হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধ নিয়ে যা বললেন হিজবুল্লাহ প্রধান
লেবাননভিত্তিক শক্তিশালী সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ প্রধান হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধ নিয়ে প্রথমবারের মতো কথা বলেছেন। শুক্রবার (৩ নভেম্বর) টিভিতে দেওয়া ভাষণে তিনি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধের ঘোষণা দেননি। তবে হুমকি দিয়েছেন, যদি ইসরায়েল গাজায় আগ্রাসন না থামায় তাহলে এ যুদ্ধে জড়িত হবে হিজবুল্লাহ। এছাড়া গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের চালানো হামলার প্রশংসা করেন তিনি।
ইসরায়েলি বাহিনীর সঙ্গে লড়াই করে প্রাণ হারানো হিজবুল্লাহর যোদ্ধাদের স্মরণ করে তিনি তার বক্তব্য শুরু করেন।
বিজ্ঞাপন
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকা এবং পশ্চিমতীরে যারা নিহত হয়েছেন তাদেরও স্মরণ করেন তিনি। এছাড়া গত ৭ অক্টোবর হামাসের যেসব যোদ্ধা ইসরায়েল ঢুকে হামলা চালান তাদের অভিনন্দন জানান তিনি।
এরপর ইসরায়েলের বিরুদ্ধে শুরু হওয়া যুদ্ধে ইরাকের ও ইয়েমেনের যেসব সশস্ত্র গোষ্ঠী যোগ দিয়েছে তাদের ধন্যবাদ জানান নাসরুল্লাহ।
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন
তিনি বলেন, হামাস গত ৭ অক্টোবর যা করেছে; ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যকে কাঁপিয়ে দিতে এমন কিছু একটার দরকার ছিল।
কারণ গত কয়েক বছরে ফিলিস্তিনদের অবস্থা খুব খারাপ ছিল। বিশেষ করে ইসরায়েলের বর্তমান চরমপন্থি, বোকা এবং বর্বর সরকারের কারণে ফিলিস্তিনিরা কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল।
তিনি আরও বলেছেন, হামাসের চালানো আল-আকসা ফ্লাড অপারেশনের প্রভাবে ইসরায়েলে ভূমিকম্প হয়েছে। যার প্রভাব বর্তমান এবং ভবিষ্যতেও দীর্ঘদিন থাকবে।
এছাড়া ইরান যে— কোনো সশস্ত্র গোষ্ঠীকে কোনো ধরনের নির্দেশনা দেয় না— ওইদিন হামাসের হামলার মাধ্যমে এটি প্রমাণিত হয়েছে। কারণ হামাসের নেতৃবৃন্দই এই হামলার সিদ্ধান্ত নেয়।
হাসান নাসরুল্লাহ তার বক্তব্যে আরও বলেন, এখনো কিছুই শুরু হয়নি তার আগেই বিশ্বের অনেক দেশের প্রেসিডেন্ট, মন্ত্রী, সেনা কর্মকর্তা অবৈধ ইসরায়েলে এসেছেন এবং আর্থিক সহায়তা পাঠাচ্ছেন।
তিনি আরও বলেছেন, হামাসের এই হামলার মাধ্যমে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধের নতুন ধাপ শুরু হয়েছে। হামাসের হামলাকে তিনি সঠিক, বুদ্ধিমান এবং সাহসী হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেছেন, ঠিক সময়ে হামাস এই হামলা চালিয়েছে।
শক্তিশালী সশস্ত্র গোষ্ঠীর প্রধান নাসরুল্লাহ বলেছেন, ইসরায়েল এখন এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে; যেগুলো তারা কখনো অর্জন করতে পারবে না। আর এটি হচ্ছে যুদ্ধের সবচেয়ে ভুল সিদ্ধান্ত।
আরও পড়ুন
তিনি জানিয়েছেন, হামাস যেসব ইসরায়েলিকে ধরে নিয়ে এসেছে তাদের আলোচনার মাধ্যমে ইসরায়েল ফিরিয়ে নিতে পারবে।
তিনি বলেছেন, বর্তমানে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনী যে বর্বরতা চালাচ্ছে এর মাধ্যমে তাদের ‘নির্বুদ্ধিতা’ ও ‘অক্ষমতা’ প্রকাশ পাচ্ছে। তারা হামলা চালিয়ে শুধুমাত্র নারী ও শিশুদের হত্যা করছে। কিন্তু গত এক মাসে গাজায় একটি সামরিক লক্ষ্যও অর্জন করতে পারেনি ইসরায়েল।
তিনি এই যুদ্ধের জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করেছেন এবং বলেছেন যুদ্ধের জন্য ইসরায়েলকে ব্যবহার করছে মার্কিনিরা।
হাসান নাসরুল্লাহ এ যুদ্ধকে ‘ভিন্ন’ যুদ্ধ হিসেবে অভিহিত করে বলেন, এর আগে কখনো এ অঞ্চলে এ ধরনের যুদ্ধ দেখা যায়নি।
এরপর তিনি জানান, এ যুদ্ধে তাদের লক্ষ্য হলো গাজায় হামলা বন্ধ করা এবং হামাসকে বিজয়ী করা।
তিনি গাজার যুদ্ধ বন্ধে আরব বিশ্বের নেতাদের একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান।
আরও পড়ুন
দীর্ঘ বক্তব্যের এ পর্যায়েও হিজবুল্লাহর করণীয় বা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হিজবুল্লাহর যোদ্ধারা কি করবেন এ ব্যাপারে কোনো ধারণা বা ইঙ্গিত দেননি হাসান নাসরুল্লাহ।
তবে তিনি এরপর জানান হিজবুল্লাহ গত ৮ অক্টোবর থেকে এ যুদ্ধে জড়িত হয় এবং ইসরায়েলের বিরুদ্ধে তারা কাজ করে যাচ্ছেন। এ কারণে গাজায় যাওয়ার বদলে লেবানন সীমান্তে ইসরায়েলি সেনাদের অবস্থান করতে হচ্ছে।
তিনি আরও জানিয়েছেন, হিজবুল্লাহ এ যুদ্ধে আরও জড়িত হবে। এ সময় নিজেদের ৫৭ যোদ্ধা নিহত হওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেন নাসরুল্লাহ।
তিনি হুমকি দেন, হিজবুল্লাহর যুদ্ধে আরও জড়িত হওয়ার বিষয়টি ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডের উপর নির্ভর করবে।
নাসরুল্লাহ জানান, তারা সব ধরনের পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত আছেন এবং হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধ শুরুর পর ভূমধ্যসাগরে যুক্তরাষ্ট্র যে দুটি বিমানবাহী রণতরী পাঠিয়েছে এতে হিজবুল্লাহ ভয় পায় না।
তিনি জানান, যারা এই যুদ্ধ একটি আঞ্চলিক যুদ্ধে পরিণত হওয়া থেকে আটকাতে চান— তারা যেন গাজায় ইসরায়েলের হামলা বন্ধে কাজ করেন।
সূত্র: আল জাজিরা
এমটিআই