করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন, পরে সুস্থও হয়ে উঠেছেন। কিন্তু এরপরও যেন নিস্তার নেই। করোনায় আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়ে ওঠাদের শরীরে অ্যান্টিবডি জন্মানোর কথা বলা হলেও অনেকেই একই ভাইরাসে একাধিকবার সংক্রমিত হচ্ছেন।

গবেষণা বলছে, করোনায় একবার আক্রান্ত হওয়ার প্রায় সাড়ে তিনমাস পর কোনো ব্যক্তি ফের ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হতে পারেন। ভারতের ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর মেডিকেল রিসার্চ (আইসিএমআর) তাদের গবেষণায় এ তথ্য জানিয়েছে।

গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, সাড়ে চার থেকে পাঁচ শতাংশ নতুন করোনা সংক্রমণই ‘রিইনফেকশন’ বা পুনঃসংক্রমণ। অর্থাৎ ভাইরাস সেসব রোগীদের পরপর দু’বার সংক্রমিত করেছে।

পুনঃসংক্রমণ বা রিইনফেকশনের সংজ্ঞা জানতে ১৩০০ ব্যক্তির ওপর একটি গবেষণা চালায় আইসিএমআর। সেই গবেষণায় দেখা গেছে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রতি ১০০ জন নতুন রোগীর মধ্যে পাঁচজন আগেও একবার ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে ইতোমধ্যেই সুস্থ হওয়া রোগীদের মধ্যে অনেকেই ভেবেছিলেন, শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। আর করোনায় আক্রান্ত হতে হবে না। কিন্তু সে ধারণাকে কার্যত উল্টে দিচ্ছে এই তথ্য।

ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর মেডিকেল রিসার্চের এপিডেমিওলজি অ্যান্ড কমিউনিকেবল ডিজিসের প্রধান ডা. সমীরণ পাণ্ডা বলছেন, শরীর কোনো অংক মেনে চলে না। একবার করোনা থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার পর অনেকে ভাবছেন টানা একবছর আমার আর করোনা হবে না। এমনটা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত ধারণা। ব্যক্তিভেদে শরীরে অ্যান্টিবডির পরিমাণ ভিন্ন ভিন্ন।

তাহলে কী একবার করোনা আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হওয়ার পর ফের সংক্রমণ হতে পারে? গবেষণায় পাওয়া তথ্যগুলো বিশ্লেষণ করে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এই সময়সীমা তিনমাস ১০ দিনের একটু বেশি। অর্থাৎ এরপর আবারও করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।

ডা. সমীরণ পাণ্ডা বলেন, একবার করোনা আক্রান্ত হয়ে সেরে ওঠার পর ১০২ দিন পর্যন্ত রোগী নিরাপদ। ১০২ দিন পর ফের তিনি করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন। তবে পুনঃসংক্রমণ কি না তা নিশ্চিত হতে কিছু শর্ত রয়েছে চিকিৎসকদের।

তার কথায়, পজিটিভ-নেগেটিভ-পজিটিভ এই পর্যায়ক্রমে কেউ যদি আক্রান্ত হন তবে সেটা পুনঃসংক্রমণ। অর্থাৎ প্রথমবার একজন পজিটিভ হলেন। তারপর একবার তাকে নেগেটিভ হতে হবে। যদি কেউ টানা পজিটিভ থাকেন তাহলে সেটা পুনঃসংক্রমণ নয়। ভাইরাল লোড বেশি থাকলে অনেক সময় দীর্ঘদিন কোভিড পজিটিভ থাকার প্রবণতা দেখা যায়।

আর তাই করোনা থেকে সুস্থ হওয়ার পরও প্রয়োজনীয় বিধিনিষেধ পালনে তাচ্ছিল্য না করার পাশাপাশি নিয়মিত মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার মতো নিয়মগুলো পালন করার অনুরোধ করেছেন ডা. পাণ্ডা।

তার ভাষায়, পুনঃসংক্রমণের সংখ্যাটা ৫ শতাংশের থেকেও অনেকটা বেশি হতে পারে। কারণ গবেষণায় গত বছরের ২২ জানুয়ারি থেকে ৭ অক্টোবর পর্যন্ত তথ্য নেওয়া হয়েছে। চলতি বছরের এপ্রিলে সংক্রমণ যেভাবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে তাতে পুনঃসংক্রমণের সংখ্যাটা আরও বেড়ে যাওয়াই স্বাভাবিক।

করোনা মহামারির থাবায় বিশ্বজুড়ে সংক্রমণ ও প্রাণহানি অব্যাহত রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সারা বিশ্বে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন সাড়ে ৯ হাজারের বেশি মানুষ। একই সময়ে ভাইরাসটিতে নতুন করে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ছাড়িয়েছে সাত লাখ ২৮ হাজার।

মঙ্গলবার (২০ এপ্রিল) সকালে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত, মৃত্যু ও সুস্থতার হিসাব রাখা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারস থেকে পাওয়া সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা বিশ্বে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৯ হাজার ৫৪১ জন। এতে বিশ্বজুড়ে মৃতের সংখ্যা পৌঁছেছে ৩০ লাখ ৪২ হাজার ৮৩৮ জনে।

এছাড়া, একই সময়ের মধ্যে ভাইরাসটিতে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৭ লাখ ২৮ হাজার ৮৯৭ জন। এতে ভাইরাসে আক্রান্ত মোট রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ কোটি ২৬ লাখ ৮৭ হাজার ৯৪৩ জনে।

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। এরপর গত বছরের ১১ মার্চ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) করোনাকে ‘বৈশ্বিক মহামারি’ হিসেবে ঘোষণা করে।

টিএম