ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু

অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় হামাসের হাতে বন্দী জিম্মিদের ফেরানোর বিষয়ে বেশ অগ্রগতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। মঙ্গলবার ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) সদস্যদের সাথে আলোচনার সময় এই তথ্য জানিয়েছেন তিনি।

এর আগে, কাতারের মধ্যস্থতায় গাজা উপত্যকায় হামাসের সাথে ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতির আলোচনা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে বলে হামাস জানিয়েছে। কাতারের সরকারি একজন কর্মকর্তা বলেছেন, গাজা উপত্যকায় হামাসের সঙ্গে ইসরায়েল একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তির কাছাকাছি রয়েছে। চুক্তির এই বিষয়টি একেবারে ‘‘চূড়ান্ত পর্যায়ে’’ পৌঁছেছে।

কাতার-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা বলেছে, আজ (মঙ্গলবার) রাতেই অথবা আগামীকাল সকালের মধ্যেই হামাস-ইসরায়েল চুক্তির ঘোষণা আসতে পারে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।

নেতানিয়াহু বলেছেন, গাজা উপত্যকায় হামাসের হাতে জিম্মিদের মুক্তির বিষয়ে অগ্রগতি হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের আলোচনায় অগ্রগতি হচ্ছে। আমি অতিরঞ্জিত কিছু বলবো না। তবে আমি আশা করছি, খুব শিগগিরই ভালো খবর আসবে।’’

হামাসের সাথে লড়াইরত সৈন্যদের সাথে সাক্ষাতের সময় এই মন্তব্য করেন তিনি। তবে এই বিষয়ে বিস্তারিত আর কোনো তথ্য জানাননি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী। নেতানিয়াহুর কার্যালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘আমাদের জিম্মিদের মুক্তির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টায় যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার সদস্য, সন্ধ্যা ৭টায় মন্ত্রিসভার নিরাপত্তাবিষয়ক সদস্য এবং রাত ৮টায় পূর্ণ মন্ত্রিসভার সদস্যদের নিয়ে বৈঠকে বসবেন।’’

• কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি

সাময়িক যুদ্ধবিরতির বিনিময়ে ২৪০ জিম্মিকে মুক্ত করার লক্ষ্যে ইসরায়েলের সাথে হামাসের চুক্তির আলোচনায় মধ্যস্থতা করছে কাতার। মঙ্গলবার কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি বলেছেন, ‘‘আমরা একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর সবচেয়ে কাছাকাছি অবস্থানে আছি।’’ গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের সাথে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত মাত্র চার জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে গাজার ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী হামাস।

চুক্তির বিষয়ে আল-আনসারি বলেন, ‘‘আমরা অত্যন্ত আশাবাদী, অত্যন্ত আশাবাদী। আমরা একটি মানবিক যুদ্ধবিরতি সফল করার কাজে মধ্যস্থতার জন্য অত্যন্ত আগ্রহী।’’ এর আগে, হামাসের প্রধান ইসমাইল হানিয়াহ বলেন, তারা ইসরায়েলের সাথে ‘‘একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তির দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন।’’

কাতার-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার প্রতিনিধি হাশেম আহেলবারা বলেছেন, কাতার সরকারের কাছে চুক্তির বিষয়ে নিজেদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছে হামাস। তাদের এই তৎপরতার পর যুদ্ধবিরতি চুক্তির খুব কাছাকাছি পৌঁছেছে হামাস-ইসরায়েল।

তিনি বলেন, আমরা ধারণা করছি চুক্তিটি চূড়ান্ত করার জন্য দোহা, তেল আবিব, কায়রো, রাফাহ এবং গাজায় সংশ্লিষ্ট দলগুলো কাজ করছে। অনেকের ধারণা আজ (মঙ্গলবার) রাতে অথবা আগামীকাল ভোরে চুক্তিটি ঘোষণা করা হতে পারে। চুক্তির সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা হামাসের পক্ষ থেকে প্রথম দফায় যারা মুক্তি পাবেন, তাদের কীভাবে ইসরায়েলে পৌঁছানো হবে, সেই প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করছেন।

হামাস বলেছে, যেসব জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হবে, তার একটি তালিকা প্রকাশ করবে তারা। তবে বিনিময়ে ইসরায়েলের কারাগারে আটক ফিলিস্তিনিদের একই সময়ে মুক্তি চায় হামাস। আলজাজিরার প্রতিনিধি বলেছেন, নির্দিষ্ট এই বিষয়ে উভয়পক্ষ কীভাবে কাজ করবে, তা আমরা এখনও জানতে পারি নাই।

হামাস জোর দিয়ে বলেছে, তারা বন্দীদের মুক্তি দেওয়া শুরু করবে নির্দিষ্ট এক সময়সীমার মধ্যে; যা নিরাপত্তার কারণে পাঁচ দিনের বেশি সময় ধরে চলবে। কারণ সব বন্দীকে একসঙ্গে মুক্তি দেওয়ার সামর্থ্য তাদের নেই। গাজায় নিয়োজিত আন্তর্জাতিক সংস্থা রেড ক্রস জিম্মিদের গাজা থেকে ইসরায়েলে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতে প্রস্তুত আছে বলে জানিয়েছে।

গত ৭ অক্টোবর সীমান্ত পেরিয়ে ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গাজার ক্ষমতাসীন সশস্ত্রগোষ্ঠী হামাস। ওই দিন স্থল, আকাশ ও সমুদ্রপথে ইসরায়েলে ঢুকে শত শত ইসরায়েলিকে হত্যা এবং ২৪০ জনের বেশি ইসরায়েলি ও বিদেশি নাগরিককে ধরে নিয়ে গাজায় জিম্মি করে হামাস। এই হামলার পর গাজায় তীব্র আক্রমণ শুরু করে ইসরায়েল। ফিলিস্তিনি এই উপত্যকায় ইসরায়েলের হামলায় এখন পর্যন্ত ১৩ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে; বাস্তুচ্যুত হয়েছেন আরও লাখ লাখ মানুষ।

এসএস