহ্বান জানিয়ে চলেছেন বিশ্ব নেতারা।

গত ৭ অক্টোবর থেকেই গাজায় বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বিমান বাহিনী। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ভূখণ্ডটিতে ইসরায়েলি হামলায় নিহত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৫ জনে। নিহতদের মধ্যে ৩ হাজার ৩৪২ শিশু, ২ হাজার ৬২ জন নারী এবং ৪৬০ জন বয়স্ক মানুষ।

এছাড়া  মসজিদ, গির্জা, স্কুল, হাসপাতাল ও বেসামরিক মানুষের বাড়ি-ঘরসহ ইসরায়েলের এই বিমান হামলা থেকে বাদ যাচ্ছে না গাজার কোনও অবকাঠামো। আর তাই ইসরায়েলি এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে দানা বাঁধছে ক্ষোভ।

এই পরিস্থিতিতে গাজার বেসামরিক মানুষের জীবন অবশ্যই রক্ষা করতে হবে বলে রোববার ইসরায়েলকে সতর্ক করে দিয়েছে বাইডেন প্রশাসন। হোয়াইট হাউস বলছে, রোববার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে ফোনে কথা বলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

ফোনকলে মার্কিন ডেমোক্র্যাটিক এই প্রেসিডেন্ট বলেন, যদিও ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে, তবে আত্মরক্ষার সেই হামলা অবশ্যই ‘আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে করতে হবে যেখানে বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।’

এর আগে বাইডেনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে বলেন, ‘হামাস এবং বেসামরিক নাগরিকদের আলাদা করার জন্য নিজেদের হাতে থাকা সম্ভাব্য সব উপায় গ্রহণ করা উচিত ইসরায়েলের।’

এদিকে হোয়াইট হাউসের একটি বিবতিতে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট বাইডেন রোববার মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির সাথেও কথা বলেছেন। ফোনালাপে দুই নেতা ‘আজ থেকেই গাজায় মানবিক সহায়তা পাঠানোর গতি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হন।’

এএফপি বলছে, বাইডেন এমন এক সময়ে মানবিক সহায়তা পাঠানোর গতি বাড়ানোর বিষয়ে কথা বললেন যখন অন্যান্য বিশ্ব নেতারাও গাজায় সাহায্যের জন্য জরুরিভাবে আহ্বান জানিয়ে আসছেন।

ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক এবং ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ‘জরুরিভিত্তিতে মানবিক সহায়তা পাওয়ার গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছেন’। এছাড়া জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসও বলেছেন, গাজার পরিস্থিতি ‘আরও মরিয়া হয়ে উঠছে।’

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ও কার্যালয় ডাউনিং স্ট্রিটের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ঋষি সুনাক ও ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ টেলিফোনে কথা বলেছেন এবং ‘গাজার বাসিন্দাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য, জ্বালানি, পানি এবং ওষুধ সরবরাহ এবং ভূখণ্ডটিতে আটকে থাকা বিদেশি নাগরিকদের বের করে আনার প্রচেষ্টায় একসাথে কাজ করতে সম্মত হয়েছেন’।

এদিকে সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া এক পোস্টে গাজায় মানবিক যুদ্ধবিরতির আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। তিনি বলেছেন, ‘ফ্রান্স থেকে ১৭ টন মানবিক পণ্য সরবরাহ মিশরে পৌঁছেছে। মিশর এবং রেড ক্রিসেন্টের পাশাপাশি আমরাও আকাশ ও সমুদ্রপথে আমাদের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি...।’

এর আগে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘চলমান সংঘাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থিত প্রয়োজনীয় মানবিক বিরতির পরিবর্তে, ইসরায়েল গাজায় তার সামরিক অভিযান আরও জোরদার করেছে। এতে তিনি দুঃখ পেয়েছেন।’

নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু সফরে গুতেরেস আরও বলেছেন, ‘বিশ্ব একটি মানবিক বিপর্যয় প্রত্যক্ষ করছে। আমি দায়িত্বশীল সকলকে খাদের কিনারা থেকে সরে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।’

টিএম