অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় হামাসের সুড়ঙ্গ নেটওয়ার্কে ঢুকে হামলা শুরু করেছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বিশ্বনেতাদের যুদ্ধবিরতির আহ্বান প্রত্যাখ্যানের পর ইসরায়েলি সৈন্যরা এ পদক্ষেপ নিল। তারা সুড়ঙ্গে ঢুকে হামাস যোদ্ধাদের সঙ্গে লড়াই করছে। 

মঙ্গলবার ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এই তথ্য জানিয়েছে।

তিন সপ্তাহ আগে হামাসের যোদ্ধারা ইসরায়েলে ঢুকে যে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল, তার প্রতিশোধে গোষ্ঠীটিকে গাজা উপত্যকা থেকে নির্মূলের লক্ষ্যে যুদ্ধ চালিয়ে আসছে ইসরায়েল। গাজায় ইসরায়েলের সম্প্রসারিত স্থল হামলার অন্যতম লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হয়েছে হামাসের তৈরি বিশাল ও বিস্তৃত সুড়ঙ্গ নেটওয়ার্ককে।

গত ৭ অক্টোবর গাজার ক্ষমতাসীনগোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলের একটি সংগীত উৎসবে ঢুকে দুই শতাধিক মানুষকে হত্যা করে। একই সময়ে হামাসের হাজার হাজার যোদ্ধা ইসরায়েলের বিভিন্ন এলাকায় ঢুকে হামলা চালায়। এই হামলার প্রতিশোধে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী গাজা উপত্যকাজুড়ে নির্বিচারে বোমা হামলা চালিয়ে আসছে। ইসরায়েলের বোমা হামলায় এখন পর্যন্ত ৮ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনির প্রাণহানি ঘটেছে। আর হামাসের হামলায় ইসরায়েলি নিহত হয়েছেন এক হাজার ৪০০ জনের বেশি।

এক বিবৃতিতে আইডিএফ বলেছে, গতকাল আইডিএফের যৌথ বাহিনীর সদস্যরা গাজায় হামাসের প্রায় ৩০০টি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে। এই হামলায় ট্যাংক-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র, রকেট ও অন্যান্য গোলাবারুদ ব্যবহার করা হয়েছে। গাজার সুড়ঙ্গে হামাসের সামরিক স্থাপনাগুলোকেও লক্ষ্যবস্তু করার দাবি করেছে ইসরায়েল।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, হামাসের যোদ্ধারাও ট্যাংক-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র ও বন্দুক থেকে গুলি ছুড়েছে। আইডিএফ বলেছে, ‘সৈন্যরা হামাসের যোদ্ধাদের হত্যা করেছে এবং বিমান বাহিনীকে নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তু ও অবকাঠামোতে রিয়েল-টাইম হামলার নির্দেশ দিয়েছে।’

প্রত্যক্ষদর্শীরা গাজায় হামাসের সুড়ঙ্গজুড়ে তুমুল সংঘর্ষ চলছে বলে জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, ইসরায়েলি সৈন্যরা সোমবার গাজার উত্তর থেকে দক্ষিণমুখী একমাত্র প্রধান সড়কটিকে লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছে। একই সময়ে দুই দিক থেকে গাজার প্রধান শহরে হামলা চালিয়েছে। ইসরায়েল বলছে, তাদের সৈন্যরা হামাসের জিম্মিদশা থেকে ইসরায়েলি এক সৈন্যকে মুক্ত করেছে।

গাজার ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী হামাস ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে মোট ২৩৯ জনকে জিম্মি করেছে। তবে এই জিম্মিদের মধ্যে চারজনকে ইতিমধ্যে ছেড়ে দিয়েছে হামাস। জিম্মিদের অনেককে সুড়ঙ্গের ভেতরে হামাস আটকে রেখেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

হামাসের সশস্ত্র শাখা আল-কাশেম ব্রিগেডস বলছে, মঙ্গলবার সকালের দিকে দক্ষিণ গাজায় আক্রমণ চালানো ইসরায়েলি সৈন্যদের সঙ্গে হামাস যোদ্ধাদের তুমুল সংঘর্ষ হয়েছে। স্থানীয়ভাবে তৈরি হামাসের ট্যাংক-বিধ্বংসী আল ইয়াসিন-১০৫ ক্ষেপণাস্ত্র, রকেট এবং বন্দুকের গুলি ছুড়ে ইসরায়েলি সৈন্যদের সাথে লড়াইয়ের দাবি করেছে হামাস।

এ সময় হামাসের যোদ্ধারা দক্ষিণ গাজায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর অন্তত চারটি যানকে লক্ষ্যবস্তু করেছে বলে জানিয়েছে আল-কাশেম ব্রিগেডস। হামাসের এই সশস্ত্র শাখা বলছে, গাজার উত্তর-পশ্চিমে ইসরায়েলি দুটি ট্যাংক ও বুলডোজারে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে ধ্বংস করা হয়েছে।

তবে গাজায় হামাসের বিশাল সুড়ঙ্গের ভেতরে ইসরায়েলি বাহিনীর সাথে হামাস যোদ্ধাদের সংঘর্ষের তথ্য রয়টার্স নিশ্চিত হতে পারেনি বলে জানিয়েছে। এ ছাড়া ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীও এই সংঘর্ষের বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোনও মন্তব্য জানায়নি। 

মঙ্গলবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলায় গত ৭ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ৮ হাজার ৩০৬ ফিলিস্তিনির প্রাণহানি ঘটেছে। তাদের মধ্যে শিশুই রয়েছে ৩ হাজার ৪৫৭ জন। জাতিসংঘের কর্মকর্তারা বলেছেন, ইসরায়েলের হামলায় গাজার ২৩ লাখ বাসিন্দার মধ্যে ১৪ লাখই বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।

সূত্র: রয়টার্স।

এসএস